সাম্প্রতিককালে মানবসভ্যতার উন্নয়নের ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশের ক্রমাবনতি সব প্রাণের অস্তিত্বের জন্য মারাত্মক হুমকি। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও শিল্পায়ন, প্রাকৃতিক সম্পদের যথেচ্ছ ব্যবহার, পরিবেশ সম্পর্কিত অসচেতনতা, প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন ও সুষ্ঠু নজরদারির অভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন নগর-গ্রাম ও আঞ্চলিক এলাকায় বিপন্ন হচ্ছে প্রাণ-প্রকৃতি এবং ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশ ধ্বংস করে উন্নয়ন টেকসই হতে পারে না, সুষ্ঠু পরিকল্পনা থাকলে ও রাজনৈতিক দৃঢ়তা থাকলে পরিবেশ-প্রতিবেশকে সমুন্নত রেখে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা সম্ভব।
বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২১ উপলক্ষে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) উদ্যোগে গতকাল অনলাইন প্লাটফর্মে ‘বাস্তুসংস্থান পুনরুদ্ধারে পরিকল্পনা’ শীর্ষক পরিকল্পনা সংলাপে বিশেষজ্ঞরা এ কথা বলেন।
বিআইপির সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধারে পরিকল্পনা শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সমগ্র বাংলাদেশের বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত পরিবেশগত বিপর্যয়ের প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
বিআইপির গবেষণায় জীববৈচিত্র্য ও বাস্তুসংস্থান ধ্বংসের কারণ বিশ্লেষণের জন্য পরিবেশগত বিপর্যয়ের ১০০টি কেস স্টাডি সমীক্ষা করা হয়েছে, যার মধ্যে পানিদূষণ (৪২), বায়ুদূষণ (২৯), মাটিদূষণ, বৃক্ষনিধন (১৭), প্লাস্টিক দূষণ (৮) ও অন্যান্য দূষণ (৮) নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়।
পরিবেশগত বিপর্যয়ের ঘটনাগুলো পর্যালোচনার মাধ্যমে বিআইপির সমীক্ষায় পরিলক্ষিত হয় যে, পরিবেশ ও প্রতিবেশ দূষণের শতকরা ৭০ ভাগ ঘটনার ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরের দায় আছে, শতকরা ৫০ ভাগ ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসনের দায় পরিলক্ষিত হয়। অনুরূপভাবে এ ধরনের পরিবেশ দূষণের ঘটনা বিশ্লেষণে নগর কর্তৃপক্ষ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনে ৫০ শতাংশ, শিল্প-কারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ৫০ শতাংশ, বন বিভাগ ৩০ শতাংশ, সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব ৬০ শতাংশ ও জনগণের উদাসীনতার ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রেই দায় রয়েছে।
বিআইপির সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ বলেন, পরিবেশের প্রতি আমাদের সংবেদনশীল হতে হবে এবং পরিবেশের প্রতি যত্নশীল থেকে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালাতে হবে। উন্নয়নসংক্রান্ত সব নীতিমালায় পরিবেশের বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে এবং পরিবেশ নিয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না।
খুলনা সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবির-উল-জব্বার বাস্তুসংস্থান ও পরিবেশ রক্ষায় বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করেন। ঢাকা উত্তর সিটির প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. মাকসুদ হাশেম বলেন, পরিবেশ রক্ষায় গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ব্যর্থতার মূলে রয়েছে সমন্বয়হীনতা ও পরিকল্পনাকে বুঝতে না পারা।
রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আজমেরী আশরাফী, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মো. মঈনুল, নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর, কক্সবাজারের নাজিম উদ্দীন, লাকসাম পৌরসভার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, রংপুর সিটি করপোরেশনের মো. নজরুল ইসলাম, খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আবু সাঈদ, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তামান্না বিনতে রহমান, সিলেট সিটি করপোরেশনের তানভীর রহমান সেমিনারে বক্তব্য রাখেন।
পরিশেষে সংলাপে পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষায় বিআইপির পক্ষ থেকে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়।