পর্যালোচনা

ব্যাংকে ‘জগদীশ ভগবতী’র নীতির অনুসরণ ও ভঙ্গুর সামাজিক নিরাপত্তা

ড. আর এম দেবনাথ

. জগদীশ ভগবতী বিশ্ববিখ্যাত অর্থনীতিবিদ। তিনি বর্তমানে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি আইনের অধ্যাপক। ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক। তার সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি উদারীকরণ অবাধ বাণিজ্যের বড় একজন প্রবক্তা। তিনি অবাধ বাণিজ্যের পিতা বলেও পরিচিত। আজকের যে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) এবং এর যে জটিল কার্যক্রম, নিয়ম-বিধিমালা, তা প্রণয়নে তার অবদান অনস্বীকার্য। ১৯৩৪ সালে মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণকারী বিশ্বখ্যাত অর্থনীতিবিদ ভারত সরকারের সম্মানজনক পদ্মবিভূষণ দ্বারা সম্মানিত হন। বিশ্ববিখ্যাত অর্থনীতিবিদ ১৯৯১-৯২ সালের দিকে . মনমোহন সিংকে একটা পরামর্শ দিয়েছিলেন। . সিং তখন ভারতের অর্থমন্ত্রী। এর আগে তিনি ছিলেন ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার গভর্নর। পরে ভারতের যোজনা কমিশনের প্রধান ছিলেন। ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী। মনমোহন সিং যখন অর্থমন্ত্রী হন তখন ভারতের অর্থনীতি নাজুক অবস্থায়। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ মাত্রাতিরিক্তভাবে হ্রাস পায়। আন্তর্জাতিক লেনদেনে বিঘ্ন সৃষ্টির অবস্থা। পিভি নরসীমা রাও তখন প্রধানমন্ত্রী। অবস্থায় . মনমোহন সিং . জগদীশ ভগবতীর শরণাপন্ন হন। এস গুরুমূর্তি নামের একজন স্বদেশী অর্থনীতির প্রবক্তার এক বক্তৃতায় শুনলাম . সিং অর্থনীতির উন্নতির জন্য কী করা যায় সে সম্পর্কে . ভগবতীর কাছ থেকে পরামর্শ-সুপারিশ চান। . ভগবতী তার সুপারিশমালায় বলেন, ভারতকে অভ্যন্তরীণ সঞ্চয় (ডমেস্টিক সেভিংস) কমাতে হবে। ভারতের নারীরা অতিরিক্ত পরিমাণে সঞ্চয় করেন, যা উন্নয়নের পথে বাধা। ভারতকে ভোগ (কনজাম্পশন) বাড়াতে হবে। মানুষকে খরচে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তাহলে ভোগ বাড়বে। ভোগ বাড়লে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করবেন, উৎপাদন বাড়বে। প্রবৃদ্ধির হার বাড়বে। এখন ভোগ বাড়ানোর ব্যবস্থা কী? ভোগ বাড়াতে হলে ভারতীয়দের সঞ্চয়ে নিরুৎসাহিত করতে হবে। অতিরিক্ত সঞ্চয় প্রবণতা অর্থনীতির জন্য ভালো নয়। এবার সঞ্চয় কমাতে হলে কী করতে হবে? সঞ্চয় কমাতে হলে ব্যাংকের আমানতসহ সঞ্চয় প্রকল্পে সুদহার হ্রাস করতে হবে। ফলে লোকেরা ব্যাংকমুখী-সঞ্চয়মুখী না হয়ে বাজারে যেতে উদ্বুদ্ধ হবে। অর্থনৈতিক সমস্যা জটিল, কিন্তু জগদীশ ভগবতীর সমাধান সহজ সরল। বলা বাহুল্য, . সিং সুপারিশ গ্রহণ করেননি। কারণ এটা ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে মানানসই নয়।

ঘটনা এখানে উল্লেখ করলাম কেন? উল্লেখ করলাম বণিক বার্তার একটি খবরের শিরোনাম দেখে। জুলাইয়ের ১৩ তারিখে প্রকাশিত বণিক বার্তার প্রধান খবরের শিরোনাম—‘বেসরকারি ব্যাংকে মেয়াদি আমানতের সুদহার ইতিহাসের সর্বনিম্নে খবরটিতে বলা হয়েছে, বিনিয়োগ খরায় দেশের মুদ্রাবাজারে জমা হয়েছে অলস তারল্যের পাহাড়। সুযোগ কাজে লাগিয়ে বেসরকারি ব্যাংকগুলো মেয়াদি আমানতের সুদহার ইতিহাসের সর্বনিম্নে নামিয়ে এনেছে। প্রকাশিত খবরটিতে ১০টি বেসরকারি ব্যাংকের নাম রয়েছে। এগুলো হচ্ছে ব্র্যাক, প্রাইম, ইবিএল, ডাচ্-বাংলা, যমুনা, শাহজালাল, দ্য সিটি, ব্যাংক এশিয়া, ট্রাস্ট মিউচুয়াল ট্রাস্ট। দেখা যাচ্ছে এসব ব্যাংকে ছয় মাস মেয়াদি আমানতের সর্বনিম্ন সুদহার দশমিক শতাংশ থেকে সাড়ে শতাংশ। ব্যাংকভেদে সর্বোচ্চ সুদহার দেখা যাচ্ছে আড়াই থেকে সাড়ে শতাংশ। এখানে অন্যান্য বেসরকারি ব্যাংক সরকারি ব্যাংক সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই। তবে অনুমান করা যায় এমন অবস্থা সেখানেও। সুদহার দ্বারা বোঝা যায় এরা আমানতকারীদের কোনো সুদ দিচ্ছে না। কারণ মূল্যস্ফীতির বর্তমান হারই শতাংশ। শহরে মূল্যস্ফীতির হার একটু বেশি। খাদ্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। অবস্থায় বোঝাই যায় ব্যাংকগুলো আমানতের ওপর কোনো সুদ দিতে রাজি নয়। তার মানে কি, আজ থেকে ২০-২৫ বছর আগে . জগদীশ ভগবতীর যে পরামর্শ . মনমোহন সিং গ্রহণ করেননি, আমাদের দেশের ব্যাংক মালিকরা সেই পরামর্শই কার্যকর করছেন? বলা বাহুল্য, জগদীশ ভগবতীর পরামর্শ বিশ্বব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর পরামর্শ একই।

কিন্তু এটা কথা ছিল না। অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বাজার অর্থনীতির সব নিয়মকানুনের বাইরে গিয়ে সুদহার করেন নয়-ছয় শতাংশ ঋণের ওপর, শতাংশ আমানতের ওপর। এটা সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত সুদহার। তাই নয় কি? সুদহারের বেশি সুদহার হবে না। তাহলে কম কী করে হয়? এটা কি সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আগ্রহ্য করা নয়? নয়-ছয় নীতি কার্যকর করার জন্য সরকারকে বেশ বেগ পেতে হয়। বহু সুযোগ-সুবিধা দিতে হয় রেসরকারি ব্যাংকের মালিকদের। আসলে এরা শুধু ব্যাংকের মালিক নন। এরা শিল্পের মালিক, ব্যবসার মালিক, পোশাক শিল্পের মালিক। সবচেয়ে বড় আমদানি-রফতানিকারকও এরা। তাদের মন জোগাতে সরকার বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালকদের মেয়াদ ছয় থেকে নয় বছরে উন্নীত করে। ব্যাংকের বোর্ডে দুজনের স্থলে চারজনের স্থান করে দেয়া হয়। তফসিলীকরণ, ঋণ শ্রেণীকরণের নীতি শিথিল করা হয়। এত সুবিধা দেয়ার পরও দেখা যাচ্ছে ব্যাংক মালিকরা সরকারের কথা রাখছেন না। তার মানে কি এই যে সরকারের নয়-ছয় নীতি কাজে আসেনি? আওয়ামী লীগেরই পূর্বতন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত কিন্তু আশঙ্কাই করেছিলেন। ২০২০ সালের জানুয়ারির ১৯ তারিখে তিনি একটি সাক্ষাত্কারে বলেছিলেন, সুদের হার বাইরে থেকে চাপিয়ে দিলে তা ভালো কাজ করে না। আব্দুল মুহিত শুধু কথাই বলেননি, তিনি গেল বছরের ফেব্রুয়ারিতে বলেন, ঋণের পুনর্গঠন ভুল। বন্ধ হওয়া দরকার। ঋণ অবলোপন সম্পর্কে তার বক্তব্য ছিল, এখনই (এটা) বন্ধ হওয়া উচিত। এতদিন দেয়া হয়েছে। এখন আর নয়। মুহিত সাহেবের উদ্ধৃতি দিলাম কারণ দেখা যাচ্ছে একই দলীয় সরকারের ব্যাংক নীতি মন্ত্রীভেদে ভিন্ন হয়ে গেছে। সম্পূর্ণ বিপরীত। বাজারের নীতির বাইরে গিয়ে সুদনীতি নির্ধারণ করেও লাভ হয়নি। সেই বাজারই ঠিক করছে এখন সুদনীতি। তবে কথা আছে।

আমানতের ওপর সুদহার কমেছে। কারণ বাজারে আমানত অনেক। ব্যাংকে শুধু ক্যাশ আর ক্যাশ যেহেতু অতিরিক্ত তারল্য, তাই বাজারের নিয়মেই সুদহার হ্রাস করেছে ব্যাংকগুলো। ঠিক আছে, তাহলে তো একই নিয়মে ঋণের ওপর সুদহার হ্রাস পাওয়ার কথা। কীভাবে? আমানত আসছে বেশি, ঋণ কম। ঋণের প্রবৃদ্ধি কম, ঋণের চাহিদা কম। ব্যাংকের মালিকদের কথা, ঋণের চাহিদা কম তাই আমানতের চাহিদাও কম। অথচ আমানত আসছে বেশি। অতএব, আমানতের ওপর সুদহার কমানো হয়েছে। এখন প্রশ্ন ঋণের বাজার যদি মন্দা হয় তাহলে তো চাহিদা-সরবরাহের নিরিখে ঋণের সুদহারও কমাতে হয়। তা কি হয়েছে? না, স্পষ্টতই তা করা হয়নি। অন্তত কোনো কাগজে -সম্পর্কিত খবর দেখা যায়নি। তাহলে কী দাঁড়াল? বাজারনীতিতে আমানতের ওপর সুদহার কমল, ঋণের ওপর সুদহার ঠিক থাকল। এটা তো ব্যবসায়ীদের প্রতি অবিচার। আমানতের ওপর সুদহার হ্রাসের সুবিধা তো ব্যবসায়ীরাও পাবেন। তাহলে  দেশের শিল্পায়ন সম্প্রসারিত হবে। কারণ ব্যবসায়ীদের কস্ট অব ফান্ড কমবে। তাদের প্রতেযোগিতা  ক্ষমতা বাড়বে। অথচ দেখা যাচ্ছে সেটাই হচ্ছে না।   অবস্থাকে তো উভয়ের প্রতি অবিচার বলা যায়। আমানতকারীদের ওপর অবিচার এবং একইভাবে ঋণগ্রহীতাদের ওপর অবিচার। তাহলে দেখা যাচ্ছে সরকার নিয়ন্ত্রিত সুদহারও অচল, বাজার অর্থনীতিও অচল। আবার নয়-ছয় সুদহার করার কারণ ছিল বিনিয়োগ বাড়ানো। সেটাও তো হচ্ছে না। সরকার নিজস্ব বিনিয়োগের ওপরই নির্ভরশীল। এদিকে রফতানি, বিশেষ করে তৈরি পোশাক রফতানির বাজার ভালো। আমদানি ব্যবসাও হচ্ছে। কিছু ব্যবসা শিল্প ভালো মুনাফাই করে যাচ্ছে। সরকারের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারও উঁচুতে। আবার শেয়ারবাজারেও রমরমা ভাব। তাহলে প্রশ্ন, বিনিয়োগ বাড়ছে না কেন? বলা হতে পারে, কভিড-১৯-এর কারণে। কিন্তু কভিড-১৯-এর কারণে তো সবকিছু বন্ধ হয়ে যাইনি। তৈরি পোশাক খাত খুবই ভালো চলেছে। যদি অবস্থায় আমানতকারীদের ঠকাতেই হয় তাহলে আমার একটি প্রস্তাব আছে। আমানতের হার যা হবে ঋণের ওপর সুদহার হবে তার শতাংশ বেশি। শতাংশ হচ্ছে স্প্রেড নীতি অনুসরণ করলে আমানতকারীরা ঠকলেও ব্যবসা-বাণিজ্য উপকৃত হবে, যা সরকার চায়। সরকার বলছেই তারা ব্যবসাবান্ধব সরকার। কিন্তু বাস্তবে তো এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে উল্টো।

বর্তমান অবস্থা যা, তাতে আমানতকারীদের টাকা নানা ধরনের চিট ফান্ড কোম্পানির হাতে চলে যেতে পারে। মান্টি লেভেল মার্কেটিং কোম্পানি জাতীয় প্রতিষ্ঠানের দিকে টাকা যেতে পারে। তাহলে এর পরিণতি ভালো হওয়ার কারণ নেই। জমিজমা, বাড়িঘর ফ্ল্যাটে অর্থ গেলেও তা লাভজনক কাজ হবে না। শেয়ারবাজারে যদি ফান্ড যায়, তাহলে কী হবে তা একমাত্র উপরওয়ালাই জানেন। এর মধ্যে অভিযোগ উঠেছে ব্যাংকের সস্তা ঋণের টাকা শেয়ারবাজারে গিয়ে সেখানে উল্লম্ফন ঘটাচ্ছে। এটা হলে আবার বিপদের সম্ভাবনা। আসলে সস্তা রোজগারের টাকা, ঋণের টাকাএর কোনোটারই পরিণতি ভালো হয় না। দশ-বারো বছর আগে আমেরিকা বুঝেছে সস্তা টাকার পরিণতি কী? সে দেশ সাব-প্রাইম অর্থাৎ খারাপ ঋণে ভরে যায়, যার পরিণতিতে বিশ্বব্যাপী মন্দা নেমে আসে। এর নায়ক হচ্ছেন এলান গ্রিনস্প্যান, যিনি ১৯৮৬ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান ছিলেন। চিফ মানি বড় প্রবক্তা ছিলেন তিনি। অথচ এর ফলে সারা দুনিয়াকে ভুগতে হয়েছে এবং হচ্ছে।

সরকারের বর্তমান সস্তা ঋণ নীতির খড়্গ শেষ পর্যন্ত আমানতকারীদের ওপর পড়েছে। আমানতকারীরাই সঞ্চয়কারী। তারা মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত শ্রেণীর লোক। ব্যাংকের আমানত সঞ্চয়পত্রের ক্রেতা এরাই। এরাই চাকরিজীবী, পেশাজীবী, স্বনিয়োজিত ব্যক্তিউকিল, মোক্তার, ডাক্তার। এরাই বাজারে যায়, এরাই ভোগ করে। বর্তমান সুদনীতির বর্তমান পরিণতিতে এরা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। লাখ লাখ লোক এখানে। অবসরভোগী, বিধবা, অসচ্ছল লোকজন, মুক্তিযোদ্ধা, গ্রামীণ নারীসবাই এর মধ্যে পড়ে। তাদের আয় নানা সূত্র থেকে আসে। সুদ আয় অন্যতম। সুদ আয়ে কয়েক বছর ধরে ক্রমাগতভাবে আঘাত আসছে। সুদহার কমতে কমতে আজকের উপরে বর্ণিত স্তরে এসেছে। এতে তাদের আয় কমেছে। তাদের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে এবং পাচ্ছে। আয় হ্রাসের কারণে শুধু তারাই ক্ষতিগ্রস্ত নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সোস্যাল সিকিউরিটির কাজ। আমাদের দেশে সামাজিক নিরাপত্তা সরকার দেবে না। ২০০-৫০০ টাকা মাসিক ভাতার কথা বলছি না, বলছি সামগ্রিক সামাজিক নিরাপত্তার কথা। উন্নত দেশে সামাজিক নিরাপত্তার দায়িত্ব সরকার পালন করে। বেকারদের দেখাশোনা, অবসরপ্রাপ্তদের দেখাশোনা, তাদের খাবার, চিকিৎসা, ওষুধ প্রদান সরকারের দায়িত্ব। সিনিয়র সিটিজেনরা পান নানা সুবিধা। অনেক কিছুই তাদের জন্য ফ্রি তারা পরিবারের দায়িত্ব দিয়ে দিয়েছে রাষ্ট্রকে। পরিবার ব্যবস্থা ভঙ্গুর। স্বামী-স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, মা-বাবার সম্পর্কভিত্তিক সমাজ তাদের নেই। আমাদের এখানে অবস্থাটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমাদের সমাজ সম্পর্কভিত্তিক, পরিবারকেন্দ্রিক। এখানে সামাজিক নিরাপত্তা সম্পূর্ণই বেসরকারি খাতে। তার মানে সামাজিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে পরিবার, পরিবারের উপার্জনক্ষম লোকজনরা। মা-বাবার দেখাশোনা, তাদের ডাক্তার, চিকিৎসা, ওষুধসব ছেলেমেয়ে দেখাশোনা করে। বেকার ভাই-বোন, গরিব আত্মীয়স্বজন, এমনকি পাড়া-প্রতিবেশী পর্যন্ত তাদের দেখতে হয়। ভাইবোনের বিয়েশাদি পর্যন্ত পরিবারের দায়িত্ব। বর্তমান সুদনীতি তার পরিণতিতে সমাজ বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে। কারণ পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তির আয় যদি কমে, ক্রয়ক্ষমতা যদি কমে, তাহলে তার পক্ষে বৃহত্তর পরিবারের লোকজনের দায়িত্ব নেয়া সম্ভব হবে না সংগত কারণেই। অথচ বর্তমানে কেন, আগামী পাঁচ-সাত-১০ বছরে বাংলাদেশে সামাজিক নিরাপত্তার কাজ/দায়িত্ব সরকার যে নিতে পারবে, তার কোনো ভরসা নেই। পরিবার ব্যবস্থা ভেঙে সব রাষ্ট্রের হাতে তুলে দিতে হলেও তা সম্ভব হবে কিনা সন্দেহ। কারণ আমাদের পারিবারিক ঐতিহ্য দীর্ঘদিনের। আমরা একই সংস্কৃতির গর্বিত অনুসারী। অবস্থায় এখনই সুদনীতির পুনর্বিবেচনা করা দরকার, দরকার অর্থনৈতিক সামাজিক স্থিতিশীলতার স্বার্থে।

 

. আর এম দেবনাথ: অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন