বিমানের আশ্বাসে বৈমানিকদের ফ্লাইট বাতিলের কর্মসূচি স্থগিত

নিজস্ব প্রতিবেদক

নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর থেকেই প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। গত বছর একে একে ফ্লাইট বন্ধ হওয়ায় আয় কমায় কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন-ভাতা কমিয়ে ফেলে কর্তৃপক্ষ। তবে সম্প্রতি অধিকাংশ কর্মীর বেতন পূর্বের কাঠামোয় ফিরিয়ে আনলেও বৈমানিকদের ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। এতে অসন্তোষ প্রকাশ করে ৩০ জুলাইয়ের পর থেকে চুক্তির বাইরে কাজ না করার ঘোষণা দেন বিমানের বৈমানিকরা। তবে কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে শেষ মুহূর্তে ফ্লাইট বাতিলের কর্মসূচি থেকে সরে এলেন বৈমানিকরা।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সূত্রে জানা গেছে, বৈমানিকদের ফ্লাইট বাতিলের কর্মসূচি ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে গত এক সপ্তাহে কমপক্ষে ১০ কোটি টাকা লোকসানে পড়ে বিমান। কারণ বর্তমান পরিস্থিতিতে চুক্তির বাইরে বৈমানিকরা কাজ না করলে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি রুটে ফ্লাইট বন্ধ হওয়ার শঙ্কা ছিল। যার কারণে অনেক যাত্রীই সেই সব রুটের অগ্রিম টিকিট না কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে বিমান কর্তৃপক্ষ দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলে চুক্তির বাইরে কাজ না করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন পাইলটরা।

প্রসঙ্গত, লোকসানের প্রভাব কাটাতে গত বছর থেকেই কর্মীদের বেতন কাটা, ওভারটাইম সুবিধা বাতিল করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। তবে সম্প্রতি বিভিন্ন পদের কর্মীদের বেতন কাটা বন্ধের ঘোষণা দিলেও বৈমানিকদের বেতন কাটা চলমান রাখার ঘোষণা দেয় বিমান। কারণে ক্ষুব্ধ হন বিমানের পাইলটরা।

জানা গেছে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিমান প্রশাসন বিভাগ ১৩ জুলাই এক আদেশে জানায়, ২৮ জুন অনুষ্ঠিত বিমান পরিচালনা পর্ষদের ২৫৬তম সভায় সিদ্ধান্ত হয় বেতনক্রম- তার উপরে কর্মকর্তাদের বেতন কর্তনের হার হ্রাস করা হয়েছে। সে আদেশে বলা হয়, বেতনক্রম থেকে পর্যন্ত কর্মকর্তাদের জুলাই থেকে আর বেতন টাকা হবে না, যা আগে গ্রস স্যালারি থেকে ১০ শতাংশ কাটা হতো। বেতনক্রম থেকে তার উপরের কর্মকর্তাদের জুলাই থেকে আর বেতন কাটা হবে না, যা আগে গ্রস স্যালারি থেকে ১৫ শতাংশ কাটা হতো। তবে পাইলটদের বেতন কাটা বন্ধ করা হয়নি। আদেশে বলা হয়, ককপিট ক্রু যাদের চাকরির বয়স পাঁচ বছর পর্যন্ত, শুধু তাদের জুলাই থেকে আর বেতন কাটা হবে না, যা আগে গ্রস স্যালারি থেকে ১৫ শতাংশ কাটা হতো। পাঁচ থেকে ১০ বছর যাদের চাকরির বয়স, তাদের জুলাই থেকে শতাংশ কাটা হবে, যা আগে গ্রস স্যালারি থেকে ২০ শতাংশ কাটা হতো। ১০ বছরের বেশি যে পাইলটের চাকরির বয়স তাদের জুলাই থেকে ২৫ শতাংশ বেতন কাটা হবে, যা আগে গ্রস স্যালারি থেকে ৪০ শতাংশ কাটা হতো।

আদেশের পর বিমানের পাইলটদের সংগঠন বাংলাদেশ এয়ারলাইনস পাইলট অ্যাসোসিয়েশন (বাপা) কয়েক দফা বৈঠক করে। সর্বশেষ ১৪ জুলাই বৈঠক করে আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেয় তারা। বাপার নির্বাহী কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়ে বিমান কর্তৃপক্ষের প্রশাসনিক আদেশের প্রতিবাদে চিঠি দেয়া হয়। ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে বিমানের অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীর মতো বেতন সমন্বয়ের অনুরোধ করা হয়। বলা হয়, বেতন সমন্বয় না করলে পাইলটরা শুধু বিমান বাপার মধ্যে সম্পাদিত দ্বিপক্ষীয় চুক্তির ফ্লাইট পরিচালনা করবে।

প্রসঙ্গে বাপা সভাপতি ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান বলেন, সমস্যাটি নিয়ে বিমান পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। বেতন সমন্বয়ের বিষয়টি দ্রুতই সমাধানের আশ্বাস পেয়েছি। বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকও আশ্বাস দিয়েছেন আগামী বোর্ড মিটিংয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন