অধিকাংশ কারখানায় ঈদ বোনাস পরিশোধের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঈদুল আজহার আগে গতকাল ছিল শেষ কর্মদিবস। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, দেশের সব শিল্প খাতের শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধের শেষ দিন ছিল গতকাল। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সময়ে অধিকাংশ শিল্প-কারখানায় বেতন-বোনাস পরিশোধ হয়েছে।

আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ খুলনা ছয় এলাকা শ্রমঘন বলে বিবেচিত। এলাকাগুলোর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি তদারকির দায়িত্বে থাকে শিল্প পুলিশ। বাহিনীটির তথ্যমতে, এসব এলাকায় বস্ত্র, তৈরি পোশাক, চামড়াজাত পণ্য, আসবাব, সেলফোন সংযোজন, ওষুধ অন্যান্য খাত মিলিয়ে মোট কারখানা আছে হাজার ৮২৪টি।

শিল্প অধ্যুষিত অন্যতম এলাকা আশুলিয়া-সাভারে কারখানা সংখ্যা হাজার ২৩১। গাজীপুর এলাকায় কারখানা আছে হাজার ৯০৩টি। চট্টগ্রাম এলাকায় কারখানা সংখ্যা হাজার ২৫০। নারায়ণগঞ্জ এলাকায় কারখানা সংখ্যা হাজার ৫৮৪। ময়মনসিংহ এলাকায় মোট কারখানা সংখ্যা ১৩১। খুলনা এলাকায় শিল্প পুলিশের আওতাধীন কারখানা সংখ্যা ৭২৫। শিল্প অধ্যুষিত ছয় এলাকায় ঈদুল আজহার আগে বেতন-ভাতা বোনাস দিতে অসমর্থ হওয়ার আশঙ্কা ছিল ৫৩০টিতে।

বেতন-বোনাস পরিশোধসংক্রান্ত গতকাল রাত ৮টার শিল্প পুলিশের হালনাগাদ তথ্য বলছে, উল্লেখযোগ্য কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি। দুটি কারখানার পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। এর একটি হলো নারায়ণগঞ্জের ওপেক্স অ্যান্ড সিনহা গ্রুপ, আরেকটি হলো গাজীপুরের স্টাইল ক্রাফট। দীর্ঘদিন হলো কারখানা দুটির জটিলতা কাটছে না। ওপেক্স অ্যান্ড সিনহার জটিলতা সমাধান হয়ে যাবে। কারণ মালিকপক্ষ অর্থের জোগান নিশ্চিত করে কারখানায় গিয়েছে। এদিকে স্টাইলক্রাফটের সমস্যা সমাধানের সম্ভাবনা খুবই কম। এখন পর্যন্ত মালিক লাপাত্তা। কারখানাটিতে শার্টসহ কিছু পণ্য আছে। এগুলো বিক্রির চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু হচ্ছে না। আবার বিক্রি করলেও শ্রমিকের বেতন পরিশোধ করার মতো অর্থ পাওয়া যাবে না।

যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক শিল্প পুলিশের প্রধান মো. শফিকুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, আমাদের আওতায় থাকা কারখানাগুলোর অধিকাংশেই বোনাস পরিশোধ হয়েছে, যার হার অনন্ত ৯৫ শতাংশ হবেই। আমাদের হাতে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা কেবল দুটি। ছোটখাটো যে ঘটনাগুলো ছিল সেগুলো সমাধান হয়ে গেছে। মাসের মাঝামাঝি ঈদ হলে বরাবরই ছুটির আগে মালিক-শ্রমিক সমঝোতা হয় যে কী পরিমাণ ছুটির আগে আর কী পরিমাণ অর্থ ছুটির পরে পরিশোধ হবে। এবারো আলোচনার মাধ্যমে ধরনের সমঝোতা হয়েছে।

কোনো বিরোধপূর্ণ পরিস্থিতি নেই জানিয়ে মো. শফিকুল ইসলাম আরো বলেন, যেগুলোতে বিরোধ দেখা দিয়েছিল সেগুলোতে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানও হয়েছে। শ্রমিকদের ছুটির পরিমাণ একেক কারখানায় একেক রকম। কোনো মালিক সাত-আটদিন দিচ্ছেন, কেউ কেউ ১০ দিন। সরকারের বিধিনিষেধে পরিবর্তন আসতে পারে, আসায় কোনো কোনো মালিক ছুটি কম দিচ্ছেন। নিয়ে বিভ্রান্তির সুযোগ থাকলে বিধিনিষেধ শতভাগ অনুসরণে শ্রমিকরা ছুটি বেশি পাবেন। তাই নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও শ্রমিকদের মধ্যে তেমন কোনো মাথাব্যথা নেই।

শিল্প পুলিশ ছাড়া দেশে প্রচলিত শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিতের দায়িত্বে নিয়োজিত সংস্থাটি হলো শ্রম কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন কল-কারখানা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই) সংস্থার কাছে শ্রম অসন্তোষের ঝুঁকিতে থাকা কারখানাগুলোর একটি তালিকা দেয়া হয়েছে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে। সেই তালিকা অনুযায়ী শ্রম অসন্তোষের ঝুঁকিতে থাকা কারখানার সংখ্যা ৩৫৫। এর মধ্যে ৪৫টি ঢাকার, গাজীপুরে ১৫৫, সাভারে ৯০টি, চট্টগ্রামে ৩২, নারায়ণগঞ্জে ২৫ ময়মনসিংহের আটটি। এর বেশির ভাগই পোশাক শিল্পের কারখানা।

দেশের সবচেয়ে শ্রমনিবিড় খাত পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) তথ্য অনুযায়ী ঢাকায় সচল পোশাক কারখানা আছে হাজার ৬৬৬টি আর চট্টগ্রামে ২৪৬টি। হিসাবে ঢাকা চট্টগ্রাম মিলিয়ে মোট সচল কারখানা সংখ্যা হাজার ৯১২। সব কারখানাই গতকাল পর্যন্ত পরিদর্শন করেছে বিজিএমইএ।

সংগঠনটির তথ্য অনুযায়ী, জুনের বেতন পরিশোধ করেছে মোট হাজার ৯০৭টি বা ৯৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ কারখানা। কারখানাগুলো ঈদুল আজহার বোনাসও পরিশোধ করেছে। গতকাল প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পাঁচটি কারখানার ঈদের বেতন বোনাস প্রদানের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন ছিল বলে জানিয়েছে বিজিএমইএ।

জানতে চাইলে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম বণিক বার্তাকে বলেন, সমস্যা হতে পারে এমন কারখানাগুলো সংগঠনের নিবিড় পর্যবেক্ষণে ছিল। মালিক-শ্রমিক দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতার ভূমিকাও পালন করা হয়েছে সংগঠনের পক্ষ থেকে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন