বাগেরহাটে পিকআপ চাপায় ইজিবাইকের ৭ যাত্রী নিহত

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, বাগেরহাট

বাগেরহাটে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত একজনের স্বজনদের আহাজারি ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

বাগেরহাটের ফকিরহাটে পিকআপ ভ্যান ইজিবাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষে সাতজন নিহত হয়েছেন। গতকাল সকালে খুলনা-মাওয়া মহাসড়কে ফকিরহাট উপজেলার বৈলতলী প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকায় দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ইজিবাইকের চালকসহ ছয় যাত্রী ঘটনাস্থলে নিহত হন। গুরুতর আহত এক যাত্রী খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা মরদেহ উদ্ধার করে ফকিরহাট মডেল থানায় হস্তান্তর করেছেন। ঘটনায় পিকআপচালক ওসমান গনিকে (২০) আটক করেছে ফকিরহাট থানা পুলিশ। পিকআপচালক ওসমান গনি সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের সিদ্দিক হোসেনের ছেলে। বাগেরহাটের পুলিশ সুপার কেএম আরিফুল হক ফকিরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা বেগম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

নিহতরা হলেন বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলার চাকশ্রী বাজার এলাকার মৃত আব্দুল ওহিদের ছেলে আব্দুল হাই (৫৫), ব্রি-চাকশ্রী এলাকার শেখ আলী আহম্মদের ছেলে শেখ নূর মোহাম্মদ (৬০), একই এলাকার মৃত শেখ দলিল উদ্দীনের ছেলে ইজিবাইক চালক শেখ রেজাউল, ফকিরহাট উপজেলার নলদা মৌভোগ এলাকার দিলিপ রাহার ছেলে উত্পল রাহা (৪২), একই এলাকার মৃত জগদীশ দত্তের ছেলে নয়ন দত্ত (২৭), ফকিরহাট উপজেলার পার নওয়াপাড়া এলাকার কালিপদ দের ছেলে গৌড়নন্দ দে (৫০) বাগেরহাট সদর উপজেলার দক্ষিণখানপুর গ্রামের মোন্তাষ শেখের ছেলে নজরুল শেখ (৫৫)

স্থানীয় ইমরান খান মনিরুজ্জামান বলেন, হঠাৎ একটি বিকট শব্দ শুনতে পাই। শব্দ শুনে রাস্তায় এসে দেখি অটোটি দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। লোকজন রাস্তার ওপর পড়ে আছে। তখন একজনের হাত-পা নড়ছিল। তাকে আমরা ফকিরহাট হাসপাতালে ভর্তি করেছি।

বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক গোলাম সরোয়ার বলেন, আমরা ঘটনাস্থল থেকে ছয়টি মরদেহ উদ্ধার করেছি। দুর্ঘটনাকবলিত পিকআপ ভ্যান ইজিবাইকসহ মরদেহ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছি। ইজিবাইকে থাকা আরো এক যাত্রীকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ইজিবাইকটি ফকিরহাট থেকে নওয়াপাড়া এলাকায় এবং ট্রাকটি ফকিরহাটের দিকে যাচ্ছিল।

ফকিরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সাইদ মোহাম্মাদ খায়রুল আনাম বলেন, আমরা পিকআপচালককে আটক করেছি। সে সাতক্ষীরা থেকে লোক নিয়ে মাদারীপুরের শিবচর গিয়েছিল। সেখানে লোক নামিয়ে ফেরার পথে পিকআপটি ইজিবাইকটিকে ধাক্কা দেয়।

নিহতদের বাড়িতে মাতম: পিকআপ চাপায় নিহত ইজিবাইকের যাত্রীদের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। গতকাল দুপুরে নিহতদের মধ্যে কয়েকজনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় একদিকে স্বজন হারানোর বেদনা, অন্যদিকে ভবিষ্যতের শঙ্কা। সব মিলিয়ে এক নির্মম বাস্তবতার মুখোমুখি পরিবারগুলো। তাই তো কখনো কাঁদছেন, আহাজারি করছেন, কখনো আবার শোকে নির্বাক হয়ে যাচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা। দুর্ঘটনায় নিহত ফকিরহাটের নলধা মৌভোগ ইউনিয়নের নয়ন দত্ত উত্পল রাহার স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছে পরিবেশ।

নিহত নয়ন দত্তের ভাই বাসুদেব দত্ত বলেন, ভাইয়ের ওপরেই নির্ভর করে চলত আমাদের সংসার। পাঁচ বছর আগে বাবা মারা যাওয়ার পরে সবকিছু ভাই নয়নই সামলাতেন। ঘটনায় আমরা তো পথে বসে গেলাম। মায়ের এখনো জ্ঞান ফেরেনি। এমনিই মা অসুস্থ। কী হয় ভগবান জানেন।

নিহত উত্পল রাহার স্ত্রী জানান, পান বিক্রির স্বল্প আয়েই কোনোরকম দিন চলত আমাদের। আমার ছোট ছোট দুটা ছেলেমেয়ে। মেয়ের বয়স তিন আর ছেলের এক। ওরা তো বুঝতেছে না ওরা কী হারাল। আমি এখন কীভাবে বাঁচব বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন