গত দুই বছরে কানাডায় টেকসই বিনিয়োগ বেড়েছে ৪৮ শতাংশ ছবি: সিজিটিএন বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের পেছনে বড় কারণ বিপুল পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ। প্যারিস চুক্তির আলোকে বিভিন্ন দেশ কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে উদ্যোগ নিচ্ছে। এ উদ্যোগে শামিল হচ্ছে বিশ্বের ছোট-বড় প্রতিষ্ঠানও। এ-সম্পর্কিত প্রচারাভিযানের কারণে বিস্তৃত হচ্ছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত। গতকাল প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী টেকসই বিনিয়োগের পরিমাণ মোট ৩৫ লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছেছে। এটি বিশ্বের বৃহত্তম পাঁচটি বাজারের পরিচালিত সম্পদের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি।
পরিবেশগত, সামাজিক ও সরকারি (ইএসজি) বিষয়গুলোর কারণে ক্রমে টেকসই বিনিয়োগ বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপের তথ্য একত্র করে বৈশ্বিক টেকসই বিনিয়োগ জোট (জিএসআইএ) এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ‘বৈশ্বিক টেকসই বিনিয়োগ পর্যালোচনা ২০২০’
শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত দুই বছরে বৈশ্বিক টেকসই বিনিয়োগ ১৫ শতাংশ হারে বেড়ে ৩৫ লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছেছে। বিনিয়োগের এ পরিমাণ উল্লিখিত পাঁচটি দেশ ও অঞ্চলের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালিত মোট সম্পদের ৩৬ শতাংশের সমান।
অনেক অঞ্চলে পরিচালনার অধীনে টেকসই বিনিয়োগে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এ বিনিয়োগ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে কানাডায়। গত দুই বছরে টেকসই বিনিয়োগে ৪৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এর পরই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান। দেশ দুটিতে যথাক্রমে ৪২ শতাংশ ও ৩৮ শতাংশ টেকসই বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে বাকি অঞ্চলগুলোতে টেকসই বিনিয়োগে উল্টো চিত্র দেখা গেছে। টেকসই বিনিয়োগকে সংজ্ঞায়িত করার বিষয়টি পরিবর্তনের কারণে ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ায় এ বিনিয়োগ হ্রাস পেয়েছে। গত দুই বছরে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) এ বিনিয়োগ ১৩ শতাংশ কমে গেছে।
২০১৮-২০ সাল পর্যন্ত সময়কালে বিশ্বব্যাপী টেকসই বিনিয়োগ সম্পদের ৮০ শতাংশেরও বেশি কেবল যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দখলে ছিল। বৈশ্বিক টেকসই বিনিয়োগ সম্পদের ক্ষেত্রে কানাডার অনুপাত ৭ শতাংশ, জাপান ৮ শতাংশ ও অস্ট্রেলিয়ার অনুপাত ৩ শতাংশ। এ হার দুই বছর ধরেই অপরিবর্তিত রয়েছে।
ইউরোপের টেকসই বিনিয়োগ শিল্প ২০২০ সালের প্রথমার্ধে খুচরা বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে জোরালো চাহিদা অনুভব করেছিল।
জিএসআইএর চেয়ার সাইমন ও’কনার বলেন, বৈশ্বিক মূলধন বাজারকে রূপদানকারী একটি প্রধান শক্তি হিসেবে কাজ করছে টেকসই বিনিয়োগ। ফলে বিশ্বজুড়ে পুঁজি বাড়াতে চাওয়া সংস্থা এবং অন্যদের এ বিনিয়োগ প্রভাবিত করছে। ক্রমবর্ধমান ভোক্তাদের প্রত্যাশা, শক্তিশালী আর্থিক পারফরম্যান্স এবং সামাজিক ও পরিবেশগত সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে টেকসই বিয়োগ বাড়ছে। জীববৈচিত্র্য থেকে শুরু করে বর্ণবৈষম্য ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেও এ বিনিয়োগের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে।
পরিবেশবিদরা বিশ্বাস করেন, গ্রিনহাউজ নিঃসরণের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য এবং সংস্থাগুলো টেকসই বিনিয়োগ লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন করছে কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য মানদণ্ড আরো কঠোর করা প্রয়োজন। ও’কনার জানান, টেকসই বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি কেবল শিল্পের মুনাফার ক্ষেত্রে নয়, নিয়ন্ত্রকদের চাপের কারণে চালিত হয়েছে। তিনি বিশ্বাস করেন, বর্তমানে টেকসই বিনিয়োগের জন্য ক্রমবর্ধমান প্রত্যাশা ও মান পূরণ করা আগের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এটি আরো স্পষ্ট হয়েছে, টেকসই বিনিয়োগ কেবল পরিবেশগত প্রতিশ্রুতিই পূরণ করছে না। পাশাপাশি এটি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও সহায়তা করছে।
