বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সপ্তাহে পাঁচ কর্মদিবস চালু আছে।
কর্মীদের উৎপাদনশীলতা ও পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করতে এ উদ্যোগ নিয়েছে ছোট-বড় প্রতিষ্ঠানগুলো।
এবার কর্মদিবস পাঁচ থেকে চারে নামিয়ে আনতে চাইছে জাপান।
এক্ষেত্রে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটি কর্মীদের চারদিন কাজের সুযোগ দিতে সংস্থাগুলোকে উৎসাহিত করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।
খবর কিয়োদো নিউজ।
সম্প্রতি চূড়ান্ত করা বার্ষিক অর্থনৈতিক নীতি নির্দেশিকায় প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদ সুগার মন্ত্রিসভা ঐচ্ছিক চারদিনের কর্মদিবসের প্রচার অন্তর্ভুক্ত করেছে।
এ উদ্যোগের মাধ্যমে যাদের ওপর পরিবারের যত্নের দায়িত্ব রয়েছে কিংবা নতুন দক্ষতা অর্জনের জন্য আরো অবকাশ প্রয়োজন, এমন লোকদের চাকরি ও ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে ভারসাম্য উন্নত করার লক্ষ্য নেয়া হয়েছে।
যদিও দেশটির শ্রম ঘাটতির কারণে উত্থাপিত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার এ সময়ে নতুন উদ্যোগটি ব্যাপকভাবে গৃহীত হবে কিনা, তা নিয়ে শ্রম ও ব্যবস্থাপনা উভয় পক্ষই সম্ভাব্য অনাকাঙ্ক্ষিত ফল নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে।
নিয়োগকারীরা বলছেন, সপ্তাহে চারদিন কাজের ক্ষেত্রে কর্মীরা আরো বেশি অনুপ্রাণিত হতে পারেন।
এজন্য তাদের উৎপাদনশীলতাও বাড়বে।
তবে সেটা কর্মদিবস ক্ষতির তুলনায় যথেষ্ট নয়।
অন্যদিকে এক্ষেত্রে বেতন-ভাতা কমে যেতে পারে বলে উদ্বেগ রয়েছে কর্মীদের মধ্যে।
সরকার বলছে, কর্মদিবস কমিয়ে আনলে অনেক ধরনের সুবিধা পাওয়া যাবে।
এর মধ্যে রয়েছে চাকরি না ছেড়েই পরিবারের যত্নের দায়িত্ব থাকা ব্যক্তিরা তাদের দায়িত্ব পালন, নতুন দক্ষতা অর্জনের সময় এবং আরো অনেক মানুষ খণ্ডকালীন চাকরির সুযোগ পাবেন।
অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার (ওইসিডি) সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিশ্বের প্রধান অর্থনীতিগুলোর মধ্যে অস্ট্রেলীয়, কানাডিয়ান, ইতালীয় ও মার্কিন কর্মীরা জাপানিদের চেয়ে দীর্ঘ সময় কাজ করেন।
তবুও জাপানের চেয়ে দেশগুলোর উৎপাদনশীলতায় খুব কম উন্নতি দেখা যায়।
কারণ অন্যান্য উন্নত দেশের তুলনায় জাপানি কর্মীরা কম ছুটি নেন এবং তাদের মধ্যে দেশ ও চাকরি পরিবর্তনের প্রবণতা কম থাকে।
গত বছর চার হাজারেরও বেশি প্রতিষ্ঠানের ওপর পরিচালিত দেশটির শ্রম মন্ত্রণালয়ের সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৮ দশমিক ৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠান পাঁচদিনের কর্মদিবসের বাইরে আরো ছুটি দিচ্ছে।
এর আগে ২০১৭ সালে কর্মীদের সপ্তাহে তিনদিন ছুটির অনুমতি দিয়েছিল ইন্টারনেট জায়ান্ট ইয়াহু জাপান করপোরেশন।
পরিবারের যত্ন নেয়ার জন্য যাদের আরো বেশি সময় প্রয়োজন, তাদের জন্য এ সুযোগ চালু করেছিল প্রতিষ্ঠানটি।
সংস্থাটির এক মুখপাত্র বলেন, কর্মীদের সুবিধার্থে এ সুযোগ দেয়া হয়েছে।
এক্ষেত্রে কিছু কর্মী বলেছিলেন, এর ফলে শিশুদের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তাদের ছুটির দিনগুলো মিলিয়ে নেয়া আরো সহজ হবে।
ইয়াহু জাপানসহ আরো অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মীদের কম কর্মদিবসের সুযোগ দিচ্ছে।
এক্ষেত্রে অতিরিক্ত দিনগুলো বিনা বেতন হিসাবে গণনা করা হয়।
থিংক ট্যাংক জাপান রিসার্চ ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান হিসাশি ইয়ামাদা বলেন, চারদিনের কর্মসূচি জাপানজুড়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার প্রত্যাশা করছি না।
এমনকি সরকার এক্ষেত্রে চাপ দিলে এটা কর্মীদের পরিচালনা ও মূল্যায়ন জটিল করে তুলবে।
যেমন কর্মীরা যদি দ্বিতীয় চাকরি শুরু করেন, তবে পরিচালকদের পক্ষে তারা কতটা কাজ করেন, তা মূল্যায়ন কঠিন হয়ে যাবে।
পাশাপাশি সপ্তাহে যারা দুদিন ছুটি নেন, তাদের সঙ্গে তিনদিন ছুটি নেয়াদের সমানভাবে মূল্যায়ন মুশকিল হবে।