আলোকপাত

কারিগরি শিক্ষার গলদ ও কিছু সুপারিশ

এম আর খায়রুল উমাম

গত ১১ ফেব্রুয়ারি জাতীয় বিল্ডিং কোড গেজেট আকারে প্রকাশ হয়েছে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর বর্তমান সরকার জাতিকে বিল্ডিং কোড উপহার দিতে সক্ষম হলো। কোডটি যথাযথ প্রয়োগ হলে দেশের অবকাঠামো নির্মাণে জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে বলে সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করে। জবাবদিহিতা দায়বদ্ধতার অভাবে দেশের সব নির্মাণ পথ হারিয়েছে। শুধু ভবন নয়, সব ধরনের নির্মাণে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা জাতির কল্যাণে জরুরি। দেশে নির্মাণ অবকাঠামো জীবনকাল না পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এখান থেকে বের হতে না পারলে উন্নয়ন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাবে না। প্রায় তিন দশক পার করতে হয়েছে কোডটিকে আলোর মুখ দেখাতে। তার পরও জাতীয় বিল্ডিং কোড গেজেট আকারে প্রকাশের জন্য সরকারকে সাধুবাদ।

বাংলাদেশ জাতীয় বিল্ডিং কোডে আছে, নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই দেশ জাতির স্বার্থে গুণগত মানসম্মত নির্মাণ নিশ্চিত করতে নিবেদিত হবেন। একটা রূপরেখার অভাবে যেসব সমস্যা নির্মাণে ছিল, তা দূর হবে। জাতি নির্মিত অবকাঠামোর জীবনকাল পাবে। দেশের বর্তমান পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনায় সাধারণ মানুষ যাতে ন্যূনতম স্তরের অবকাঠামো নির্মাণে অন্তত আইনপ্রণেতাদের প্রতি আস্থা রাখতে পারে। স্বাধীন দেশ বিবেচনায় সর্বোচ্চ স্তরের অবকাঠামো নির্মাণ আপাতত স্থগিতই রেখে দিক।

বাংলাদেশ জাতীয় বিল্ডিং কোডে চার টাইপের ভবন চিহ্নিত করা হয়েছে। টাইপ-  দোতলা পর্যন্ত, টাইপ- পাঁচতলা পর্যন্ত, টাইপ- দশতলা পর্যন্ত এবং টাইপ- যেকোনো উচ্চতার ভবন। কোডে আরো আছে, ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা দশতলার ওপরের উচ্চতার ভবন নির্মাণে তদারক করতে পারবেন না। ডিপ্লোমা স্থপতিরা পাঁচতলার বেশি ভবনের ডিজাইন করতে পারবেন না। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন জাগে, আমাদের দেশের সব বড় প্রকল্প বিদেশীদের তত্ত্বাবধানে হয়ে থাকে, তবে কি এখানেও তেমন কিছু ব্যবস্থা করা হবে? বিদেশীরা ভবন নির্মাণে এলে খুব খারাপ হবে না। দেশের অনেক খাতে এখনো অনেক বিদেশী কাজ করছেন। সুখের কথা হলো, এখন পর্যন্ত দেশে যে উচ্চতারই ভবন নির্মাণ করা হোক না কেন, তার জন্য বিদেশীনির্ভর হতে হয়নি।

জাতীয় বিল্ডিং কোডে ভবন নির্মাণে ডিজাইন তদারকিকে পৃথক কাজ হিসেবে দেখানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের আরো অনেক কাজ করতে হয়। শুধু নকশা করলে হয় না, তার জন্য পরিকল্পনা করতে হয় এবং নকশাকে যুগোপযোগী রাখার জন্য গবেষণা করতে হয়। আবার শুধু তদারকি নয়, নকশাকে আত্মস্থ করে দক্ষতার সঙ্গে তার বাস্তবায়ন করতে এবং আগামীতে তা রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়। সার্বিক সমন্বয় করে একটা গুচ্ছ দায়িত্ব পালনের পর সুন্দর একটি অবকাঠামো সাধারণ মানুষের চোখের সামনে হাজির হয়। আমাদের সংসদ ভবন, বঙ্গভবন, সোনা মসজিদ, কান্তজীর মন্দির, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ, যমুনা সেতু এবং বর্তমানের পদ্মা সেতু সাধারণ মানুষের নয়নকে সার্থক করে। কিন্তু এসব নির্মাণের মধ্যে কত মানুষের স্বপ্ন আর শ্রম জড়িত, তা অনেকেই জানেন না বা জানার চেষ্টাও করেন না।

আমাদের দেশে কারিগরি কর্মক্ষেত্রে দুই ধরনের প্রকৌশলী নিয়োজিত, যা জাতীয় বিল্ডিং কোডেও দেখা যায়। এক শ্রেণী উচ্চমাধ্যমিক পাস করে চার বছরের পেশাগত শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং অন্য শ্রেণী মাধ্যমিক পাস করার পর চার বছরের পেশাগত শিক্ষা গ্রহণ করেন। কোড অনুসারে দুই প্রকৌশলীদেরই কাজের ক্ষেত্র একই। শুধু পার্থক্য রাখা হয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করা ব্যক্তিরা যেকোনো শিক্ষার উচ্চতার ভবন এবং মাধ্যমিক পাস করা ব্যক্তিরা দশতলা পর্যন্ত ভবন তদারক করতে পারবেন। তদারকি যখন কাজ তখন শিক্ষা দিয়ে বিভাজন কতটা যৌক্তিক, তা ভেবে দেখা প্রয়োজন। সাধারণ মানুষ জানে, যেকোনো শিক্ষারই লক্ষ্য উদ্দেশ্য পৃথক। একই লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়ে শিক্ষাক্রম পরিচালনা বিশ্বে সর্বক্ষেত্রে রোল মডেল হওয়ার প্রচেষ্টারত বাংলাদেশেই সম্ভব। এক শিক্ষকতা বাদে প্রতিটা খাতে অভিজ্ঞতাই মানুষকে ধাপে ধাপে এগিয়ে নিয়ে যাবে সংস্কৃতিই স্বাভাবিকভাবে চলমান। কারিগরি কর্মক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা মূল্যহীন। দুই বছরের উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সব অভিজ্ঞতাকে পেছনে ফেলে দিয়েছে।

জাতীয় শিক্ষানীতির নবম অধ্যায়ে প্রকৌশলী শিক্ষার কৌশলের নম্বরে বলা আছে, ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের মেধা যোগ্যতা অনুযায়ী দেশের প্রকৌশল বিদ্যায়তনে যথা প্রকৌশল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চতর শিক্ষার জন্য ভর্তি যথাযোগ্য ক্রেডিট সমন্বয়ের মাধ্যমে হতে পারবে। শিক্ষানীতির সুপারিশই স্পষ্ট করে দেয় দুই শিক্ষার মধ্যে একটা মিল আছে, যার জন্য ক্রেডিট সমন্বয়ের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ বাধাহীন। মেধা আর যোগ্যতার সঙ্গে যদি দেশের প্রয়োজনকে বিবেচনা করা হয়, তাহলে বৃত্তিমূলক শিক্ষা-কারিগরি শিক্ষা-প্রকৌশল শিক্ষাকে এক টানেলে আনতে সমস্যা কোথায়? এতে দেশের মেধাবী সন্তানরা যোগ্যতার পরিচয় রেখে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করবেন। বিষয়টি অনার্স কোর্সের মতো হবে। দেশ জাতির কল্যাণে কারিগরি প্রকৌশল শিক্ষা একমুখী হওয়াই বাঞ্ছনীয়।

কোনো প্রকল্পের সুষ্ঠু, সুন্দর সফল বাস্তবায়নে তিন ধরনের জনশক্তির একটা টিমের প্রয়োজন। বৃত্তিমূলক শিক্ষা দক্ষ জনশক্তির সরবরাহ করে, কারিগরি শিক্ষা মধ্যম স্তরের জনশক্তি সরবরাহ করে আর প্রকৌশল শিক্ষা উচ্চস্তরের জনশক্তি সরবরাহ করে। উচ্চস্তরের জনশক্তি পরিকল্পনা নকশা গবেষণার মধ্য দিয়ে প্রকল্প তৈরি করে। মধ্যম স্তরের জনশক্তি প্রস্তাবিত নকশার বাস্তব রূপ দিতে দক্ষ জনশক্তির তদারক করে। সভ্য দেশে এভাবেই প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়ে থাকে। শিক্ষাভেদে ভিন্ন ভিন্ন দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়া আর কি। কিন্তু আমাদের জাতীয় বিল্ডিং কোড হঠাৎ করে ঘোষণা করে দিল যে মধ্যম স্তরের জনশক্তি হাঁটুর ওপর চিকিৎসা করতে পারবে না। তদারকির জন্য যাদের শিক্ষা দেয়া হলো, তারা হাঁটুর ওপর তদারক করতে পারবে না। কী বিচিত্র আইন! অভিজ্ঞতার একটা টাইমবারই যেখানে শোভন, সেখানে উচ্চস্তরের জনশক্তিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন কর্তৃক ২০১৮ সালে প্রকাশিত ৪৫তম বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, বুয়েটে শিক্ষার্থীপ্রতি বার্ষিক সরকারি ব্যয় লাখ ৩২ হাজার ২৪৩ টাকা। তাহলে শিক্ষার্থীপ্রতি এই অর্থের এক-চতুর্থাংশ ব্যয় না করা মধ্যম স্তরের জনশক্তির কাজ কেন উচ্চস্তরের জনশক্তির হাতে অর্পণ করা হলো? এই কেনর উত্তর সুখকর নয়।

আমাদের দেশ জাতির প্রতি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবদান বিবেচনা করলেই এই কেনর উত্তর কিছুটা পাওয়া যাবে। ধোলাই খালে যেকোনো যন্ত্রের নমুনা দিলে অবলীলায় তারা তা হুবহু তৈরি করে দেয়। অনক্ষর শ্রমিকদের পক্ষে যা সম্ভব, তা দেশের মেধাবী সন্তানদের কাছে আশা করা যায় না। মেধাবী সন্তানরা বঙ্গবন্ধু সেতু দেখে পদ্মা সেতু তৈরি করতে পারে না। পরিবহন খাতে মেধাবীদের অবদান মিশুক, যা ব্যবহার করতে সাধারণ মানুষ ভয় পেত; ফলে একসময় তা হারিয়ে যায়। অথচ গ্রামবাংলার পরিবহন নসিমন-করিমন-আলম সাধু আজ সারা দেশ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। গ্রামবাংলার অর্থনীতিতে অবদান রাখছে, মানুষের সেবা দিয়ে চলেছে। এমন শত-সহস্র  উদাহরণের দেশ বাংলাদেশ। অনক্ষর মানুষদের কাজের স্বীকৃতি না দিয়ে তাদের বিরুদ্ধাচরণ করা হয়েছে, সহযোগিতার হাত সম্প্রসারণ করা হয়নি। অথচ গবেষণার মাধ্যমে এসব কাজের মূল্যায়ন করে তা বিজ্ঞানসম্মত যুগোপযোগী করা সম্ভব ছিল। শিক্ষানীতিতে প্রকৌশল শিক্ষার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণের স্বপ্ন শুধু বক্তব্যে সীমাবদ্ধ থাকত না; বরং নিরন্তর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে মেধাবী সন্তানদের দিয়ে দেশের ক্ষয়প্রাপ্ত শিল্প-কারখানাগুলো রক্ষায় নিবেদিত হওয়া যেত। সব ধরনের অবকাঠামোয় জীবনকাল নিশ্চিত করা যেত। শক্তিকে প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণে নিয়োজিত করা যেত, দারিদ্র্য দূরীকরণে উদ্যোগী করা যেত, সমাজ অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নে অবদান রাখার কার্যক্রম পরিচালনা করা যেত। কিন্তু তা না করে তাদের মধ্যম স্তরের কারিগরি জনশক্তির কাজে নিবেদিত করা হলো। দেশ জাতির কল্যাণকে উপেক্ষা করা হলো। বিপুল ব্যয়ে গড়ে তোলা দেশের মেধাবী সন্তানদের যোগ্যতম দায়িত্ব পালন না করিয়ে নিম্নপর্যায়ের দায়িত্ব দেয়া হলো। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হলো জাতি। শিক্ষা অনুযায়ী কর্মের বিভাজন আজকালের দাবি। যারা যে শিক্ষা গ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছেন, তারা সেই কাজটা করুক। যারা ডিজাইন করার শিক্ষা গ্রহণ করেছেন, তারা ডিজাইন করুক। তাতেই দেশের কল্যাণ, তাদের তদারক করার প্রয়োজন নেই। কারিগরি কর্মক্ষেত্রে ডিজাইন তদারকি ব্যবস্থাকে পৃথক করা হোক।

মহাজোট সরকার হঠাৎ করেই কারিগরি শিক্ষার ব্যাপক সম্প্রসারণে সচেতন হয়ে উঠেছে। হাটবাজারে সর্বত্র কারিগরি শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে। দেশে একটা প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য যেসব বিধিবিধান মান্য করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে, এই কারিগরি শিক্ষার জন্য তাও মানতে হয় না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, দেশের ১৬ কোটি মানুষের ৩২ কোটি হাতকে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে বিদেশে রফতানি যাতে করতে পারে, শাসকশ্রেণীর জন্য সে উদ্যোগই দরকার। ব্যবসায়ীরা সনদ বিক্রির সব রকম ব্যবস্থা করে সনদের দোকান খুলে বসে আছেন। জাতির প্রয়োজনে শিক্ষা, দক্ষতা, মেধা, বয়স কোনো ফ্যাক্টর নয়, শুধু সনদ হলেই হবে। জনশক্তি দিয়ে দেশকে বিশ্বের রোল মডেল করে ফেলা হবে। দেশের প্রয়োজন কোনো বিবেচনায়ই নেই। একের পর এক বৃহৎ শিল্প-কারখানা বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে, বড় প্রকল্পগুলো বিদেশী কারিগরি সহায়তানির্ভর হয়ে পড়ছে। শুধু সমন্বয়হীনভাবে কারিগরি শিক্ষার সম্প্রসারণ সনদ প্রাপ্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাঠাগারে বই নেই, নোটবইয়ে ভর্তি। কারখানায় আদিকালের মেশিন আছে কিন্তু কাঁচামাল নেই, শিক্ষকের সংকট নিয়ে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলমান থাকলেও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য একটা ভাড়া বাড়ি দোতলায় তিনটা রুমই যথেষ্ট। সঙ্গে আছে সনদ প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সামর্থ্য। মানবসম্পদ পরিকল্পনা ছাড়া এমন রূপে জনশক্তি তৈরি জাতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না।

বর্তমান জনকল্যাণের সরকার সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় গতিশীল পরিবর্তন আনতে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলায় নিবেদিত। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে প্রাযুক্তিক কর্মীর প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যাবে না, তবে সেই কর্মীকে অতি অবশ্যই মানসম্মত হতে হবে। মানসম্মত কর্মীরাই মানসম্মত কাজের নিশ্চয়তা দিতে সক্ষম। যুগোপযোগী মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষিত শিক্ষকই চাহিদা মোতাবেক জনশক্তি তৈরি করতে পারেন। তাই শুধু জাতীয় বিল্ডিং কোড প্রণয়ন করার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে না। কারিগরি কর্মক্ষেত্রে জবাবদিহিতা দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে কারিগরি প্রকৌশল শিক্ষাকে একমুখী এবং ডিজাইন তদারকিকে পৃথক করে শিক্ষা অনুযায়ী কর্মবিভাজন নিশ্চিত করা জরুরি। 

 

এম আর খায়রুল উমাম: প্রাবন্ধিক

সাবেক সভাপতি, ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি)

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন