কভিডের ডেল্টা ধরন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব

জটিল সংকটের দিকে যাচ্ছে বৈশ্বিক সরবরাহ চেইন

বণিক বার্তা ডেস্ক

সম্প্রতি চীনের বন্যা বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনকে আরো জটিল করেছে ছবি: এপি

বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে কভিডের ডেল্টা ধরন। অতি সংক্রমণপ্রবণ ধরন মোকাবেলায় বিভিন্ন দেশে আবারো জারি করা হচ্ছে বিধিনিষেধ। এদিকে চীন জার্মানিতে আঘাত হেনেছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। আর সাইবার হামলার শিকার হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার মূল বন্দরগুলো। সব মিলিয়ে বিষয়গুলো ভঙ্গুর সরবরাহ চেইনকে আরো সংকটে ফেলেছে। হুমকির মুখে পড়েছে বিশ্বজুড়ে কাঁচামাল, যন্ত্রাংশ ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ।

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, অর্থনীতিবিদ শিপিং বিশেষজ্ঞদের মতে, কারণগুলো বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনকে জটিল পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কভিডের ডেল্টা ধরন এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। ভাইরাসটির সংক্রমণ মোকাবেলায় অঞ্চলের অনেক দেশ নাবিকদের প্রবেশে নিষিদ্ধ করেছে। এমনকি পণ্যবাহী জাহাজগুলোর কর্মী পরিবর্তন করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এভাবে পরিবর্তনের কারণে সৃষ্টি হয়েছে কর্মী সংকটও।

ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব শিপিংয়ের মহাসচিব গাই প্লাটেন বলেন, আমরা ক্রু পরিবর্তনের সংকট পার করে এসেছি। তবে এখন পরিস্থিতি আলাদা। বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনের জন্য এটি একটি বিপজ্জনক মুহূর্ত।

সপ্তাহে দক্ষিণ আফ্রিকার কনটেইনার বন্দর কেপটাউন ডারবানে সাইবার আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। কারণে টার্মিনালগুলোর কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। অন্যদিকে সম্প্রতি কভিড রোগীর কাছাকাছি যাওয়ায় ব্রিটেনের অফিশিয়াল স্বাস্থ্য অ্যাপটি কয়েক হাজার কর্মীকে আইসোলেশনে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। ফলে সরবরাহ বন্ধ হওয়ায় দেশটির সুপারমার্কেট কিছু পেট্রল স্টেশন বন্ধের উপক্রম হয়েছে।

বিশ্বের প্রায় ৯০ শতাংশ পণ্য পরিবহন করা জাহাজগুলো ক্রু সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। ফলে তেল আকরিক লোহা থেকে শুরু করে খাদ্য ইলেকট্রনিকস পণ্য পর্যন্ত সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। কনটেইনার পরিবহন করা জার্মান প্রতিষ্ঠান হ্যাপাগ লয়েড পরিস্থিতিকে অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং হিসেবে বর্ণনা করেছে। সংস্থাটি বলেছে, খালি কনটেইনার পাওয়া দুর্লভ হয়ে পড়েছে। বন্দর টার্মিনালগুলোতে অপারেশনাল পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। আমরা আশা করি, চতুর্থ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। যদিও এমন পূর্বাভাস দেয়া খুব কঠিন।

সম্প্রতি চীন জার্মানিতে মারাত্মক বন্যা বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনকে আরো বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। শক্তিশালী দুই অর্থনীতির ওপর নির্ভরশীল কয়েক ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চীনের বন্যা মঙ্গোলিয়া শানসির মতো খনিসমৃদ্ধ অঞ্চলগুলো থেকে কয়লা উত্তোলন কমিয়ে দিয়েছে। এদিকে জার্মানির বন্যায় সড়ক যোগাযোগ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করেছে। সরবরাহ চেইন ট্র্যাকিং প্লাটফর্ম ফোরকাইটসের তথ্য অনুসারে, জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে বন্যার পর পণ্যের চালানের দেরি হওয়া আগের সপ্তাহের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেড়েছে।

কভিডে উৎপাদন শিল্প এমনিতেই সংকটের মধ্যে ছিল। নতুন বাধাগুলো সেই সংকটকে আরো ঘনীভূত করেছে। যন্ত্রাংশ সংকটের কারণে সম্প্রতি টয়োটা মোটর করপোরেশন থাইল্যান্ডের কারখানাগুলোকে বন্ধ করে দিয়েছে। সংস্থাটি জাপানের কয়েকটি কারখানার উৎপাদনও আংশিক স্থগিত করেছে। ডাচ গাড়ি নির্মাতা সংস্থা স্টেলান্টিসও যুক্তরাষ্ট্রের কারখানার উৎপাদন সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে। ভাইরাসের বিস্তার রোধে বিপুল সংখ্যক শ্রমিককে আইসোলেশনে থাকতে হওয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল সংস্থাটিকে।

ইউরোপের বৃহত্তম গৃহ সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক ইলেকট্রোলাক্স সপ্তাহে যন্ত্রাংশ সরবরাহ সমস্যা আরো ঘনীভূত হতে পারে বলে সতর্ক করেছে। আর কারণে সংস্থাটির উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

সরবরাহ চেইনে সংকট যুক্তরাষ্ট্র চীনকেও আঘাত করেছে। বিশ্বের অর্থনৈতিক উৎপাদনের ৪০ শতাংশই দুই দেশের দখলে। সংকট বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা সৃষ্টির পাশাপাশি সব ধরনের পণ্য কাঁচামালের দাম আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন