কোরবানির ঈদ সামনে রেখে নড়াইলে বছর দশেক আগে থেকে দেশীয় পদ্ধতিতে গবাদিপশু মোটাতাজা করেন খামারিরা।
স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের এসব গরু বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করেন তারা।
গত বছর কোরবানি ঈদে জেলার স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে অন্তত ১০ হাজার গরু ও ছাগল বিভিন্ন জেলায় রফতানি করেছেন জেলার খামারিরা।
গত বছর ভারত থেকে নড়াইলে কোরবানির হাটে পশু কম আমদানি করায় দেশী গরুর চাহিদা ছিল বেশি।
খামারিরা লাভও করেছিলেন ভালো।
তাই এ বছরও কোরবানির ঈদ সামনে রেখে জেলার চাহিদার তুলনায় ১২ হাজারের বেশি দেশী গরু ও ছাগল মোটাতাজা করেছেন খামারিরা।
তবে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খামারিরা।
জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, বছর দশেক আগে থেকে নড়াইলের কৃষক ও খামারিরা কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করেন।
এ বছর জেলার ৪ হাজার ১০০ জন খামারি ৩৪ হাজার ৮৫৮টি গরু, ছাগল ও ভেড়া মোটাতাজা করেছেন।
যার মধ্যে ২০ হাজার ৭৯২টি দেশী গরু, ১৩ হাজার ৯৭৩টি ছাগল ও ৯৩টি ভেড়া রয়েছে।
গত বছরের তুলনায় ৫ হাজার ৩২৬টি পশু বেশি মোটাতাজা করেছেন জেলার চাষীরা।
এ বছরও তিনটি উপজেলার মধ্যে নড়াইল সদরে বেশি পশু মোটাতাজা করা হয়েছে।
এ বছর জেলার খামারিরা যে পরিমাণ পশু মোটাতাজা করেছেন, স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে অন্তত ১২ হাজার পশু (গরু ও ছাগল) বিভিন্ন জেলায় জোগান দিতে পারবেন।
স্থানীয় খামারিরা জানান, গত বছর ভারত থেকে গরু আমদানি কম করায় স্থানীয় গরুর চাহিদা ছিল বেশি।
তাই জেলার গরু খামারিরা ভালো লাভ করেছেন।
প্রথম ঢেউয়ের পর করোনার প্রকোপ অনেকটা কমে যাওয়ায় চলতি বছর জেলার অনেক খামারি গতবারের তুলনায় আরো বেশি গরু মোটাতাজা করেছেন।
অনেক নতুন খামার গড়ে উঠেছে।
খামারি ছাড়াও জেলার সাধারণ কৃষকরা বাড়তি ইনকামের জন্য বাড়িতে একটি-দুটি করে গরু মোটাতাজা করছেন।
শেষ সময়ে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসায় এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন জেলার খামারি ও কৃষকরা।
মরিচপাশা গ্রামের খামারি মুজিবুলের দাবি সারা দেশে লকডাউন থাকলেও ঈদকে সামনে রেখে কোরবানি পশু বহনকারী যানবাহন যেন এর আওতায় না থাকে।
আরেক খামারি জিএম খাজা মিয়া বলেন, গত বছর ভারত থেকে গরু কম আসায় কৃষক ও খামারিরা লাভবান হয়েছেন সেই আশায় চলতি বছরও তার মতো শত শত কৃষক লাভের আশায় গরু মোটাতাজা করেছেন।
তার দাবি, চলতি বছরও যেন ভারত থেকে কোরবানি উপলক্ষে গরু আমদানি না করা হয়।
মাইজপাড়া হাটের ইজারাদার বাবুল আক্তার জানান, প্রতি বছর কোরবানির ঈদে বিভিন্ন জেলা থেকে গরু কিনতে নড়াইলে আসেন ব্যবসায়ীরা।
আসছে ঈদে করোনার কারণে অন্য কোনো জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা আসবেন কিনা জানি না।
বাইরের জেলা থেকে বড় ব্যবসায়ীরা না এলে হাটে বেচাকেনা জমবে না।
এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন খামারি, কৃষক, ইজারাদার, ব্যবসায়ীসহ সবাই।
তার দাবি, লকডাউনের মধ্যে কোরবানির পশুবাহী ট্রাকসহ সব যানবাহন অবাধে চলতে দেয়া হোক।
স্থানীয় মৌসুম গরু ব্যবসায়ী মনি মিয়া জানান, করোনার কারণে যদি ঈদ মৌসুমে গরু ব্যবসায়ীদের লকডাউন দিয়ে আটকে দেয়া হয়, তাহলে জেলার অসংখ্য খামারি, কৃষক ও ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
নড়াইল জেলার তিনটি উপজেলায় মোট ১১টি হাটে গরু বেচাকেনা হয়।
ঈদকে সামনে রেখে আরো কয়েক জায়গায় অস্থায়ী গরুর হাট বসে।
স্থানীয় গরুর মালিকরা এসব হাটে গরু বিক্রি করেন।
১১টি হাটের মধ্যে জেলায় মোট চারটি বড় হাট রয়েছে, মাইজপাড়া গরুর হাট, লোহাগড়া গরুরহাট, শিয়েরবর গরুরহাট এবং পুরুলিয়া গরুরহাট।
বর্তমানে এ পেশার সঙ্গে জড়িত রয়েছে জেলার প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ (খামারি, কৃষক ও ব্যাপারী)।
নড়াইল জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মারুফ হাসান জানান, বছর দশেক আগে নড়াইলের চাষীরা অল্প পরিসরে গরু মোটাতাজা করতেন।
সে সময় সরকার বিদেশ থেকে ঈদের সময় গরু আমদানি করায় জেলার অনেক খামারি ও কৃষকরা গরুর ন্যায্য মূল্য না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
তিন-চার বছর সরকার বিদেশ থেকে গরু আমদানি না করায় জেলার স্থানীয় কৃষকের গরুর চাহিদা ছিল অনেক বেশি।
স্থানীয় খামারি ও কৃষকরা লাভবান হয়েছেন বেশ।
তাই এ বছরও অনেক কৃষক গরু মোটাতাজা করেছেন।
এ বছর করোনার কারণে কোরবানির চাহিদা কিছুটা কম থাকবে।
তিনি আরো বলেন, গত বছর করোনা সংকটের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা বিবেচনা করে ‘নড়াইল কোরবানির হাট’
নামে মোবাইল অ্যাপ ও ওয়েবসাইটেরও উদ্বোধন করা হয়েছিল এবং জেলার খামারি, কৃষক এবং ক্রেতা এ হাটের কারণে উপকৃত হয়েছিলেন।
চলতি বছরও জেলার কৃষক ও খামারিদের কথা চিন্তা করে এমন পদক্ষেপ নেয়া হতে পারে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, করোনার দুর্যোগময় মুহূর্তে কোরবানির পশু ঘরে থেকেই মোবাইল অ্যাপ ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কীভাবে সহজে বেচাকেনা করা যাবে এ বিষয়ে দ্রুতই একটি মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।