হিলিতে বিপাকে উপকারভোগীরা

নম্বরের ভুলে ভাতার টাকা চলে যাচ্ছে অন্যের মোবাইলে

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, হিলি

দিনাজপুরের হিলিতে নম্বর ভুলের কারণে ভাতার টাকা চলে যাচ্ছে অন্যে মোবাইলে। এতে বিপাকে পড়েছেন বয়স্ক, বিধবা প্রতিবন্ধী ভাতাপ্রাপ্তরা। দীর্ঘদিন ধরে সমাজসেবা অফিসে ঘুরেও প্রতিকার পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা। নিয়ে ভাতাপ্রাপ্তদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মকর্তাদের বাদুনাবাদও হচ্ছে। চলছে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ মোবাইল নম্বর ঠিক দিলেও সমাজসেবা অফিসের কর্মকর্তাদের ভুলের কারণেই এমনটি হয়েছে। তবে সমাজসেবা কর্মকর্তারা বলছেন, উপকারভোগীরা ভুল নম্বর দিয়েছেন বলেই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত হাকিমপুর উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে ভিড় করছেন ভাতার টাকা না পাওয়া উপকারভোগী ব্যক্তিরা। একেকজন কাজকর্ম ফেলে টাকা খরচ করে -১০ বার ঘুরেও ফেরত পাচ্ছেন না টাকা। অবস্থায় তাদের ভাতার টাকা ফেরত পেতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তারা।

সমাজসেবা কার্যালয়ে আসা আব্দুল লতিফ বলেন, আমার মেয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী। প্রথম দিকে বইয়ের মাধ্যমে হাতে হাতে যে টাকা দিয়েছে, সেটিই শুধু আমার মেয়ে পেয়েছে। এর পরে মোবাইল নম্বরের মাধ্যমে যে সাড়ে হাজার টাকা দিয়েছে, সে টাকা এখন পর্যন্ত আমার মেয়ে পায়নি।

হাকিমপুর উপজেলার মোংলা থেকে বয়স্ক ভাতার টাকা নিতে আসা নরেণ কর্মকার বলেন, আমি গত ঈদুল ফিতর থেকে কোনো টাকা পাইনি। মানুষ টাকা পাচ্ছে, কিন্তু আমি কোনো টাকা পাচ্ছি না। পর্যন্ত অফিসে আমার ছয়বার আসা হয়ে গেল। এখন পর্যন্ত আমার টাকার কোনো ফলাফল পাইনি। টাকা ঢুকছে কী ঢুকছে না কোনো কিছু জানতে পারিনি, এখন টাকা পাব কিনা তাও বলতে পারছি না। আগে যে হাতে হাতে টাকা দিচ্ছিল ওটাই আমাদের জন্য ভালো ছিল, অনেক দিন থেকে টাকা পাইনি, টাকার খোঁজ নিতে বাড়ি থেকে ছয়বার আসলাম অফিসে টাকা খরচ করে।

বিধবা ভাতার টাকা নিতে আসা রজিফা বেওয়া বলেন, অনেক দিন হলো আমি কোনো ভাতার টাকা পাচ্ছি না। যতবার সমাজসেবা অফিসে আসি, ততবার বলে আপনার ভুল হয়েছে। টাকা পেলে দিক আর না পেলে বলে দিক; আমরা টাকা পাব না, এভাবে আর ঘুরতে পারব না।

বয়স্ক ভাতা নিতে আসা আব্দুল জব্বার বলেন, আমার বয়স্ক ভাতার টাকা অন্যজনের মোবাইল নম্বরে গেছে। সমাজসেবা অফিস থেকে বলছে, নম্বর কার, তো আমরা কীভাবে বলব ওই নম্বর কার, আমরা তো সঠিক নম্বর দিয়েছি। ওই নম্বর এল কোথা থেকে। আবার ওই নম্বরে কল দিলে সেই লোক আর মোবাইল ফোন ধরছে না।

সমাজসেবা কার্যালয়ে আসা সিদ্দিক হোসেন বলেন, আমার বাবা-মা দুজনেই প্রতিবন্ধী, ভাতার টাকা দুজনেই পাচ্ছিলেন। কার্ডের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে ভাতার টাকা দিচ্ছিল, ওটাই ভালো আছিল, এখন মোবাইল নম্বরে দিয়েই যত ঝামেলা। নম্বর ভুল করে কোথাকার নম্বর কোথায় দিয়েছে, আমার বাবা-মার ভাতার টাকা চলে গেছে নাকি গাজীপুরের টঙ্গীতে। অফিসে -১০ জন করে আসছি। সিম কিনে নতুন নম্বর দিচ্ছি। এখন অফিস থেকে ঢাকায় ফোন দিচ্ছি কেউ ধরছে আবার কেউ ধরছে না, আবার বলছে টাকা নেই।

ভাতার টাকা নিতে আসা মিনারা হোসেন বলেন, যখন থেকে মোবাইলে টাকা দেয়া শুরু করেছে, তখন থেকে আমি কোনো টাকা পাইনি। আমার মোবাইলের নম্বর দিয়েছিলাম সেটি নাকি হয়নি, সেই নম্বরে টাকা ঢুকছিল না। পরে অফিস থেকে ফোন দিলে আমার মেয়ে অন্য একটি নম্বর দেয়, তারপরও টাকা ঢোকেনি। হাকিমপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মইনুল ইসলাম বলেন, উপজেলায় হাজার ৫৩৮ জন বিভিন্ন ভাতাভোগী রয়েছেন। যাদের মধ্যে অল্পসংখ্যক ভাতাভোগীর মোবাইল নম্বর ভুল হয়েছে। উনারাই তাদের মোবাইল নম্বর ভুল দিয়েছেন, কারো আত্মীয়-স্বজনের নম্বর দিয়েছেন কিন্তু স্বীকার করছেন না।

আমাদের হয়তোবা দু-একটা ফিঙ্গারিংয়ে ভুল হতে পারে, কিন্তু পুরো নম্বরটা পরিবর্তন করার কোনো সুযোগ নেই। নিজেদর আত্মীয়-স্বজনদের নম্বর দিয়ে পরে আবার সেগুলো খুঁজে পায় না। এরপরে যখন আবার নগদ অ্যাকাউন্ট লিখতে যায় তখন আবার পরিবর্তন করছে, যার কারণে একটু সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এটা এখন সরকারি সিদ্ধান্ত, আমরা চেষ্টা করছি যতগুলো টাকা কালেকশন করা যায়। পরবর্তী সময়ে যেন একটাও ভুল না হয়, সেটার দিকে আমরা সতর্ক দৃষ্টি রাখছি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন