হলিউডে প্রথম ২ কোটি ডলার পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন জিম ক্যারি

নব্বইয়ের দশকে জিম ক্যারি ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। ১৯৯৪ সালে তার এস ভেঞ্চুরা: পেট ডিটেকটিভ দারুণ হিট হয়েছিল। দেড় কোটি ডলার বাজেটের ছবিটি সে সময় আয় করেছিল ১০ কোটি মার্কিন ডলার। এরপর তিনি উপহার দেন দ্য মাস্ক, ডাম্ব অ্যান্ড ডাম্বার ব্যাটম্যান ফরএভারের মতো ব্লকবাস্টার। দর্শকরা তখন তার ছবি দেখতে সিনেমা হলগুলোতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। এমন পরিস্থিতিতে জিম ক্যারির পারিশ্রমিকও ফুলেফেঁপে উঠছিল। এস ভেঞ্চুরা: পেট ডিটেকটিভ ছবিতে জিমের পারিশ্রমিক ছিল ৪৫ লাখ ডলার। একই বছর মুক্তি পাওয়া ডাম্ব অ্যান্ড ডাম্বারে জিমের পারিশ্রমিক বেড়ে হয় ৭০ লাখ ডলার।

দ্রুতই জিম পারিশ্রমিকের বিবেচনায় হলিউডের প্রথম সারির তারকা আর্নল্ড শোয়ার্জেনেগার, হ্যারিসন ফোর্ডের কাছাকাছি চলে আসেন। কিন্তু ১৯৯৬ সালে মুক্তি পাওয়া ব্ল্যাক কমেডি ছবি দ্য কেবল গাইয়ে মুখ্য চরিত্রে যখন জিম ক্যারি যুক্ত হন তখন কেউই ধারণা করতে পারেননি তার পারিশ্রমিক কোন উচ্চতায় গিয়ে পৌঁছাচ্ছে। কলম্বিয়া পিকচারস ছবির জন্য তাকে কোটি মার্কিন ডলার পারিশ্রমিক দিয়েছিল। একই সঙ্গে বক্স অফিসের মুনাফার ১৫ শতাংশও পেয়েছিলেন তিনি। ছবিটি সমালোচকদের খুব একটা মনোযোগ না পেলেও জিম ক্যারির পারিশ্রমিকের কারণে বিখ্যাত হয়ে আছে। জিম ক্যারিই হলিউডে প্রথম কোটি ডলার পারিশ্রমিক পাওয়া অভিনেতা। তার ঠিক আগে আগে লাস্ট ম্যান স্ট্যান্ডিং ছবির জন্য ব্রুস উইলিস পেয়েছিলেন কোটি ৬৫ লাখ ডলার। ইরেজারের জন্য আর্নল্ড শোয়ার্জেনেগার পান কোটি ৭০ লাখ, ডেলাইটের জন্য সিলভেস্টার স্ট্যালোন কোটি ৭৫ লাখ ডলার পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন। কিন্তু জিম ক্যারির কোটি ডলারের পারিশ্রমিক এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যমগুলোকেও কাঁপিয়ে দিয়েছিল। ১৯৯৫ সালের ১৯ জুন ভ্যারাইটি লিখেছিল খবরটি শুনে সবার মাথা ঘুরছে কলম্বিয়ার কর্মকর্তা মার্ক ক্যান্টন তখন বলেছিলেন, এই কোটির বেঞ্চমার্কটি কোনো ট্রেন্ডে পরিণত হবে না, কারণ খুব বেশি তারকা জিম ক্যারির মতো সারা বিশ্বে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেননি।

সে সময় ভ্যারাইটির প্রতিবেদক ছিলেন মাইক ফ্লেমিং। তিনি জানান, জিম ক্যারির পারিশ্রমিকের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর হলিউডে এক ধরনের চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছিল। প্রথম সারির তারকাদের সবার পারিশ্রমিক গড়পড়তা ৫০ লাখ ডলার বেড়ে গিয়েছিল। এন্টারটেইনমেন্ট ম্যাগাজিন জিম ক্যারির একটা হাসিমুখের ছবি প্রচ্ছদে দিয়ে শিরোনাম করেছিল, কোটি ডলার পারিশ্রমিক পেলে আপনিও হাসিমুখে থাকবেন।

দ্য কেবল গাই মুক্তির পর জিম ক্যারি সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন, কারণ ছবিটি বাণিজ্যিকভাবে সফল হয়নি। শিকাগো সান-টাইমসের রজার এবার্ট লেখেন, ব্ল্যাক কমেডির জন্য কোনো অভিনেতাকে কোটি ডলার দেয়া যায় না। এবার্ট ঠিক বলেছিলেন, কারণ কোটি ৭০ লাখ ডলার ছিল দ্য কেবল গাই-এর বাজেট। এর মধ্যে জিম ক্যারিকেই দেয়া হয় কোটি। ছবিটি বক্স অফিসে আয় করে মোটামুটি ১০ কোটি ডলার। অন্যদিকে ছবির বাজেটের সঙ্গে প্রচারণা, বিজ্ঞাপনের মতো খরচ যোগ করে দেখা যায় তেমন মুনাফা আর হয়নি। তবে দুই বছর পর ১৯৯৭ সালে লায়ার লায়ার ছবি দিয়ে সমালোচনার জবাব দিয়েছিলেন জিম। এরপর আরো উপহার দেন ব্যবসাসফল দ্য ট্রুম্যান শো, হাউ দ্য গ্রিঞ্চ স্টোল ক্রিসমাস ব্রুস অলমাইটি।

কৌতূহলোদ্দীপক ব্যাপার হলো জিম ক্যারির সেই রেকর্ড প্রায় দুই দশক ধরে অক্ষত ছিল। এমনকি সময়ে এসে ক্যাপ্রিও, ব্রাড পিট, উইল স্মিথ, ড্যানজেল ওয়াশিংটনের মতো তরকারাও গড়ে কোটি ডলার পারিশ্রমিক পান। কেন এমনটা হচ্ছে তার কারণ নিয়ে ভ্যারাইটি বলছে, বিষয়টা বেশ জটিল। সুপারহিরো ছবিগুলোর উত্থান এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে। দর্শক হলে যাচ্ছে ক্যাপ্টেন আমেরিকা নয়তো থরকে দেখতে। পোশাকের নিচে কে আছেন তা নিয়ে এখন আকর্ষণ কমছে। এসব ছবি স্পেশাল এফেক্টস ব্যবহারের কারণে বেশ ব্যয়বহুল। অন্যদিকে দ্য কেবল গাই বা তার অন্য ছবিগুলোতে পরিচালকদের হাতে অস্ত্র বলতে জিম ক্যারির চেহারাটাই। এখানে সিজিআই প্রযুক্তির পেছনে খরচ নেই, তাই বাজেটের একট বড় অংশ তারকাকে দিয়ে দেয়াই যেত।

নব্বইয়ের দশকে হলিউড তারকাদের পারিশ্রমিক ছিল তাদের স্ট্যাটাস সিম্বল। তারকাদের এজেন্ট, ম্যানেজাররা আগ্রহভরেই তথ্য প্রকাশ করতেন। আজকাল যেমন ফুটবল বা ক্রিকেট তারকারা কত পারিশ্রমিক পান সেটা সবাই জানে, তেমনই ছিল ব্যাপারটা। একবিংশ শতাব্দীতে অবশ্য হিসাবনিকাশ বদলে গেছে। পর্যবেক্ষকরা বলেন হলিউডের অনেক স্টুডিও এখন বড় আকার নিয়েছে, কোনোটা বা টেক জায়ান্টদের মালিকানায় চলে গেছেএসব কারণে এখানে নানা রকম অস্বচ্ছতাও এসেছে। আর তাই তারকাদের পারিশ্রমিকের বিষয়টি এখন আর কোনো পক্ষই প্রকাশ করতে আগ্রহী নয়।

 

ভ্যারাইটি অবলম্বনে এসএম রশিদ

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন