আর্থিক প্রতিষ্ঠান

শর্তসাপেক্ষে গ্রাহকের ঋণ পরিশোধের মেয়াদ বাড়ল

নিজস্ব প্রতিবেদক

ব্যাংকের গ্রাহকদের মতোই এবার আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর (এনবিএফআই) গ্রাহকদের ঋণের কিস্তি পরিশোধে ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে অপরিশোধিত ঋণের কিস্তির অর্ধেক পরিশোধ করে খেলাপি হওয়ার ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন গ্রাহকরা। গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। তবে ব্যাংকের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের অপরিশোধিত ঋণের ২০ শতাংশ পরিশোধের শর্ত দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাজার বিভাগ থেকে জারীকৃত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বছরের জুন পর্যন্ত প্রদেয় ঋণের কিস্তির ন্যূনতম ৫০ শতাংশ ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে পরিশোধ করলে ওই সময়ে ঋণ বিরূপ মানে শ্রেণীকরণ করা যাবে না। জুন পর্যন্ত প্রদেয় কিস্তির অবশিষ্ট অংশ পরবর্তী কিস্তির সঙ্গে দিতে হবে। এতে বলা হয়, ঋণ বা লিজের সুদ প্রকৃত আদায়সাপেক্ষে আয়ের খাতে দেখানো যাবে। সুদ হিসাবায়ন হবে বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী। সময় ঋণের দণ্ড সুদ অতিরিক্ত ফি, চার্জ বা কমিশন আদায় করা যাবে না।

দেশে নভেল করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি আবারো মারাত্মক আকার ধারণ করায় ঋণের কিস্তি পরিশোধের মেয়াদ আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করার দাবি উঠেছিল বিভিন্ন মহল থেকে। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএসহ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো থেকে দাবি জানিয়ে অর্থমন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছিল। ব্যবসায়ীদের দাবি পর্যালোচনা করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেই আপাতত ঋণ পরিশোধের সময়সীমা দুই মাস পেছানোর সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ২৭ জুন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি নীতি বিভাগ থেকে -সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল। তবে ওই প্রজ্ঞাপনে শুধু ব্যাংকঋণের কথা উল্লেখ থাকায় এবার পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণের বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

২০২০ সালজুড়ে ব্যাংকঋণের কিস্তি পরিশোধের বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্ত ছিলেন ব্যবসায়ীরা। ফলে কোনো অর্থ পরিশোধ না করেই ঋণগ্রহীতারা খেলাপি হওয়া থেকে নিষ্কৃতি পেয়েছিলেন। ব্যাংকের পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণগ্রহীতারাও একই সুবিধা ভোগ করেন। পরবর্তী সময়ে শর্তসাপেক্ষে ঋণ পরিশোধের সময়সীমা চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। গত ২৪ মার্চ জারীকৃত প্রজ্ঞাপনে অনাদায়ী সুদ আদায়সহ ব্যাংকঋণের কিস্তি পরিশোধের বিষয়ে রূপরেখা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংক খাতের জন্য জারীকৃত ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গ্রাহকদের কারো ২০২০ সালের সুদ বকেয়া থাকলে চলতি বছরের মার্চ থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে ছয়টি ত্রৈমাসিক কিস্তির মাধ্যমে পরিশোধ করা যাবে। একই সঙ্গে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত যে সুদ আসে, তাও ত্রৈমাসিক কিস্তির মাধ্যমে পরিশোধ করার সুযোগ দেয়া হয়। এছাড়া তলবি ঋণ চলতি বছরের মার্চ থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত আটটি ত্রৈমাসিক কিস্তিতে পরিশোধ করার সুযোগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। যেসব ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল বা চলমান ঋণের মেয়াদ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে এবং নতুন করে নবায়ন করা হয়নি, সেসব ঋণের শুধু সুদ পরিশোধ করলেই ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত খেলাপি হবে না বলে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল।

তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণগ্রহীতাদের জন্য ঢালাওভাবে ৩০ জুন পর্যন্ত সময়সীমা বাড়িয়ে দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত ২০ এপ্রিল জারীকৃত এক প্রজ্ঞাপনে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের কোনো শর্ত ছাড়াই ছয় মাস মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল। এবার বকেয়া কিস্তির ৫০ শতাংশ আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে পরিশোধসাপেক্ষে খেলাপি হওয়া থেকে গ্রাহকদের নিষ্কৃতি দেয়া হলো।

প্রসঙ্গত, বর্তমানে দেশে ৬১টি তফসিলি ব্যাংকের পাশাপাশি ৩৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সবকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৮৫ হাজার কোটি টাকা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন