গত বছরের শুরু থেকেই অব্যাহত দরপতনে টালমাটাল ছিল দেশের পুঁজিবাজার।
মার্চে দেশে কভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর বাজার পরিস্থিতি আরো শোচনীয় হয়ে ওঠে।
একসময় সূচক নেমে যায় ৩ হাজার ৬০০ পয়েন্টে।
এ অবস্থায় দরপতন ঠেকাতে ২০২০ সালের ১৯ মার্চ শেয়ারদরের সর্বনিম্ন সীমা বা ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করে দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে পুঁজিবাজার পরিস্থিতির লক্ষণীয় উন্নতি হওয়ার কারণে গতকাল ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করে নির্দেশনা জারি করেছে কমিশন।
ফলে এক বছরেরও বেশি সময় পর পুঁজিবাজারে ফ্লোর প্রাইস যুগের অবসান হয়েছে।
ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের বিষয়ে গতকাল বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী-রুবাইয়াত-উল স্বাক্ষরিত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে।
বিএসইসির আদেশে এর আগে গত বছর জারি করা ফ্লোর প্রাইস-সংক্রান্ত আদেশটির কার্যকারিতা রদ করা হয়েছে।
পাশাপাশি শেয়ারদর ওঠানামার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন সীমা বা সার্কিট ব্রেকার-সংক্রান্ত কমিশনের ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর জারি করা আদেশ পুনর্বহাল করা হয়েছে।
এ আদেশ অনুসারে শেয়ারদর ২০০ টাকা পর্যন্ত ১০ শতাংশ হারে সার্কিট ব্রেকার প্রযোজ্য হবে।
শেয়ারদর ২০০ টাকার উপরে হলে এবং ৫০০ টাকা পর্যন্ত ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ সার্কিট ব্রেকার থাকবে।
৫০০ টাকার বেশি এবং ১ হাজার টাকা পর্যন্ত শেয়ারদর থাকলে সেক্ষেত্রে সার্কিট ব্রেকার হবে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ।
শেয়ারদর ১ হাজার টাকার বেশি এবং ২ হাজার টাকা পর্যন্ত ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ হারে সার্কিট ব্রেকার আরোপ করা হবে।
শেয়ারদর ২ টাকার উপরে থাকলে এবং ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত সার্কিট ব্রেকার হবে ৫ শতাংশ।
আর শেয়ারদর ৫ হাজার টাকার বেশি হলে ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে সার্কিট ব্রেকার আরোপ করা হবে।
প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নতুন শেয়ার লেনদেনের প্রথম দিন থেকেই অন্যান্য শেয়ারের মতো একই হারে সার্কিট ব্রেকার প্রযোজ্য হবে।
ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের কারণ জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বণিক বার্তাকে বলেন, অনেক দিন ধরেই ফ্লোর প্রাইস বহাল ছিল।
এতে পুঁজিবাজারের লেনদেন বাধাগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি তারল্যও কমে গিয়েছিল।
দরপতন ঠেকাতে সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করা হয়েছিল।
এর আগে দুই ধাপে ৮৬টি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে নেয়া হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজার পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হয়েছে এবং ফ্লোর প্রাইসে মাত্র কয়েকটি
কোম্পানির শেয়ার আটকে ছিল।
তাই কমিশন এটি প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এতে বাজারে তারল্য বাড়ার পাশাপাশি লেনদেনের স্বাভাবিক যে প্রবাহ, সেটি ফিরে আসবে বলে জানান তিনি।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ১১০টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের বাজারমূল্য ফ্লোর প্রাইস স্পর্শ করার কারণে দীর্ঘদিন ধরেই দৈনিক লেনদেনে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সিকিউরিটিজ নিষ্ক্রিয় অবস্থায় ছিল।
এ স্থবিরতা কাটাতে এ বছরের ৭ এপ্রিল এ ১১০টির মধ্যে ৬৬টি কোম্পানি ও ফান্ডের ক্ষেত্রে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করে নেয় বিএসইসি।
দ্বিতীয় ধাপে গত ৩ জুন আরো ৩০ কোম্পানির ওপর থেকে ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে নেয়া হয়।
সর্বশেষ গতকালের আদেশের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সব সিকিউরিটিজের ওপর থেকেই ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, পুঁজিবাজারে ক্রমাগত দরপতন ঠেকাতে সরকারের প্রত্যক্ষ নির্দেশে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের দরের ক্ষেত্রে ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দিয়েছিল কমিশন।
বিএসইসির তত্কালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম খায়রুল হোসেন স্বাক্ষরিত সার্কিট ব্রেকারের নিম্নসীমা নির্ধারণসংক্রান্ত নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, সরকারের প্রত্যক্ষ নির্দেশে কমিশন পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের ক্ষেত্রে শেয়ারের দর ওঠানামা নিয়ন্ত্রণে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এখন থেকে ২০২০ সালের ১৯ মার্চের আগের পাঁচ কার্যদিবসে কোনো তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজের সমাপনী মূল্যের গড়কে সেই সিকিউরিটিজের প্রারম্ভিক মূল্য হিসেবে নির্ধারণ করতে হবে।
আর এ গড় মূল্যকে ফ্লোর প্রাইস ও সার্কিট ব্রেকারের নিম্নসীমা হিসেবে গণ্য করা হবে।
ফলে ফ্লোর প্রাইসের নিচে কোনো শেয়ারের দর কমার সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
এতে একটি নির্দিষ্ট পয়েন্টের নিচে পুঁজিবাজারের সূচকেরও পতন রোধ করা হয়।