ঢাকামুখী মানুষের ঢল, সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঈদের একদিন পরই ঢাকা ফিরতে ‍শুরু করেছে মানুষ। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, আগামীকাল শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে কঠোর বিধিনিষেধ জারি হচ্ছে। যে কারণে ঢাকামুখী মানুষের ঢল তৈরি হয়েছে। রাজধানীর প্রবেশ পথগুলোতে মানুষের ভিড় লক্ষ্য করে গেছে। ফেরিঘাটগুলোতেও অস্বাভাবিক ভিড়এ অবস্থায় সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্য ও ভাইরাস বিশেষজ্ঞরা।

টানা দুই সপ্তাহ কঠোর বিধিনিষেধ থাকার পর গত ১৫ জুলাই থেকে বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়। মূলত পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ২৩ জুলাই সকাল টা পর্যন্ত এ বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, আগামীকাল শুক্রবার সকাল টা থেকে আগামী ৫ আগস্ট রাত ১২টা পর্যন্ত  কঠোর বিধিনিষেধের আওতায় থাকবে গোটা দেশএদিকে বিধিনিষেধ শিথিল করার কারণে ঈদ উদযাপন করতে ঢাকা ছেড়েছেন প্রায় এক কোটির মতো মানুষ। সরকারের বিধিনিষেধ অনুযায়ী যাদের রাজধানীতে ফিরতে হবে আগামীকাল সকাল ৬টার মধ্যেই। অর্থা ঘরমুখো মানুষ এবার ঢাকা ছাড়ার জন্য ছয়দিন সময় পেলেও ঈদের পর ফেরার জন্য সময় পাচ্ছে মাত্র একদিন। যে কারণে আজ সকাল থেকেই ফেরিঘাটগুলোতে ছিল যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দিন যত গড়াচ্ছে ফেরিঘাটগুলোতে যাত্রীদের চাপ ততই বাড়ছে। শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথের সবচেয়ে বেশি যাত্রীদের চাপ বাড়ছে। অন্যদিকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাটেও ঢাকামুখী মানুষের স্রোত লক্ষ্য করা গেছে।

বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা যায়, ঢাকামুখী মানুষের চাপ সামলাতে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ৩৩টি লঞ্চ ও ১৯ ফেরি চালু রাখা হয়েছে। ঘাট ব্যবস্থাপক মো. সালাম মিয়া জানান, ঈদে শেষ কর্মস্থল ফেরা মানুষের চাপ বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছেই। তবে যত চাপই হোক বিআইডব্লিউটিসি প্রস্তত রয়েছে। সবগুলো ফেরি সার্ভিসে নিয়োজিত আছে।

অন্যদিকে বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়া ঘাটের সহমহাব্যবস্থাপক মো. সফিকুল ইসলাম জানান, ঘাটে সকাল থেকেই উপচেপড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে। যানবাহনের দীর্ঘ লাইন আছে। ঘাটে গাড়ি ও মানুষের চাপ বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে। লঞ্চঘাটেও মানুষের অস্বাভাবিক জট। মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবণতা অনেক কম দেখা যাচ্ছে। আবার এতো ভীড়ের কারণে চাইলেও স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব হচ্ছে না।

জানা গেছে, শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথের প্রায় সব লঞ্চ ও ফেরি চালু রাখা হয়েছে। এ নৌপথের জন্য বরাদ্দ ১৯টির মধ্যে ১৪টি ফেরি সচল রয়েছে। আর ৮৭টি লঞ্চের মধ্যে চলাচল করছে ৮৬টি। তবে সংক্রমণ ঠেকাতে ৫০ শতাংশ যাত্রী পরিবহনের বিধান থাকলে ঠাসাঠাসি করে যাত্রী নেয়া হচ্ছে। ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে ঘাট কর্তৃপক্ষ। এরপরও যাত্রীদের ঘাটে পারারের অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে।

আবার ফেরার পাশাপাশি অনেক মানুষ আজও ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছেন। মূলত এবারের বিধিনিষেধে কলকারখানাও বন্ধ থাকছে। যে কারণে ঈদের দ্বিতীয় দিনে আজও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষকে ঢাকা ছাড়তে দেখা গেছে। তাদেরই একজন কারখানা কর্মী ইমরান। যাচ্ছেন গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটে। মাওয়া ঘাটে তার সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, রাজধানীর একটি কসমেটিক কারখানায় কাজ করেন তিনি। ঈদের আগের দিন বন্ধ শুরু হলেও বাড়িতে যেতে পারেননি। প্রাথমিকভাবে ১ আগস্ট পর্যন্ত কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। পরে আবারও বাড়ানো হবে। তাই ঢাকা না থেকে ঈদের পর দিনই বাড়ি ফিরছি। নভেল করোনাভাইরাসের বাহক হতে পারেন জেনেও নিরুপায় হয়ে রাজধানী ছাড়তে হচ্ছে বলে জানান তিনি।

এদিকে জনস্বাস্থ্য ও ভাইরাস বিশেষজ্ঞরা মানুষের এমন চলাচলের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। তাদের আশঙ্কা এ পরিস্থিতি সংক্রমণ ব্যাপকহারে ছড়িয়ে দেবে। তারা বলছেন, চলমান সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ নতুন কঠোর বিধিনিষেধেও নিয়ন্ত্রিত হবে কিনা তা এখন আর বলা যাবে না। যেভাবে মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন ঠিক অনুরুপভাবেই ফিরে আসছেন। এই পরিস্থিতি কভিড-১৯ বিস্তারে উপযোগী।

বর্তমানে কলকারখানা বন্ধ রেখে বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে তবে সেটা কতটুকু কঠোর থাকবে এ এখনই বলা যাচ্ছে না বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, আমরা আগে দেখেছি অনেক কিছু বন্ধ রাখলেও পরে তা খুলে দেয়া হয়েছে। এতে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রিত হয় না। দুই সপ্তাহ কঠোর লকডাঠন দিয়ে এমন সময় শিথিল করা হলো, যখন আমরা সুফল পাব বলে ধরে নেয়া হয়েছিল। আগামী দুই সপ্তাহ চলাচলে কঠোরতা অবলম্বন করলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রিত হবে। তবে আরো কিছু সময় লাগতে পারে। সংক্রমণ কমাতে হলে ১৪ দিনের পরও অপেক্ষা করতে হয়। কমতে শুরু করলে তখন যদি সব ছেড়ে দেয়া হয়, তবে কমার বিষয়টি পুরোপুরি ঘটার আগেই আবার বাড়তে শুরু করে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন