এসএমই খাতের বিকাশে নতুন সম্ভাবনা ই-কমার্স

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্পের পরিধি বাড়ছে। নিজে অন্যকে স্বাবলম্বী করতে এসএমই খাতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করছেন উদ্যোক্তারা। গ্রামে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিক্ষা গ্রহণ না করা গৃহিণী থেকে শুরু করে শহরের শিক্ষিত বেকার যুবক সবাই ব্যবসায়িক নানা উদ্যোগ নিচ্ছেন, যার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে অবদান বাড়ছে এসএমই খাতের।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের মোট জিডিপির ২৫ শতাংশ আসে এসএমই খাত থেকে। শিল্প খাতের কর্মসংস্থানের ৮৬ শতাংশই খাতে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) তথ্য বলছে, বাংলাদেশের জিডিপিতে এসএমই খাতের অবদান ২০-২৫ শতাংশ। বর্তমানে দেশের প্রায় আড়াই কোটি মানুষের সরাসরি কর্মসংস্থান ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্প খাতে। এমনকি ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের ক্ষেত্রেও ভূমিকা রেখে যাচ্ছে ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্প খাত। কারণ অনেক উদ্যোক্তা তাদের পুরো ব্যবসায়িক কার্যক্রম অনলাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমে চালিয়ে যাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দিতে কাজ করছে সরকার। ২০১৯ সালে বাংলাদেশে এসএমই নীতি অনুমোদিত হয়েছে। ২০২৪ সাল পর্যন্ত নীতি বাস্তবায়নের জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।

দেশের এসএমই খাতের বিকাশের ধারায় বাদ সাধে নভেল করোনাভাইরাস। বৈশ্বিক মহামারী নতুন করে খাতকে হুমকির মুখে ফেলেছে। করোনা উদ্ভূত বাস্তবতায় মুখ থুবড়ে পড়ার সম্মুখীন ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্প। করোনার সময়কালে ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্পের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা নিয়ে জরিপ করেছে বিআইডিএস। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, করোনার বৈশ্বিক মহামারীর কারণে খাতে গত বছরের শুধু দুই মাসে ক্ষতি হয়েছে ৯২ হাজার কোটি টাকা। অবস্থায় এসএমই খাতে কীভাবে আবার গ্রাহক উদ্যোক্তাদের আস্থা ফিরিয়ে আনা যায়, সেটি নিশ্চিত করা এখন গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, এক্ষেত্রে প্রথমত এসএমই খাতের জন্য একটি কৌশলগত কাঠামো প্রণয়ন করতে হবে। যেন সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তারা উপকৃত হতে পারেন। এছাড়া খাতের উদ্যোক্তাদের উচিত হবে বিভিন্ন -কমার্স মার্কেটপ্লেসের সঙ্গে অংশীদারিত্বের হাত বাড়িয়ে দেয়া। কারণ -কমার্স এসএমই খাতকে প্রবৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রাখে।

-কমার্সসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈশ্বিক মহামারীতে মানুষের অভ্যাসগত কিছু পরিবর্তন এসেছে। ফলে সবাই অনলাইন ক্রয়-বিক্রয়ে আগ্রহী হচ্ছেন। এসএমই খাতও পরিবর্তিত অভ্যাসকে পুঁজি করে এগিয়ে যেতে পারে।

দেশের অন্যতম অনলাইন মার্কেটপ্লেস দারাজ এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের সহযোগিতায় বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য বলছে, প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয় করে গত বছর দারাজ-সেলার মৈত্রী প্রোগ্রাম শীর্ষক কার্যক্রম শুরু করে দারাজ বাংলাদেশ। মূলত কভিড-১৯-এর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা করতে এমন কর্মসূচি চালু করে দারাজ। নতুন বিক্রেতাদের অনুপ্রাণিত করতে উদ্যোক্তাদের বিশেষ কিছু সুবিধা দেয়ার মাধ্যমে দারাজ দ্বিতীয়বারের মতো চলতি বছরও কার্যক্রম শুরু করেছে। কর্মসূচির আওতায় উদ্যোক্তারা শূন্য শতাংশ কমিশন, সাপ্তাহিক পেমেন্ট, সাইন-আপের সময় বিনা মূল্যে প্যাকেজিং ম্যাটেরিয়াল প্রদান ২৪ ঘণ্টার গ্যারান্টিসহ ভেরিফিকেশনের মতো সুবিধা পাবেন। মহামারীকালে এমন উদ্যোগ এসএমই খাতের উন্নয়নে আরো ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছে প্রতিষ্ঠানটি।

দারাজের কর্মকর্তারা বলছেন, ক্ষুদ্র মাঝারি আকারের ব্যবসায় জড়িতদের উচিত হবে নতুন বাস্তবতায় ধরনের কর্মসূচিতে সংযুক্ত হওয়া। নতুন সম্ভাবনা অন্বেষণ করা। তাহলে দেশের এসএমই খাত আরো ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন