ডিসিসিআইয়ের ওয়েবিনারে বক্তারা

শিল্প খাতে জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিতে গ্যাস অনুসন্ধান বাড়াতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

২০২৬ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে চায় সরকার লক্ষ্য অর্জনে শিল্প খাতে চাহিদামতো জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিতের কোনো বিকল্প নেই তবে শিল্প খাতে চাহিদামাফিক জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণে বেশ চ্যালেঞ্জ রয়েছে এজন্য প্রাকৃতিক গ্যাসের অনুসন্ধান বাড়াতে হবে পাশাপাশি বিকল্প জ্বালানি হিসেবে এলপিজি এলএনজি আমদানি এবং উৎপাদনের ওপর জোর দিতে হবে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত এক ওয়েবিনার থেকে এসব কথা বলেন বক্তারা

বাংলাদেশের শিল্প খাতের জ্বালানি উৎসের ভবিষ্যৎ: এলপিজি এবং এলএনজি শীর্ষক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন জ্বালানি খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য (গ্যাস) মো. মকবুল--ইলাহী চৌধুরী ওয়েবিনারের স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী জ্বালানি বিশেষজ্ঞ খন্দকার সালেক সুফী

নির্ধারিত আলোচনায় অংশ নেন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান, বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান আমের আলী হোসেন কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম প্রমুখ

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব বলেন, দেশে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের টার্মিনাল নির্মাণ দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানো গেলে দাম কমানো সম্ভব বর্তমানে ছোট জাহাজে এলপিজি আমদানি করায় খরচ বাড়ছে তবে মাতারবাড়ীতে এলপিজি টার্মিনালের কার্যক্রম চালু হলে খরচ প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমে যাবে

দেশীয় শিল্প খাতে এলপিজির ব্যবহার এখনো অনেক কম বলে জানান সচিব তবে তিনি বলেন, এলপিজি এলএনজির টার্মিনাল স্থাপন এবং স্থানীয় উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে দাম কমানো সম্ভব ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১০ লাখ টন এলপিজি আমদানি হয়েছিল, যার মধ্যে শতাংশ ব্যবহার হয়েছেএমন তথ্য উল্লেখ করেন মো. আনিছুর রহমান সময় তিনি দেশে নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, সরকার গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে জকিগঞ্জে সর্বশেষ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে আশা করা যাচ্ছে, সেখান থেকে দীর্ঘসময় ধরে গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব হবে এর জন্য প্রায় ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি পাইপলাইন স্থাপন করতে হবে করোনা মহামারীকালীন সময়ও ১০০ মিলিয়ন কিউবিক ফুট গ্যাসজাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত করা হয়েছে এছাড়া বাপেক্সের মাধ্যমে অনুসন্ধান কার্যক্রম চালানো অব্যাহত রয়েছে

দেশে গ্যাসের মজুদ দ্রুত ফুরিয়ে আসছে বলে উল্লেখ করেন মকবুল--ইলাহী চৌধুরী তিনি বলেন, আমাদের আর ছয় টিসিএফ গ্যাস মজুদ রয়েছে গত ২০ বছরে আমরা যে পরিমাণ গ্যাস তুলেছি, তার আংশিকও আমরা অনুসন্ধান করতে পারিনি

তিনি আরো বলেন, বর্তমানে দেশে যে পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে তার ৭৪ শতাংশ দেশীয় উৎস থেকে উত্তোলন করা হচ্ছে বাকি ২৬ শতাংশ এলএনজি আমদানি করে ঘাটতি মেটানো হচ্ছে দিনে দিনে যে পরিমাণ আমদানিনির্ভর হয়ে পড়ছি, তাতে আগামীতে আমদানীকৃত এলএনজি দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়বে ফলে সংকট সমাধানে অনুসন্ধানের কোনো বিকল্প নেই

স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, গত পাঁচ দশকে শিল্প খাতের গতিধারা চলমান রাখতে জ্বালানির অন্যতম জোগানদাতা হিসেবে ভূমিকা রাখছে প্রাকৃতিক গ্যাস তবে আমাদের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের সম্প্রসারণ হচ্ছে ফলে জ্বালানির চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে কারণে প্রায়ই শিল্প খাতে জ্বালানি সংকট দেখা যাচ্ছে

বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদার শতাংশ এলপিজির মাধ্যমে পূরণ করা হয় উল্লেখ করে ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, প্রান্তিক পর্যায়ে গৃহস্থালি শিল্প খাতে এলপিজি এবং এলএনজির চাহিদার বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে স্টোরেজ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে এজন্য তিনি দ্রুততার সঙ্গে এলপিজি এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান পাশাপাশি খাতের সার্বিক উন্নয়নে একটি সমন্বিত টেকসই কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নে জোরারোপ করেন

ওয়েবিনারে দেশে তৈরি পোশাক শিল্পে গ্যাসের ব্যবহার-প্রয়োজনীয়তা শিল্পের প্রসারসহ খাতসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান তিনি বলেন, সরকার ঘোষিত ২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে শিল্প খাতের চাহিদামতো জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই

মূল প্রবন্ধে খন্দকার সালেক সুফী বলেন, বাংলাদেশের শিল্প খাতের ভবিষ্যৎ জ্বালানি হলো এলপিজি এলএনজি শিল্প খাতে প্রাথমিক জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিতকল্পে আমাদের প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহারের যৌক্তিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে গ্যাস অনুসন্ধানে বর্তমানে বাংলাদেশের গৃহীত পদক্ষেপগুলো যুগোপযোগী নয় মন্তব্য করেন তিনি

আমের আলী হোসেন বলেন, জ্বালানির জন্য শুধু একটি উৎসের ওপর নির্ভরশীল হওয়া উচিত নয় সেই লক্ষ্যে বিভিন্ন খাত হতে জ্বালানি উৎপাদন জ্বালানির বহুমুখীকরণে আরো বেশি গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন

অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, জ্বালানির দাম নির্ধারণের বিষয়ে সবাইকে আরো প্রতিযোগী সক্ষম হতে হবে এজন্য ভোক্তা পর্যায়ে জ্বালানি মূল্যের যৌক্তিকীকরণ ক্ষেত্র বিশেষে মূল্য হ্রাসের আহ্বান জানান তিনি পাশাপাশি ভবিষ্যৎ শিল্পায়নের স্বার্থে প্রাকৃতিক গ্যাসকে আরো বেশি প্রধান্য দেয়া প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেন অধ্যাপক শামসুল আলম

ওয়েবিনারে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটির সহকারী অধ্যাপক মো. শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরী, ডিসিসিআই পরিচালক আরমান হক, প্রাক্তন পরিচালক নূহের লতিফ খান, আহ্বায়ক মালিক তালহা ইসমাইল বারী, ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি এনকেএ মবিন, সহসভাপতি মনোয়ার হোসেন প্রমুখ অংশ নেন

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন