দেশের পুঁজিবাজারে গতকাল লেনদেন শুরুর প্রথম ২ ঘণ্টায় সূচকের পতন ঘটে।
বাকি সময় শেয়ার কেনার চাপে উত্থানের মাধ্যমে লেনদেন শেষ হয় পুঁজিবাজারে।
তবে গতকাল শেয়ার বিক্রির চাপে সাধারণ বীমা খাতে বেশিরভাগ শেয়ারের দর পতন হয়।
গতকাল লেনদেনে শীর্ষে থাকা সাধারণ বীমা খাতের শেয়ারে দ্বিতীয় দিনের মতো পতন হয়েছে।
গতকাল বীমা খাতের ৫০টি শেয়ারের মধ্যে দর বেড়েছে ৭টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে একটি।
বাকী সব শেয়ারের দরে পতন হয়েছে।
এদিকে গতকাল প্রধান স্টক এক্সচেঞ্জের সব সূচক বাড়লেও লেনদেন এবং বেশির ভাগ কোম্পানি ও ফান্ডের বাজারদর কমেছে।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, গতকাল লেনদেন শুরুর প্রথম দিকে বিনিয়োগকারীদের মুনাফা তুলে নেয়ার চাপে পতন ঘটে বাজারে।
তবে পরে আবার বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনার চাপ বাড়লে সূচকের উত্থান ঘটে।
গতকাল লেনদেনের শীর্ষে সাধারণ বীমা খাত থাকলেও খাতটির শেয়ারদরে পতন ঘটেছে।
এর প্রধাণ কারণ খাতটি থেকে মুনাফা তুলে নেয়ার বেশি প্রবণতা ছিল।
এ কারণে লেনদেন বেশি হলেও দরপতন হয়েছে।
গত দুদিন আলোচ্য খাত থেকে বড় মুনাফা তুলে নিচ্ছে বাজার কারসাজি চক্র।
তারা তিন মাসের বেশি সময় ধরে বীমা খাতের শেয়ার কারসাজি করে অযৌক্তিকভাবে দর বাড়িয়ে বাজার থেকে মুনাফা সংগ্রহ করছে।
কারসাজি চক্রের সদস্যরা দর বাড়িয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ায় এবং অযৌক্তিক দরে সেই শেয়ার বিক্রি করে।
এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গতকাল লেনদেন শুরুর পর থেকে সূচক ঊর্ধ্বমুখী ছিল।
তার কিছু সময় পরই সূচকের পতন ঘটে।
পরে আবার ঊর্ধ্বমুখী অবস্থায় ফেরে সূচক।
সারা দিন উত্থান-পতনের মাধ্যমে দিনশেষে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী অবস্থায় লেনদেন শেষ হয়।
গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৬ দশমিক ৬৫ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৬৯ দশমিক ৪০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, যা আগের কার্যদিবসে ছিল ৬ হাজার ৫২ দশমিক ৭৫ পয়েন্ট।
গতকাল সূচকের উত্থানে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালস, ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস, ফরচুন সুজ, রানার অটোমোবাইলস, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, ব্র্যাক ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ও বিএসআরএম লিমিটেডের।
এদিকে ডিএসইর শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস গতকাল দিনশেষে ৫ দশমিক ৬৬ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ২৯৬ দশমিক ৫৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে, যা আগের দিন ছিল ১ হাজার ২৯০ দশমিক ৯৩ পয়েন্ট।
ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ দিনের ব্যবধানে ১০ দশমিক ২৩ পয়েন্ট বেড়ে গতকাল ২ হাজার ২০৭ দশমিক ২৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, আগের দিনশেষে যা ছিল ২ হাজার ১৯৭ দশমিক শূন্য ৬ পয়েন্টে।
গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৮৩৫ কোটি ২৫ লাখ ৩৯ হাজার টাকা।
আগের কর্যদিবসে লেনদেন হয় ১ হাজার ৮৪৭ কোটি ১৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৭৩টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ডের মধ্যে দিনশেষে দর বেড়েছে ১৫৬টির, কমেছে ১৭৯টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৩৮টি সিকিউরিটিজের বাজারদর।
খাতভিত্তিক লেনদেনচিত্রে দেখা যায়, গতকাল ডিএসইর মোট লেনদেনের ২৫ দশমিক ৯১ শতাংশ দখলে নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে সাধারণ বীমা খাত।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৪ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ দখলে নিয়েছে বিবিধ খাত।
৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে প্রকৌশল খাত।
৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে চতুর্থ অবস্থানে ছিল ওষুধ খাত।
আর ৮ দশমিক ১০ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে বস্ত্র খাত।
গতকাল ডিএসইতে লেনদেনের ভিত্তিতে শীর্ষ সিকিউরিটিজ ছিল পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স, বেক্সিমকো লিমিটেড, ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালস, ন্যাশনাল ফিড মিলস, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, ফরচুন সুজ, সামিট পাওয়ার, কনফিডেন্স সিমেন্ট, লুব-রেফ (বাংলাদেশ) ও এনআরবিসি ব্যাংক লিমিটেড।
গতকাল এক্সচেঞ্জটিতে দরবৃদ্ধির শীর্ষে থাকা কোম্পানিগুলো হচ্ছে ন্যাশনাল ফিড মিলস, সালভো কেমিক্যাল, ইনডেক্স এগ্রো, ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস, আমান ফিড, ফরচুন সুজ, সাফকো স্পিনিং, খান ব্রাদার্স, পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ, রানার অটোমোবাইলস ও এনআরবিসি ব্যাংক।
সিএসইতে গতকাল সিএসসিএক্স সূচক দিনের ব্যবধানে ৭ দশমিক ২৫ পয়েন্ট বেড়ে ১০ হাজার ৫৮৩ দশমিক ৪৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
আগের কার্যদিবসে সূচকটির অবস্থান ছিল ১০ হাজার ৫৭৬ দশমিক ২০ পয়েন্টে।
এদিন এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেন হওয়া ৩০৪টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১১৭টির, কমেছে ১৫১টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৩৬টির বাজারদর।
গতকাল সিএসইতে মোট ১৫৩ কোটি ৮১ লাখ ৯৮ হাজার ৬৭৫ টাকার সিকিউরিটিজ হাতবদল হয়েছে, আগের কার্যদিবসে যা ছিল ১০৪ কোটি ৯৫ লাখ ৯৩ হাজার ৯২৮ টাকা।
