যশোর ও জয়পুরহাট

বকেয়া ও বিধিনিষেধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত চামড়া ব্যবসায়ীরা

বণিক বার্তা ডেস্ক

এবার ঈদুল আজহার মৌসুমে চামড়া বেচাকেনায় প্রত্যাশিত লাভের মুখ দেখেননি ব্যবসায়ীরা। ট্যানারি মালিকদের থেকে বকেয়া পাওনা আদায় না হওয়া এবং বিধিনিষেধের প্রভাবে স্থানীয় ব্যবসায়ী বাদে বাইরের ব্যবসায়ীদের আগমন কম থাকায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এমনটাই জানিয়েছেন যশোর জয়পুরহাটের মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা।

খুলনা বিভাগের সর্ববৃহৎ চামড়ার মোকাম যশোরের রাজারহাটে এবার চামড়ার দাম ছিল প্রত্যাশার চেয়েও কম। ঈদের পর শনিবার প্রথম হাটবারে চামড়াও উঠেছে অল্প পরিমাণ। ঢাকার ট্যানারি মালিকরা বকেয়া টাকা না দেয়ায় কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ চামড়া কিনতে পারেননি স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। আবার একই দিনে সকালে প্রচুর বৃষ্টিপাত লকডাউনের কারণে চামড়ার দাম কমে গেছে। এতে লোকসানের শিকার হয়েছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।

যশোরের বেপারি শের্ফাড আহমেদ অভিযোগ করে বলেন, ট্যানারি মালিকরা তাদের টাকা পরিশোধ না করায় সব বেপারি নগদ টাকার সংকটে রয়েছেন। যে কারণে চামড়া কেনা সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া বৈরী আবহাওয়ার কারণেও হাট জমেনি।

যশোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মুকুল জানান, ট্যানারি মালিকদের কাছে রাজারহাট ব্যবসায়ীদের ২০ কোটি টাকার ওপরে পাওনা রয়েছে। মূলত নগদ টাকার সংকট এবং হাটবারের দিন বৈরী আবহাওয়ার কারণে রাজারহাটে চামড়ার হাট তেমন জমেনি। তার পরেও নগদ টাকায় প্রায় কোটি টাকার বেচাকেনা হয়েছে।

রাজাহাটের ইজারাদার হাসানুজ্জামান হাসু জানান, তিন-চার বছর আগেও রাজারহাটে কোরবানি ঈদের হাটে অন্তত লাখ পিস গরুর ৫০ হাজার পিস ছাগলের চামড়া আসত। এখন আসছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার পিস গরু ২৫ হাজার মতো ছাগলের চামড়া। বাইরের ব্যবসায়ীরা না আসায় এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পুঁজি সংকটের কারণে হাট তেমন জমেনি।

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি এলাকার গোপাল চন্দ্র দাস যশোরের চামড়ার মোকাম রাজরহাটে এসেছিলেন এক হাজার পিস গরু ছাগলের চামড়া নিয়ে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত দাম না পেলেও সব চামড়া বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, ৩০ বছর ধরে ব্যবসার সঙ্গে আমি জড়িত কিন্তু চামড়ার রকম দরপতন আগে কখনো দেখিনি। বাড়ি বাড়ি গিয়ে চামড়া সংগ্রহ করা, লবণ লাগানো এবং পরিবহন খরচ মিলিয়ে যে চামড়ার দাম প্রতি পিস ৮০০-৯০০ টাকা পড়েছে, সেই প্রায় একই দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি।

অভয়নগর উপজেলার হরিচাঁদ দাস জানান, তিনি ২৪ পিস গরুর চামড়ার মধ্যে ১০ পিস বিক্রি করেছেন ৫০০ টাকায়। আর ১৪ পিস ৩০০ টাকা হিসেবে। অথচ তার কেনা ছিল প্রতি পিস ৫০০ টাকায়। বাইরের ব্যবসায়ীরা না আসায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম কমিয়ে দিয়েছেন।

চামড়া বেচাকেনায় এমন নিম্নমুখী পরিস্থিতির কথা জানান জয়পুরহাটের ব্যবসায়ীরাও। জয়পুরহাট শহরের চামড়া ব্যবসায়ী সাজু হোসেন শাহিন আকতার বলেন, ট্যানারি মালিকদের কাছে বকেয়া পাওনা রয়েছে একেকজনের ৩০-৩৫ লাখ টাকা। ফলে হাতে টাকা না থাকায় তারা কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে চামড়া কিনতে পারছেন না। ফলে বাজারে চাহিদা কম থাকায় চামড়ার মূল্য স্বাভাবিক কারণে কমে গেছে।

অন্যদিকে চামড়া পাচার রোধে সীমান্তে বিজিবির টহল বাড়ানো হয়েছে। এতে দেশের স্থানীয় বাজারে আপাতত চামড়া কেনাবেচা করতে হচ্ছে। এজন্যও চামড়ার চাহিদা খানিকটা কম হওয়ায় দরপতন ঘটছে বলে দাবি করছেন অনেক ব্যবসায়ী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, সীমান্তে কড়াকড়ি না থাকলে তারা ওপারে চামড়া পাঠিয়ে কিছু লাভের মুখ দেখতেন। বিজিবির কড়াকড়ির কারণে এবার সেটিও হচ্ছে না।

জয়পুরহাট-২০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল রফিকুল ইসলাম জানান, জয়পুরহাট-২০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধীনে সীমান্ত এলাকা রয়েছে প্রায় সাড়ে ৪১ কিলোমিটার। এর মধ্যে ২২ কিলোমিটার এলাকা তারকাঁটা দিয়ে ঘেরা, বাকি ১৮ কিলোমিটার সীমান্তে তারকাঁটা নেই। চোরাকারবারিরা মূলত জায়গাটিকেই তাদের পাচারের পথ হিসেবে ব্যবহার করে। তাই জায়গাগুলো সবসময় নজরদারির মধ্যে রাখা হয়। চামড়া পাচার রোধে সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছেন তারা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন