কভিড-১৯ মহামারীর কারণে বিশ্বের অনেক দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাই নাজুক হয়ে পড়েছে।
এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও সহিংসতা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
২০২১ সালের গ্লোবাল পিস ইনডেক্স (জিপিআই) প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
খবর আনাদোলু এজেন্সি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শান্তির ওপর মহামারীর প্রভাব কতটুকু তা এখনই পরিমাপ করে বলা সম্ভব নয়।
তবে অনেক দেশের অর্থনীতিতে যে পরিবর্তন এসেছে, তা তাদের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও সহিংস বিক্ষোভের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিয়েছে।
সহিংসতা ও সংঘাতের ওপর মহামারীর উল্লেখযোগ্য প্রভাব রয়েছে।
২০২০ সালে বিশ্বের নানা দেশে নাগরিক সহিংসতা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে মহামারীকেই দায়ী করা হচ্ছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাঁচ হাজারের বেশি মহামারী-সম্পর্কিত সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।
গত দশকে যে সহিংসতা ও সংকট ছিল, তা হ্রাস পেতে শুরু করেছে।
তবে তার জায়গা দখল করে নিচ্ছে দুশ্চিন্তা ও অনিশ্চয়তার নতুন ঢেউ, যা আদতে করোনা মহামারী ও বিশ্বের ক্ষমতাধরদের মধ্যকার ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার ফল।
শান্তির ওপরে কভিড মহামারীর প্রভাব এখনো পুরোপুরি বোঝা যায়নি।
যেখানে সহিংসতার কিছু ধরন হ্রাস পেয়েছে, লকডাউনের কারণে স্বাচ্ছন্দ্য কমেছে এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে ২০২০ সালে নাগরিক অস্থিরতা বেড়েছে।
অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিস (আইইপি) এ জিপিআই সূচক প্রকাশ করে।
যেখানে ১৬৩টি স্বাধীন রাষ্ট্র ও অঞ্চলকে তাদের শান্তির স্তর অনুযায়ী ক্রমানুসারে তালিকা করা হয়।
বিশ্বের ৯৯ দশমিক ৭ শতাংশ জনসংখ্যাকেই জিপিআইয়ের আওতায় আনা হয়েছে।
তালিকা তৈরির জন্য ২৩টি গুণগত ও পরিমাণগত সূচক ব্যবহার করা হয়েছে।
এছাড়া শান্তির পরিমাণ নির্ধারণে তিনটি ক্ষেত্র বিবেচনায় আনা হয়েছে।
এগুলো হলো সমাজের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা স্তর, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সংঘাতের মাত্রা এবং সামরিকীকরণ।
এ বছর ফলাফলে দেখা গেছে, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে শান্তিতে শূন্য দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ অবনমন হয়েছে।
গত ১৩ বছরে নবমবারের মতো এ অবনমন হলো।
যেখানে দেখা যাচ্ছে ৮৭টি দেশে শান্তি পরিস্থিতির উন্নয়ন হয়েছে এবং অবনতি ঘটেছে ৭৩টি দেশে।
সূচক অনুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে আইসল্যান্ড।
২০০৮ সাল থেকেই দেশটি তার অবস্থান ধরে রেখেছে।
এর পরেই আছে নিউজিল্যান্ড, ডেনমার্ক, পর্তুগাল ও স্লোভেনিয়া।
শান্তি সূচকের একেবারে নিচের দেশটির নাম আফগানিস্তান।
চার বছর ধরেই এ অবস্থানে পড়ে আছে দেশটি।
এর ওপরের অবস্থানে আছে ইয়েমেন, সিরিয়া, সাউথ সুদান ও ইরাক।
তালিকার শীর্ষে থাকা ১০টি দেশের মধ্যে আটটিই ইউরোপের।
এখন পর্যন্ত যতবার তালিকা তৈরি হয়েছে, ইউরোপের দেশগুলোই ঘুরেফিরে শীর্ষ ১০টির মধ্যে স্থান করে নিয়েছে।
এবার শীর্ষ ১০-এর বাইরে চলে গেছে সিঙ্গাপুর, তার জায়গায় উঠে গেছে আয়ারল্যান্ড।
বিশ্বের নয়টি অঞ্চলের মধ্যে কেবল তিনটি আগের চেয়ে শান্তিপূর্ণ হয়েছে।
সবচেয়ে বড় উন্নতি হয়েছে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা (এমইএনএ) অঞ্চলে।
এর পরেই আছে ইউরোপ ও দক্ষিণ এশিয়া।
যদিও এখনো মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা বিশ্বে কম শান্তিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে গণ্য হচ্ছে।
প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, গত ১৫ বছরে পৃথিবীর শান্তিপূর্ণ অবস্থার অবনতি হয়েছে।
জিপিআইয়ের ১৬৩টি দেশের মধ্যে ৮৬টিতে উন্নতি হয়েছে, পাশাপাশি ৭৫টি দেশে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
