আড়াই শতাধিক মৃত্যু, শনাক্ত প্রায় ১৫ হাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গতকাল একদিনে সর্বোচ্চসংখ্যক মৃত্যু হয়েছে। গতকাল প্রথমবারের মতো একদিনে আড়াই শতাধিক করোনা রোগীর মৃত্যু হয়। নতুন করে ১৪ হাজার ৯২৫ জনের শরীরে ভাইরাসটির সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। দেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল বিকালে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা গত ২৭ জুন থেকে প্রতিদিন ১০০-এর ওপরে রয়েছে। এরপর জুলাই প্রথমবারের মতো ২০০ ছাড়িয়ে যায়। গতকাল সর্বশেষ দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা ২৫৮ দাঁড়িয়েছে। আগের দিন সোমবার সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ১৯২ জন নতুন রোগী শনাক্তের পাশাপাশি রেকর্ড ২৪৭ জনের মৃত্যু হয়।

তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৩৯টি পরীক্ষাগারে ৫২ হাজার ৪৭৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পর্যন্ত সরকারি বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৭৫ লাখ ৫৮ হাজার ৭১১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। নতুন আক্রান্তদের নিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৯৪ হাজার ৭৫২। আক্রান্তদের মধ্যে মোট ১৯ হাজার ৭৭৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। সরকারি হিসাবে সর্বশেষ আরো ১২ হাজার ৪৩৯ জন সুস্থ হয়েছে। নিয়ে মোট সুস্থতার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ২২ হাজার ৪১৪। সর্বশেষ নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ২৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ। মোট শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৮১ শতাংশ। প্রতি ১০০ জন শনাক্তের বিপরীতে সুস্থতার হার ৮৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ। আর মোট মৃত্যুহার দশমিক ৬৬ শতাংশ।

সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে চলতি মাসের প্রথম দুই সপ্তাহ দেশে সর্বাত্মক বিধিনিষেধ পালন করা হয়। তবে ঈদুল আজহা উপলক্ষে ১৫ জুলাই থেকে বিধিনিষেধ শিথিল করে সরকার। যদিও ঈদের ছুটিতে লাখ লাখ মানুষের শহর থেকে গ্রামে যাওয়া ফিরে আসায় সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে সে সময় সতর্ক করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। করোনা নিয়ন্ত্রণে গঠিত জাতীয় কারিগরি কমিটি ঈদকে ঘিরে বিধিনিষেধ শিথিলের সরকারি সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগও জানিয়েছিল। কিন্তু ঈদের আগে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা, দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে সতর্কবার্তা উদ্বেগ আমলে নেয়া হয়নি। তবে পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে আবারো কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়, যা এখনো চলমান। কিন্তু কঠোর বিধিনিষেধেও সংক্রমণ মৃত্যু কমিয়ে আনা যাচ্ছে না।

বিভাগওয়ারি তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা বিভাগেই হাজার ১৮৮ জনের মধ্যে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে, যা দিনের মোট আক্রান্তের ৪১ শতাংশের বেশি। বাকিদের মধ্যে ময়মনসিংহে ৫৬৭ জন, চট্টগ্রামে হাজার ৪৮৭, রাজশাহীতে ৮৮১, রংপুরে ৮৩৭, খুলনায় হাজার ৪৩৫, বরিশালে ৮২২ সিলেটে ৭০৮ জনের শরীরে ভাইরাসটির উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে।

গতকাল মারা যাওয়া ২৫৮ জনের মধ্যে ৮৪ জনই ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা। বাকিদের মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগে ৬১ জন, খুলনায় ৫০, রাজশাহীতে ২১, বরিশালে ১৩, সিলেটে সাত, রংপুরে ১১ ময়মনসিংহ বিভাগে ১১ জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

বয়সভিত্তিক হিসাবে তাদের মধ্যে ১৪৭ জন ষাটোর্ধ্ব। বাকিদের মধ্যে ৫৪ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ৩১ জনের ৪১ থেকে ৫০, ১৬ জনের ৩১ থেকে ৪০, আটজনের ২১ থেকে ৩০ দুজনের ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। মৃতদের মধ্যে ১৩৮ জন পুরুষ ১২০ জন নারী। তাদের মধ্যে ২০২ জন সরকারি ৩৯ জন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। ১৫ জন বাসায় চিকিৎসাধীন ছিল। বাকি দুজনকে হাসপাতালে মৃত অবস্থায় আনা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন