আমার কথা

ফকির আলমগীর

এক নাগরিক কবিয়াল আমি। নিভৃত পল্লীর মাটি, মানুষ ফসলের সোহাগী সৌরভ কপালে মেখে আজকের আমি উঠে এসেছি নাগরিক রাজপথে। দুনিয়ার দেশে দেশে বাঙালি যেখানে, সেখানেই ঘুরে বেড়িয়েছি একতারা হাতে আর জাতীয় পতাকা কাঁধে। সুরে, শিহরণে ছড়িয়ে দিয়েছি আউল-বাউল ভালোবাসা। গানে গানে বলেছি অবহেলিত, লাঞ্ছিত জীবনের বেদনার আর্তি আর সম্ভাবনার কথা। মরমি উপলব্ধিতে লোকায়ত বাংলার সখিনাদের কথকতা, গীতগাথা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি দরাজ দরদি কণ্ঠে।

তাই আমি পাঠকদের জন্য আবার তুলে ধরতে চাই আমার বৈচিত্র্যপূর্ণ ঘটনাবহুল আত্মকথা। তুলে ধরতে চাই প্রভাতবেলার কথা। তরুণবেলা, কিশোরবেলার অনেক স্মৃতিকথা। ঈদ স্মৃতি, স্কুল স্মৃতি, কলেজ স্মৃতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস স্মৃতি, আরো অনেক স্মৃতিজাগানিয়া মধুর ঘটনা। স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে আজ প্রথমেই মনে পড়ে ফেলে আসা নানা রঙের দিনগুলির কথা। বিশেষ করে স্মৃতিময় জীবনের শৈশব ভুলে না কেউ। সেই ফেলে আসা দিন, ভালোবাসার কিছু কিছু ঋণ, গায়ের হালট, ঘুঘুর তান, শাপলা-শালুক, বটের ছায়া, শিশির ভেজা দূর্বাঘাস, ঋণী সেই পণ্ডিত কাকার কাছে, পাঠশালায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নামতা পড়া আর ধারাপাত পড়া। ঋণী সেই ওয়াহেদ কাকুর কাছে, মক্তবে যার কাছে ধর্মপাঠে দীক্ষা নিয়েছি। যতই সময় যায়, সেই সব দাগ কিছুতেই মুছে না। কখনো খেলেছি বন্ধুদের সাথে সকালে-বিকালে, কখনো হেঁটেছি মিছিলের সাথে। মনে পড়ে সেই লাল-নীল ঘুড়ি, আম-কাঁঠালের ছায়া, উদাস বন, শরতের বিল, হেমন্তের মাঠ, জ্যোত্স্না রাত। বিশেষ করে গাঁয়ের হালট আমার শৈশব স্মৃতিতে দাগ কেটে আছে। যে হালটে ঘোড়দৌড় হতো। যেখানে সাইকেল চালানো শিখেছি। দীর্ঘ হালট, দুই দিকে ধু-ধু ফসলের মাঠ। গলা ছেড়ে গান ধরতে, রোমান্টিক কোনো ভাবনায় মগ্ন হতে হালটে চলে যেতাম। পৌষের কাছাকাছি রোদমাখা সেই সব দিনে গাঁয়ের হালট কাছে টানত, বুক ভরে ফসলের ঘ্রাণ নিতাম। 

আমার জন্ম পরিবারের কথা

১৯৫০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আমার জন্ম, যদিও এটি স্কুলের জন্মতারিখ, তবে দাদীর কাছে শুনেছি আশ্বিন মাসের কোনো এক ঝড়ের দিনে আমার জন্ম। গ্রাম কালামৃধা, থানা ভাঙ্গা, জেলা ফরিদপুর। বাবা মরহুম হাচেন উদ্দিন ফকির, মা মরহুমা বেগম হাবিবুন্নেসা। প্রথম স্ত্রী মারা গেলে বাবা আমার মাকে ঘরে আনেন।

(২০১২ সালে আকাশ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত ফকির আলমগীরের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ আমার কথা থেকে)

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন