অ্যাথলিট ভিলেজে প্রথম করোনা পজিটিভ

টোকিও অলিম্পিকের ওপর চাপ বাড়ছেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিশ্বজুড়ে কভিড-১৯ মহামারীর কারণে ২০২০ সালের টোকিও অলিম্পিক পিছিয়ে যায় এক বছর। ২৩ জুলাই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে টোকিওতে অলিম্পিক আসর শুরুর কথা। অনেক দেশের অ্যাথলিটরা জাপানে যেতেও শুরু করেছেন। যদিও ক্রীড়াযজ্ঞ শুরুর ঠিক ছয়দিন আগে বড়সড় এক ধাক্কা খেল আয়োজকরা। খেলোয়াড়দের আবাসস্থল অলিম্পিক ভিলেজে হানা দিয়েছে নভেল করোনাভাইরাস। সেখানে একজনের ভাইরাসটিতে পজিটিভ হওয়ার খবর প্রকাশের পর এখন নিরাপদ সুরক্ষিত টোকিও অলিম্পিক গেমস আয়োজন নিয়ে জাপানিদের প্রতিশ্রুতি পড়েছে চরম সংশয়ের মুখে।

টোকিও অলিম্পিক গেমস আয়োজক কমিটি জানিয়েছে, আক্রান্ত ব্যক্তি একজন বিদেশী যিনি গেমসের হয়ে কাজ করতে এসেছেন। শুক্রবার নিয়মিত পরীক্ষায় তিনি পজিটিভ হন। টোকিও ২০২০ অলিম্পিকের প্রধান নির্বাহী তোশিরো মুতো বলেছেন, নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি কোনো অ্যাথলিট নন। গোপনীয়তার স্বার্থে করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি কোন দেশের কিংবা তার নাম-পরিচয় জানানো হয়নি।

গতকাল টোকিও অলিম্পিক গেমসের সঙ্গে সম্পৃক্ত আরো ১৪ জনের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর এসেছে। তাদের মধ্যে দুজন সংবাদমাধ্যমের, সাতজন ঠিকাদার পাঁচজন গেমস কর্মকর্তা। আমেরিকান সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিয়ে টোকিও অলিম্পিক গেমস ঘিরে ৪৫ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে কেউ অ্যাথলিট, কেউ কর্মকর্তা, কেউ আবার চুক্তিভিত্তিক কোনো কাজে জড়িত।

গতকাল সংবাদ সম্মেলনে তোশিরো মুতো জানিয়েছেন, করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে ভিলেজের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং ভিলেজের বাইরেই আলাদাভাবে চলছে তার আইসোলেশন।

অলিম্পিক ভিলেজে আক্রান্ত ব্যক্তি জাপানের নন বলে কর্মকর্তারা সবাইকে আশ্বস্ত করতে চাইলেও ঘটনার পর অ্যাথলিট আর কর্মকর্তাদের ক্ষোভ শঙ্কা কি চেপে রাখা যাবে? টোকিওর অভিজাত এলাকা ওয়াটারফ্রন্টে ৪৪ হেক্টর আয়তনের জায়গায় তৈরি করা বিশাল অলিম্পিক ভিলেজেই থাকার কথা গেমসের ১১ হাজারেরও বেশি অ্যাথলিটের। ভিলেজ নিরাপদ আর সুরক্ষিত রাখার প্রতিশ্রুতি রয়েছে আয়োজকদের। কিন্তু এখানে করোনার প্রবেশ নিশ্চিতভাবেই নিশ্চিন্তে রাখবে না অ্যাথলিট আর বিদেশী কর্মকর্তাদের।

করোনার অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে অনেক জাপানিও অলিম্পিক গেমস আয়োজনের বিরুদ্ধে। যদিও এখান থেকে আর পিছু হটার সুযোগ নেই। আইওসি প্রেসিডেন্ট টমাস বাখ জাপানিদের সনির্বন্ধ আহ্বান জানিয়ে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আমরা জানি, জাপানেও কিছু সংশয়বাদী মানুষ থাকবে। আমরা জাপানি মানুষকে বলব আহ্বান করব, তারা যেন বিশ্বের অ্যাথলিটদের স্বাগত জানায় সমর্থন করে। আমরা আত্মবিশ্বাসী যে যখন জাপানি মানুষজন দেখবেন যে তাদের অ্যাথলিটরা টোকিও গেমসে ভালো পারফর্ম করছেন, তখন তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে যাবে।

আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি জাপানি আয়োজকরা দৃপ্তকণ্ঠে বলছিলেন, টোকিও আসর মোটেও করোনার সুপার-স্প্রেডার হয়ে উঠবে না। কিন্তু তাদের অঙ্গীকার আর আত্মবিশ্বাসে এখন কি চিড় ধরবে না?

৩২তম অলিম্পিক গেমস শুরু হবে ২৩ জুলাই, যা আগামী আগস্ট পর্যন্ত চলবে। গেমসে বিশ্বের ২০৬টি দেশের ১১ হাজারেরও বেশি অ্যাথলিট অংশ নেবেন। এবার ৫০টি ডিসিপ্লিনের ৩৩ ক্রীড়ায় ৩৩৯ ইভেন্টে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন অ্যাথলিটরা। ২০১৬ সালে ব্রাজিলের রিও অলিম্পিকে ৪১ ডিসিপ্লিনে ২৮ ক্রীড়ায় ৩০৬টি ইভেন্টে খেলা হয়েছিল। টোকিও অলিম্পিকে নতুন বেশকিছু খেলা যুক্ত হয়েছে।

এর আগে ১৯৬৪ সালে প্রথমবার অলিম্পিক আয়োজন করে জাপান। করোনার কারণে জাপানিদের অনেক আশা-ভরসার এবারের আয়োজন ঘিরে তৈরি হয় অনেক শঙ্কা। আগামী শুক্রবার অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। তার পাঁচ-ছয়দিন আগে সমালোচকরা প্রশ্ন তুলছেন, আয়োজন চালিয়ে যাওয়া উচিত হবে কিনা।

অবশ্য বেশকিছু অ্যাথলিট করোনার কারণে টোকিও গেমস থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। ২০১৯ ইউএস ওপেনজয়ী কানাডিয়ান টেনিস তারকা বিয়াঙ্কা আন্দ্রেস্কু করোনার ভয়ে টোকিওতে যাবেন না। অলিম্পিকে খেলবেন না জার্মান টেনিস তারকা অ্যাঞ্জেলিক কেরবারও। সম্প্রতি উইম্বলডন সেমিফাইনালে ওঠা কেরবার অবশ্য বলেছেন, তার শরীরের এখন বিশ্রাম প্রয়োজন। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ান টেনিস তারকা নিক কিরিওস, অস্ট্রেলিয়ান বাস্কেটবল খেলোয়াড় লিজ কাম্বাজও টোকিওতে যাবেন না।

২০তম গ্র্যান্ডস্লামজয়ী টেনিস সুপারস্টার নোভাক জোকোভিচ দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগলেও দুদিন আগে জানিয়েছেন, তিনি টোকিও অলিম্পিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

করোনার কারণে এবার অলিম্পিক হবে দর্শকবিহীন। প্রথমে বিদেশী দর্শক নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দেয়া হলেও পরে জাপানে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় স্বাগতিক দেশের দর্শকদেরও গেমসে নিষিদ্ধ করা হয়।

জাপানে এখন পর্যন্ত আট লাখেরও বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে, দেশটিতে মারা গেছে ১৫ হাজার।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন