ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অসহনীয় যানজট

মো. হাজিনুর রহমান শাহীন, গাজীপুর

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রথম বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) অতি সহজে কম সময়ে রাজধানীর সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপনের জন্য নেয়া হয় প্রকল্পটি ২০১২ সালে নেয়া প্রকল্পের মেয়াদ ব্যয় কয়েক দফায় বাড়িয়েও মাত্র ৬০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে তবে বিকল্প সড়কের ব্যবস্থা না করে দেশের গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কের উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়ায় কয়েক লাখ মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে বছরের পর বছর ধরে শুষ্ক কিংবা বর্ষা মৌসুমে সীমাহীন দুর্ভোগে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রী, ব্যবসায়ী পরিবহন খাতসংশ্লিষ্ট লোকজন ত্যক্ত-বিরক্ত দুর্ভোগের শিকার মানুষের প্রশ্ন, কবে শেষ হবে ভোগান্তি? যানজট, ধূলিজট জলজটের অবর্ণনীয় সমস্যা থেকে কবে মুক্তি মিলবে?

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিআরটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১২ সালে প্রাথমিক ব্যয় নির্ধারণ করা ছিল হাজার ৪০ কোটি টাকা কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৬ সালে প্রথম দফায় মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এরপর আরেক দফায় মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এবার খরচ ধরা হয় হাজার ২৬৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা তৃতীয় দফায় করোনার কারণে ফের সময় বাড়ানো হয় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত তবে সময়ের মধ্যে প্রকল্পের ৬০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে যে গতিতে কাজ চলছে, তাতে আগামী এক বছরের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাকি কাজ শেষ হবে কিনা, নিয়ে আশঙ্কা সাধারণ মানুষের মধ্যে

ঢাকা থেকে প্রতিদিন গাজীপুরে এসে অফিস করেন একটি সরকারি অফিসের কর্মকর্তা প্রকৌশলী শাহনেওয়াজ লতিফ তিনি জানান, আগে ঢাকা থেকে গাজীপুর যেতে সর্বোচ্চ ঘণ্টা সময় লাগত আর বর্তমানে আব্দুল্লাহপুর থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত যেতে সময় লাগে থেকে ঘণ্টা

শিমুলতলী থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চলাচলকারী গাজীপুর পরিবহনের চালক মজিবুর রহমান জানান, আগে আমরা প্রতিদিন চার-পাঁচটি ট্রিপ দিতে পারতাম জয়দেবপুর-টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়ক অতিক্রম করতে কিছুদিন আগেও লাগত দেড় থেকে ঘণ্টা আর এখন সামান্য বৃষ্টি হলেই লাগছে - ঘণ্টা ২০ মিনিট সময়ের সড়কে অধিক সময় ব্যয় হওয়ায় এখন দিনে এক বা দুটি ট্রিপ দেয়া যায় বৃষ্টি হলে সেটাও সম্ভব হয় না

সরেজমিন মহাসড়কটির বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, বিআরটি প্রকল্পের কাজ শুরুর পরই অপরিকল্পিত কাজ, বিভিন্ন বিভাগের সঙ্গে সমন্বয়হীনতা, যানজট কমানোর কোনো পদক্ষেপ বা বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থা সৃষ্টি না করেই প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ায় রাজধানীর উত্তরের জেলাগুলোর মানুষ কয়েক বছর ধরেই ভোগান্তি পোহাচ্ছে বিশেষ করে বর্ষায় জলাবদ্ধতায় ভোগান্তি বেড়েছে কয়েক গুণ সড়কের বিভিন্ন অংশে যানবাহন আটকে থাকছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বৃষ্টির পানিতে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় জলজটেরও সৃষ্টি হচ্ছে চলতি মাসের প্রথম থেকেই ১২ কিলোমিটার সড়ক যেন মানুষের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে টঙ্গী বাজার, স্টেশন রোড, চেরাগআলী, কলেজ গেট, সাতাইশ, বোর্ডবাজার, চৌধুরী বাড়ী, তারগাছ, ঢাকা বাইপাস মোড় ভোগড়া এলাকায় সড়কে খানাখন্দ সবচেয়ে বেশি বিশেষ করে টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশে ড্রেন নির্মাণকাজ চলমান হওয়ায় মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে ধীরগতির উন্নয়নকাজ, সিংহভাগ সড়ক দখল করে নির্মাণযজ্ঞ, সড়কের ওপর  নির্মাণ সামগ্রী রাখায় মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে অসহনীয় যানজটে গাজীপুরের বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় সময়মতো পণ্য পরিবহনেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে

মহাসড়কের যানজটের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) উত্তর আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, মূলত গাজীপুর থেকে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত সড়ক খানাখন্দে ভরা পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই সঙ্গে উন্নয়নকাজ চলমান অধিকাংশ স্থানে সড়ক বিভাজন নেই সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে যানবাহন আটকে পড়ছে কাজ চলমান থাকায় একদিকে সড়ক সরু হয়ে পড়ছে অন্যদিকে অধিক যানবাহনের চাপে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট তৈরি হয়েছে

বিআরটি প্রকল্প পরিচালক এএসএম ইলিয়াস শাহ বলেন, প্রকল্প শুরুর আগে বিকল্প সড়ক নির্মাণের সুযোগ ছিল না তবে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা করোনা মহামারীর মধ্যেও আমরা এরই মধ্যে প্রকল্পের ৬০ ভাগ কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছি এক বছরের মধ্যেই কাজ শেষের আশা রয়েছে

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন