ডিপফেক : একটি অভিশপ্ত প্রযুক্তি এবং আইনের লঙ্ঘন

আদিবা জাহান পায়েল

মনে করুন কোনো এক স্বাভাবিক দিনে হঠাৎ করে আপনি একটি ভিডিওতে নিজেকে আবিষ্কার করলেন কিন্তু এটি যেনতেন কোনো ভিডিও নয়, এমন একটি ভিডিও, যেখানে হয়তো আপনি কোনো অশ্লীল অবস্থায় আছেন অথবা এমন কিছু বলছেন বা করছেন যা অত্যন্ত আপত্তিকর তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো আপনি জানেন, আপনি এমন কোনো ভিডিও করেননি অথবা এমন কোনো কথা বলেননি ভিডিওটির মানুষ হুবহু আপনার মতোই দেখতে, এমনকি গলার কণ্ঠস্বর পর্যন্ত আপনার মতো অবিকল ভিডিওটি এমনই বিশ্বাসযোগ্য যে, অন্য কেউই মানতে চাইবে না যে আপনি এই ভিডিওটি করেননি তাহলে কীভাবে সম্ভব হয়েছে এমন করা? এর পিছনে মূল হোতা হলো ডিপফেক

নকল ছবি তৈরি করার ব্যাপারে আমরা সকলেই কমবেশি জানি ফটোশপ বা সহজেই ইনস্টলযোগ্যফটো ম্যানিপুলেশন অ্যাপসগুলোর মাধ্যমে নিখুঁতভাবে নকল ছবি তৈরি করা যায় কিন্তু এটা ভিডিওর ক্ষেত্রে সম্ভব ছিল না এতদিন এর পেছনে কারণ হলো আমাদের কণ্ঠস্বর, চেহারার অভিব্যক্তি বা শারীরিক চালচলন অবিকল নকল করা সহজ ছিল না এজন্য দরকার ছিল উচ্চ মানের প্রযুক্তি ডিপফেক বা ডিপটেকনোলজি এমনই এক অভিশপ্ত, প্রযুক্তি যেখানে মেশিন লার্নিং প্রয়োগের মাধ্যমে নকল ভিডিও তৈরি করা অত্যন্ত সহজ যার ফলস্বরূপ আইনের লঙ্ঘন হতে পারে যে-কোনো সময়

ডিপফেক কীভাবে কাজ করে

এটি একটি কৃত্রিম মিডিয়া, যা নকল ভিডিও বা অডিও তৈরি করে, যেটা দেখতে আপাতদৃষ্টিতে আসল মনে হয় খালি চোখে আপনি কখনোই বুঝতে পারবেন না কোন ভিডিওটি আসল এবং কোনটি নকল মেশিন লার্নিংয়ে একটি কৌশল রয়েছে, যার নাম জেনারেল অ্যাডভারসেরিয়াল নেটওয়ার্ক বা GAN  কৌশলের মাধ্যমে একজন ব্যক্তির বিভিন্ন মুখের ভাবের কয়েক বা কয়েক হাজার ছবি নিয়ে সেগুলোর একটি স্টিমুলেশন তৈরি করা হয় অডিওর ক্ষেত্রেও একই রকম মেশিন লার্নিংয়ের সর্বোপরি সদ্ব্যবহার করে হুবহু তৈরি করা হয় একজন ব্যক্তির নকল ভিডিও

MIT-এর গবেষণায় দেখা যায়, আমাদের দৃষ্টিসীমার পর্যায়কাল ২৬-৬০ মি.লি. সেকেন্ড এবং কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে এই পর্যায়কাল ১৩ মি.লি. সেকেন্ডও হয় যদি আমরা আমাদের অবচেতন মস্তিষ্ক বিবেচনা করি, তাহলে এর পর্যায়কাল ১৩ মি.লি. সেকেন্ডের কম হবে তবে এইটুকু দৃষ্টিসীমার মধ্যে কখনোই আমরা ধরতে পারব না আসল নকলের তারতম্য

 ডিপফেকের প্রয়োজনীয়তা এবং অভিশপ্ততা

বর্তমান যুগকে সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ বললে সবচেয়ে বেশি মানানসই হবে যত দ্রুত কোনো রকমের সত্যতা যাচাই করা ছাড়া খবর ছড়িয়ে পড়ে, মানুষের চিন্তাধারাকে নিয়ন্ত্রণ করার পন্থা এখন কঠিন আর এখানেই ডিপফেকের সফলতা

যদি প্রয়োজনীয়তার কথা বলতে হয় তাহলে সবচেয়ে প্রথমে আসবে আর্টস মূলত চলচ্চিত্র এবং কনটেন্ট তৈরির কাজে ডিপফেক যেমন সাশ্রয়ী তেমনি সময় বাঁচায় ছাড়াও কিছু নির্দিষ্ট গবেষণার কাজে ডিপফেক ব্যবহৃত হয় কিন্তু এটি এমন একটি প্রযুক্তি, যার উপকারিতার চেয়ে অপকারিতাই বেশি তাই এই প্রযুক্তি আমাদের জীবনে করতে পারে আইনের লঙ্ঘন

কিছু বাস্তব উদাহরণ

২০১৮ সালের মে মাসে একটি ভিডিও দ্রুত ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে, যা ছিল তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভিডিওতে দেখা যায় তিনি বেলজিয়ামের জলবায়ু পরিবর্তনের ইস্যুতে এমন উপদেশ দিচ্ছেন, যার ভাষা ছিল অত্যন্ত নিন্দনীয় ধরনের আচরণকে বেলজিয়ামের নাগরিক সহজভাবে নেয়নি এবং তারা টুইটারে বিদ্বেষ প্রকাশ করে তৈরি করে এক বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি পরবর্তীতে জানা যায়, বেলজিয়ামের একটি রাজনৈতিক দল কোনো এক প্রোডাকশন স্টুডিওয়ের সাহায্য নিয়ে নকল ভিডিও তৈরি করে, যেন তারা জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপারে বেলজিয়াম সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে উদ্দেশ্য মহৎ হলেও অরাজকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে এই নকল ভিডিও সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামারও এমন একটি নকল ভিডিও ভাইরাল হয়, যেখানে তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সরাসরি কটাক্ষ করে কথা বলছেন ডিপফেকের সবচেয়ে বড় শিকার তারকাগণ, যাদের নিয়ে তৈরি করা নকল আপত্তিকর ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র নকল ভিডিওগুলো এতটাই নিখুঁত বাস্তবসম্মত!

ডিপফেকের সঙ্গে আইনি সমস্যা

আইন প্রযুক্তির মতো দ্রুত বিকশিত হয় না আর এখানেই ডিপফেক ব্যবহারকারীরা বিভিন্নভাবে ছাড় পেতে পারে তবে নির্দিষ্ট আইন না থাকলেও আমাদের বর্তমান আইনের কিছু অংশ ডিপফেক মোকাবিলায় প্রযোজ্য হতে পারে কিন্তু সেখানেও রয়েছে নানান জটিলতা

কপিরাইট লঙ্ঘন

২০১৯ সালে বিশ্ব ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অরগানাইজেশন (WIPO) একটি খসড়া তৈরি করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি পলিসির ওপর খসড়াটি ডিপফেক-সংক্রান্ত সমস্যাগুলোর ওপর আলোকপাত করলেও WIPO ডিপফেক দ্বারা সংঘটিত অন্যান্য আইনের লঙ্ঘন নিয়ে চিন্তিত শুধু কপিরাইট আইন দিয়ে ডিপফেকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া সম্ভব নয়, কারণ ডিপফেকের শিকার ভুক্তভোগীরা সেই নকল ছবির স্বত্বাধিকারী হয় না তবে ডিপফেকের শিকার ভুক্তভোগীরা ব্যক্তিগত তথ্যনিরাপত্তার সহায়তা নিতে পারে

বাংলাদেশে কপিরাইট আইন, ২০০০-এর ধারা ৭২সুষ্ঠু ব্যবহারেরবিধানকে সংজ্ঞায়িত করে ধারায় উল্লিখিত নির্দিষ্টসংখ্যক বিষয়গুলোকে কপিরাইট লঙ্ঘনের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে তালিকাটি বিস্তৃত এবং এগুলোকে কোনোভাবেই কপিরাইট লঙ্ঘন বলে বিবেচিত করা হয় না কপিরাইট আইনের বিধান অনুযায়ী কপিরাইট সুরক্ষা কেবল সেই কাজের মূল উদ্ভাবকের কাছে থাকে, এবং ডিপফেক ভিডিওগুলোর ক্ষেত্রে কপিরাইট সুরক্ষা থাকে ভিডিওগ্রাফারের কাছে তাই বিদ্বেষপরায়ণ মনোভাব নিয়ে ব্যবহার করা ডিপফেক প্রযুক্তির মোকাবিলা এই আইন দিয়ে পুরোপুরি সম্ভব নয়

মানহানি

ডিপফেক মোকাবিলায় অন্যতম হাতিয়ার হতে পারে মানহানি আইন কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মানহানি আইন উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি করে আসছে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মানহানি মূলত একটি লঘু অপরাধ শুধু তা- নয়, মানহানি আইন একই সঙ্গে দেওয়ানি ফৌজদারি আইন দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ধারা ৪৯৯ অনুযায়ী মানহানিকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং ধারা ৫০০ অনুযায়ী অপরাধীকে জরিমানাসহ সর্বোচ্চ দুই বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয় অন্যদিকে ফৌজদারি কার্যবিধি কোড ১৮৯৮-এর ধারা ১৯৮ অনুযায়ী যে-কোনো সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি মানহানির অভিযোগ আদালতে দাখিল করতে পারেন কিন্তু সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি এবং ব্যক্তি অপমানিত এই দুটি ভাগ-বৈশিষ্ট্যের মধ্যে কোনো তারতম্য করা হয়নি তাই যে কেউ যে-কোনো সময়ে মামলা দাখিল করতে পারে এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিবাদীকে হয়রানি করার লক্ষ্যেই মামলাগুলো দাখিল করা হয় আবার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮-এর পূর্বে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬-এর ব্যবহার করেও মানহানির মামলাগুলো পরিচালিত হতো তথ্য প্রযুক্তি আইন, ২০০৬-এর ধারা ৫৭ অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো ওয়েবসাইটে বা ইলেকট্রনিক প্ল্যাটফরমে মিথ্যা, উসকানিমূলক, অশালীন, আবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করে, যা মানহানিকর, তা সম্পূর্ণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ, যার ফলস্বরূপ সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদণ্ড এবং কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে তবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ এসেও মানহানি আইনের অপব্যবহার থামাতে পারেনি অন্যদিকে নিম্ন আদালতে মানহানির মামলার নিষ্পত্তি বিরল তাই ডিপফেক প্রযুক্তির অপব্যবহার মোকাবিলায় মানহানি আইনকে হতে হবে আরো বেশি সুস্পষ্ট

প্রাইভেসি আইন

যদিও বাংলাদেশের সংবিধিবদ্ধ কোনো প্রাইভেসি আইন বা ডেটা প্রটেকশন আইন নেই, তবে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষায় কিছু আইন আমরা বিবেচনায় নিতে পারি প্রথমেই বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৩() অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিকের গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার রয়েছে অন্যথায় ভুক্তভোগী অনুচ্ছেদ ১০২() অনুযায়ী হাইকোর্ট ডিভিশনে মামলা দাখিল করতে পারেন অন্যদিকে তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯-এর ধারা (), () এবং () অনুযায়ী কোনো কর্তৃপক্ষ এমন কোনো তথ্য যা কোনো ব্যক্তির জীবনের গোপনীয়তা বা তার শারীরিক সুরক্ষাকে বিপন্ন করতে পারে অথবা কোনো আইন দ্বারা সুরক্ষিত অন্য কোনো তথ্য প্রকাশ করতে বাধ্য নয় অর্থাৎ যে কেউই পার্সোনাল ডেটার গোপনীয়তা-বিষয়ক তথ্য পেতে পারে না

আবার তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬-এর ধারা (১০) ব্যক্তিগত ডেটাকে সংজ্ঞায়িত করতে পারেনি তবে ব্যক্তিগত ডেটা রক্ষা করতে এই ধারা ব্যবহার করা যেতে পারে তবে এই আইনের বিতর্কিত ধারা ৫৪- প্রেক্ষাপটে যদি ব্যক্তিগত তথ্য অন্য কোনো ফরম যেমন অফিসের ফাইল বা রেকর্ড থেকে অবৈধভাবে নেওয়া হয় তবে আইনটি প্রয়োগ করা হয় না অর্থাৎ কম্পিউটার সিস্টেম ব্যতীত অন্য কোনো রেকর্ড থেকে যদি কোনো ব্যক্তিগত তথ্য নেওয়া হয়, তবে এই আইনের অধীনে অপরাধীকে শাস্তি দেওয়া যায় না

তবে বর্তমানে ডিজিটাল সুরক্ষা আইন, ২০১৮-এর বিধানগুলো ব্যক্তিগত ডেটা অপব্যবহারের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয় তবে এই আইনের কিছুসংখ্যক বিধান দিয়ে ডেটা প্রাইভেসির মতো মৌলিক অধিকার রক্ষা করা যথেষ্ট নয় তাই ডিপফেকের মতো প্রযুক্তির অপব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে

টর্ট আইন

কোনো ব্যক্তির নাম, তার সদৃশ্যতা বা ব্যক্তিত্ব প্রকাশকারী যে-কোনো কিছু অর্থনৈতিক সুবিধা অর্জনের উদ্দেশ্যে অপব্যবহার করা হলে সেখানে টর্ট আইন প্রয়োগযোগ্য ডিপফেক ভিডিও যেভাবে ব্যবহৃত হয় তার সঙ্গে টর্ট আইন প্রাসঙ্গিক দুঃখজনকভাবে টর্ট আইনের বেশির ভাগ অংশই বাংলাদেশের আইনকাঠামোতে সরাসরি প্রয়োগ করা হয়নি, যার মাধ্যমে বাদী অন্যের দ্বারা সংঘটিত কোনো অন্যায় কাজের ফলে ক্ষতিপূরণের দাবি জানাতে পারেন শুধু কিছু আইনে টর্টের প্রয়োগ দেখা যায় যেখানে একটি সম্পূর্ণ টর্ট আইন সংবিধিবদ্ধ করলে ভুক্তভোগী দ্রুত ক্ষতিপূরণ পেতে পারত

পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২

জার্মান গবেষণা প্রতিষ্ঠান ডিপট্রেসের ২০১৮ সালের এক প্রতিবেদনে তারা জানায়, শুধু সেই বছরই ৭৯৬টি ডিপফেক ভিডিও তারা চিহ্নিত করেছে এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালের জুলাই পর্যন্ত ১৪ হাজার ৬৭৮টি ডিপফেক তারা চিহ্নিত করে উদ্বেগজনকভাবে এইসব ভিডিওর মধ্যে ৯৬ শতাংশই ছিল অশ্লীল কনটেন্ট, যার কেন্দ্রবিন্দুতে আছে নারীরা এই ধরনের কনটেন্টকেরিভেঞ্জ পর্নোহিসেবে চিহ্নিত করা যায়, যা একজন ব্যক্তির জীবন পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয় ২০১৬ সালে হবিগঞ্জের এক স্কুলছাত্রীকেরিভেঞ্জ পর্নো মাধ্যমে হয়রানির শিকার করা হয় যদিও এই ঘটনায় ডিপফেক ব্যবহৃত হয়নি, কিন্তু ডিপফেকের মাধ্যমে রিভেঞ্জ পর্নো তৈরি করা এখন অত্যন্ত সহজ

তবে বাংলাদেশে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২ অত্যন্ত কঠোরভাবে তৈরি করা, যা বলে যে, পর্নোগ্রাফিক বিষয়বস্তুর সংরক্ষণ, বিতরণ, বিক্রয়, প্রদর্শন, বিজ্ঞাপন প্রচার করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ অন্যদিকে এই আইনের শিশু পর্নোগ্রাফির জন্য পৃথক ধারা রয়েছে এবং এই আইন অনুযায়ী ১৮ বছরের কম বয়সি যে-কোনো শিশুর অশ্লীল রেকর্ডিং ফিল্মিংয়ের জন্য অপরাধীর ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং লাখ টাকা জরিমানা হবে তবে রিভেঞ্জ পর্নো নিয়ে এই আইনে স্পষ্ট কোনো কিছু নেই ডিপফেক প্রযুক্তি নিয়ে আইনের সংশ্লিষ্ট কোনো বিধান না থাকায় অপরাধীরা সহজেই ছাড়া পেয়ে যেতে পারে

তাহলে এর সমাধানের উপায় কী

বৃহত্তম সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট ডিপফেক শনাক্ত করতে বিশেষ একটি টুল বা প্রোগ্রাম তৈরি করছে সফটওয়্যারটি ছবি বা ভিডিও বিশ্লেষণ করবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার করেই তবে এখনো স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ প্রক্রিয়াটি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে তাই প্রযুক্তির পূর্বে গড়ে তুলতে হবে সচেতনতা এবং তৈরি করতে হবে প্রতিকারমূলক আইন অথবা প্রচলিত আইনে আনতে হবে পরিবর্তন

ডিপফেক একটি অনন্য চ্যালেঞ্জিং সমস্যা অনলাইন প্ল্যাটফরম-সম্পর্কিত আইন প্রণয়নে যথেষ্ট শূন্যস্থান থাকায় ডিপফেকের মতো বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে একে মোকাবিলা করতে হলে ব্যক্তিপর্যায়ের ডেটা সুরক্ষা আইন তৈরি করতে হবে ডিপফেক-সংক্রান্ত আইন তৈরি করতে হবে এবং প্রাইভেসি আইনকে যথাযথ গুরুত্ব সহকারে প্রণয়ন করতে হবে বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যে প্রাইভেসি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ডেটা প্রাইভেসি আইনের খসড়া তৈরির কাজ করছে যদি এই আইনে ডিপফেকের সঠিক সংজ্ঞায়ন থেকে শুরু করে এর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দিকে আলোকপাত করা হয়, তবে ডিপফেকের ভয়াবহতা থেকে ভুক্তভোগীরা রেহাই পেতে পারেন

অন্যদিকে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২-এর প্রয়োগ বিস্তার আরো দৃঢ় করতে হবে ডিজিটাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর জন্য তৈরি করতে হবে সুস্পষ্ট গাইডলাইন

ভুল তথ্যের বিস্তার এখন মহামারি রূপ ধারণ করেছে এবং এর প্রতিকারের উপায় অত্যন্ত স্বল্প তাই ডিপফেকের মতো কৃত্রিম মিডিয়া ভুল তথ্য প্রচারের জন্য শক্তিশালী বাহন হয়ে উঠেছে তাই সময়োপযোগী এবং নির্দিষ্ট আইনি পদক্ষেপের ক্ষতিকারক প্রভাব সীমিত করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হতে পারে

তথ্যসূত্র

 . দৈনিক প্রথম আলো, ১৩ জুলাই ২০১৯ এবং সেপ্টেম্বর ২০২০

 . বিবিসি বাংলা, ২২ অক্টোবর ২০২০

 . বিদেশি খ্যাতিনামা ব্লগসাইটসমূহ

 লেখক: শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি

 সৌজন্যে: আইন সালিশ কেন্দ্র (আসক)

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন