গত বছরের করোনা মহামারীর ভয়াবহ প্রভাব কাটিয়ে উঠছে বৈশ্বিক কৃষিপণ্যের চাহিদা।
ক্রমবর্ধমান এ চাহিদায় সাড়া দিয়ে বিশ্ববাজারে কৃষিপণ্যের সরবরাহ বাড়িয়েছে ভারত।
গত অর্থবছর দেশটির কৃষিপণ্য রফতানি ১৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ বাড়ে।
চলতি অর্থবছরেও প্রবৃদ্ধির এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে জানান দেশটির সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা।
খবর দ্য হিন্দু বিজনেস লাইন ও দি ইকোনমিক টাইমস।
ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প সচিব অনুপ ধাওয়ান বলেন, টানা তিন বছর ধরে কৃষিপণ্যের রফতানি অপরিবর্তিত, ক্ষেত্রবিশেষে নিম্নমুখী ছিল।
কিন্তু গত অর্থবছর রফতানি লক্ষণীয় মাত্রায় বেড়েছে।
বিশেষ করে নন-বাসমতি চাল, গম, ভুট্টাসহ দানাদার খাদ্যশস্য রফতানিতে বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি এসেছে।
তিনি বলেন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ভারত ৩ হাজার ৮৪৩ কোটি ডলারের কৃষিপণ্য রফতানি করেছিল।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে রফতানি কিছুটা বেড়ে ৩ হাজার ৮৭৪ কোটি ডলারে পৌঁছে।
২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশটির কৃষিপণ্য রফতানি কমে ৩ হাজার ৫১৬ কোটি ডলারে নেমে যায়।
কিন্তু ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশটির কৃষিপণ্য রফতানি লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে।
এ সময় ভারত ৪ হাজার ১২৫ কোটি ডলারের কৃষিপণ্য রফতানি করতে সক্ষম হয়।
দেশটির কৃষিপণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র, চীন, বাংলাদেশ, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভিয়েতনাম, সৌদি আরব, ইন্দোনেশিয়া, নেপাল, ইরান ও মালয়েশিয়া।
এর মধ্যে গত অর্থবছর সবচেয়ে বেশি কৃষিপণ্য রফতানি করা হয় ইন্দোনেশিয়ায়।
দেশটিতে ভারত ১০২ দশমিক ৪২ শতাংশ রফতানি বাড়িয়েছে।
এছাড়া বাংলাদেশে ৯৫ দশমিক ৯৩ ও নেপালে ৫০ দশমিক ৪৯ শতাংশ রফতানি বাড়িয়েছে দেশটি।
এসব দেশে খাদ্যপণ্যের ঊর্ধ্বমুখী চাহিদা ভারতের রফতানি বৃদ্ধিতে মূল চালিকাশক্তির কাজ করেছে।
এর মধ্যে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছে চাল।
করোনাকালে কৃষিপণ্যটির ঊর্ধ্বমুখী চাহিদায় রফতানির গতি বাড়ে।
গত অর্থবছর নন-বাসমতি চাল রফতানির হার ১৩৬ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে।
এ সময় দেশটি বিশ্ববাজারে সরবরাহ করে ৪৭৯ কোটি ৪৫ লাখ ৪০ হাজার ডলারের নন-বাসমতি।
এছাড়া গম রফতানি বেড়েছে ৭৭৪ দশমিক ১৭ শতাংশ।
গত অর্থবছর ৫৪ কোটি ৯১ লাখ ৬০ হাজার ডলারের গম রফতানি করে ভারত।
এ সময় অন্যান্য খাদ্যশস্য রফতানির হার ২৩৮ দশমিক ২৮ শতাংশ বাড়ে।
এসব শস্য রফতানি করা হয় ৬৯ কোটি ৪১ লাখ ৪০ হাজার ডলারের।
অন্যান্য কৃষিপণ্যের মধ্যে অয়েল মিল রফতানি ৯০ দশমিক ২৮ শতাংশ বেড়ে ১৫৭ কোটি ৫৩ লাখ ৪০ হাজার ডলারের পৌঁছেছে।
চিনি রফতানি ৪১ দশমিক ৮৮ শতাংশ বেড়ে ২৭৮ কোটি ৯৯ লাখ ৭০ হাজার ডলারে উন্নীত হয়েছে।
অপরিশোধিত তুলা রফতানির হার বেড়েছে ৭৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
ভারত গত অর্থবছর ১৮৯ কোটি ৭২ লাখ ডলারের অপরিশোধিত তুলা রফতানি করে।
তাজা সবজি রফতানি ১০ দশমিক ৭১ শতাংশ বেড়ে ৭২ কোটি ১৪ লাখ ৭০ হাজার ডলারের দাঁড়িয়েছে।
এছাড়া ভোজ্যতেল রফতানি বেড়েছে ২৫৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ হারে।
গত অর্থবছর ৬০ কোটি ২৭ লাখ ৭০ হাজার ডলারের ভোজ্যতেল রফতানি করে ভারত।
অনুপ ধাওয়ান জানান, এবার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রথমবারের মতো ভিন্ন ভিন্ন কৃষিপণ্য রফতানি করা হয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, বারানসির তাজা সবজি ও আম এবং চান্দৌলির কালো জাতের চাল নতুন করে রফতানি বাজারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
পাশাপাশি ভারত নতুন কয়েকটি দেশেও প্রথমবারের মতো তাদের কৃষিপণ্য রফতানি করেছে বলে জানান অনুপ ধাওয়ান।
এর মধ্যে পূর্ব তিমুর, পুয়ের্তো রিকো ও ব্রাজিলে প্রথমবারের মতো চাল রফতানি করা হয়।
ইয়েমেন, ইন্দোনেশিয়া, ভুটানে গম এবং অন্যান্য খাদ্যশস্য সুদান, বলিভিয়া ও পোল্যান্ডে প্রথমবারের মতো রফতানি করা হয়।
গত অর্থবছর মসলাজাতীয় পণ্য রফতানিতেও বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি আসে ভারতের।
এ সময় দেশটি ৪০০ কোটি ডলারের মসলা বিশ্ববাজারে সরবরাহ করেছে, যা রেকর্ড সর্বোচ্চ।
