সম্পাদকীয়

[গতকালের পর]

রফতানি বৃদ্ধি ও বহুমুখীকরণের লক্ষ্যে সহায়ক পরিবেশ তৈরি, শুল্ক নীতিগুলোর সমন্বয় সাধন, নতুন নতুন বাজার অনুসন্ধান করা, বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রযুক্তি হস্তান্তর, নমনীয় হারে ঋণ ও বীমার সুযোগ প্রদান, কর মওকুফ ও শুল্ক যৌক্তিকীকরণ ইত্যাদি খাতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে ৪৬ দশমিক ৯ বিলিয়ন টাকা এডিপি হিসেবে বরাদ্দ রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

সেবা খাতসংশ্লিষ্ট কৌশল বর্ণনা করা হয়েছে তৃতীয় ধাপে। উন্নত দেশগুলোয় জিডিপিতে সেবা খাতের অবদান থাকে ৭০-৮০ শতাংশ, কৃষি খাতের অবদান শূন্যের কাছাকাছি। যেমন ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপিতে কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতের অবদান ছিল যথাক্রমে শূন্য দশমিক ৯, ২১ দশমিক ৭ এবং ৭৭ দশমিক ৪ শতাংশ। যেখানে ২০১৯ সালে বাংলাদেশে জিডিপিতে কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতের অবদান যথাক্রমে ১৩ দশমিক ৬১, ৩৪ দশমিক ৫৭ এবং ৫১ দশমিক ৮২ শতাংশ। দেশ যত উন্নত হয়, কৃষি খাতে অবদান কমতে থাকে, বাড়তে থাকে সেবা খাতের গুরুত্ব। আগামী পাঁচ বছরেও উন্নতির পথে পথে আমাদের অর্থনীতির রূপান্তর হবে কৃষি থেকে শিল্প খাতে। এ লক্ষ্যে অবকাঠামোগত প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ, শ্রমশক্তির দক্ষতা মান উন্নয়ন, উৎপাদনের সব পর্যায়ে উদ্ভাবন বিস্তারে গবেষণা, বৈদেশিক কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং অভিবাসী শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় দক্ষতা উন্নয়ন, সেবা ও অর্থায়নে সহজ অভিগম্যতা নিশ্চিতকরণ, প্রতিটি উপজেলায় টিটিসি স্থাপন, সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি অর্জন ও গুণগত মান বৃদ্ধিকল্পে সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালীকরণ ইত্যাদি কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়।

জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকলেও কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে অব্যাহতভাবে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আওতায় গত পাঁচ কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ দশমিক ৫ শতাংশ হারে। একদা খোরপোশ কৃষির উত্তরণ ঘটেছে বাণিজ্যিক কৃষিতে। কৃষিবান্ধব সরকারের হাত ধরে। কৃষি ও পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা খাতের কৌশল বর্ণনা করা হয়েছে চতুর্থ অধ্যায়ে। নিরূপণ করা হয়েছে আগামী ২০২৪-২৫ সালে বিভিন্ন পণ্যের উৎপাদন ও চাহিদার। যেমন ২০২৪-২৫ সালে দেশে চাল ও মাছ উৎপাদন হবে যথাক্রমে ৪ দশমিক ১৭৩ কোটি এবং ৪৯ দশমিক ৯৫ লাখ টন। সে বছর চাহিদা থাকবে ১ দশমিক ৬৩৬ কোটি লিটার (২৫০মিলি/জন/দিন) দুধ, শূন্য দশমিক ৭৮৫ কোটি টন (১২০ গ্রাম/জন/দিন) মাংস এবং ৪৮৫ দশমিক ১৭৫ কোটি হালি (১০৪/বছর/জন) ডিমের। উৎপাদনশীলতা ও উৎপাদন বৃদ্ধি, কৃষির যান্ত্রিকীকরণ এবং বাণিজ্যিকীকরণ উৎসাহিতকরণ, উচ্চফলনশীল ও জলবায়ু অভিঘাতসহিষ্ণু জাত উদ্ভাবন, গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম জোরদারকরণ, কৃষিপণ্য রফতানি বৃদ্ধির জন্য কৃষি খাতে মূল্য সংযোজনের বিকাশ এবং গুড অ্যাগ্রিকালচার প্র্যাকটিসের চর্চা ও লালন, প্রক্রিয়াকরণ পণ্যসহ দুধ, মাছ, মাংস ও ডিমের টেকসই উৎপাদন বৃদ্ধি, বাণিজ্যিক পোলট্রি ও প্রাণিসম্পদ খাতে বাণিজ্যিক ফার্ম স্থাপনে উৎসাহিত করা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে ভেটেরিনারি সেবা সম্প্রসারণ, মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ এবং বিপণনে বেসরকারি খাতের অংশীদারিত্ব জোরদারকরণ, সুনীল অর্থনীতির সম্ভাবনা কাজে লাগানো ইত্যাদি কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে বর্তমান পরিকল্পনায়। সে লক্ষ্যে আগামী পাঁচ বছরে কৃষি ও সংশ্লিষ্ট অন্য মন্ত্রণালয়গুলোর উন্নয়ন খাতে প্রায় ১৪৮ হাজার কোটি টাকার ব্যয় পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। ২০১০ সালের ৫ হাজার ৮২৩ মেগাওয়াট উৎপাদন ২০১৯ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৯৬১ মেগাওয়াটে। উচ্চমধ্যম আয় অর্থনীতির উপযোগী বর্ধিত বিদ্যুৎ চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ২০২৫ সাল নাগাদ ৩০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং ২০২১ সালের মধ্যে শতভাগ জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বর্তমান পরিকল্পনার আওতায়। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও জ্বালানি খাতের দীর্ঘমেয়াদি স্থায়িত্ব নিশ্চিতকল্পে নিয়মিতভাবে এ খাতের শুল্ক সমন্বয় সাধন এবং প্রদত্ত ভর্তুকি ক্রমান্বয়ে হ্রাসকরণ, নিম্ন কার্বন উৎপাদনসহ স্বল্প ব্যয়ের জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর অত্যধিক নির্ভরশীলতা কমানোর জন্য জ্বালানির সুষম সমন্বয় করার অঙ্গীকার করা হয়েছে বর্তমান পরিকল্পনায়। এ খাতে আগামী ২০২৫ সাল নাগাদ উন্নয়ন ব্যয় হবে প্রায় ১৯৩ দশমিক ৯৯ হাজার কোটি টাকা।

রফতানি বহুমুখীকরণ এবং বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের পূর্বশর্ত হলো দ্রুত ও সুলভ যোগাযোগ ব্যবস্থা। দ্য গ্লোবাল কম্পিটিটিভনেস রিপোর্ট ২০১৯ অনুযায়ী আন্তর্জাতিক রফতানি বাণিজ্যে প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় বিগত দিনে বাংলাদেশ কিছুটা উন্নতি করলেও পরিবহন ব্যবস্থার বিভিন্ন সূচকে আছে ঢের পিছিয়ে। ওই প্রতিবেদন মোতাবেক বিশ্বের ১৪১টি দেশের মাঝে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৫ তম। পরিবহন ও যোগাযোগ খাতসংক্রান্ত কৌশল শীর্ষক ষষ্ঠ অধ্যায়ে সুনিয়ন্ত্রিত ও নিরবচ্ছিন্ন আন্তঃমোডাল পরিবহন ব্যবস্থা চালুকরণ, টেকসই অবকাঠামো গড়ে তোলা, পরিবহন খাতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব জোরদারকরণ, রেল পরিবহন ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, জাতীয়, আঞ্চলিক এবং ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সম্প্রসারণ, আন্তঃআঞ্চলিক নদী সংযোগকে অগ্রাধিকার প্রদান, বিমানবন্দরের আধুনিকীকরণ এবং একটি নতুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্থাপন, পরিবহন খাতে গৃহীত মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বাস র্যাপিড ট্রানজিটের মতো মেগা প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন ত্বরান্বিতকরণ ইত্যাদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সে লক্ষ্যে আগামী পাঁচ বছরে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর অনুকূলে ২৪১ দশমিক ১১ হাজার কোটি টাকা উন্নয়ন ব্যয়ের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

নাগররিকের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন, স্থানীয় স্তরের আইন-শৃঙ্খলা ইত্যাদি পরিষেবা নিশ্চিতকরণের জন্য বিশ্বব্যাপী স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা এক অপরিহার্য ব্যবস্থাপনা। বিগত দিনে বাংলাদেশে এ কাঠামোর উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সত্ত্বেও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো সুশাসন নিশ্চিত করতে এবং জনগণকে কাঙ্ক্ষিত সেবা সরবরাহ করতে বেশকিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। অস্পষ্ট ও অধিক্রমণ কর্মপরিধি, জনবল সংকট, রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থতা ইত্যাদি কারণে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে অপারগ হচ্ছে। ‘স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়সংক্রান্ত কৌশল’ শীর্ষক সপ্তম খাতে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক ও আর্থিক বিশেষ করে স্থানীয় সম্পদ সংগ্রহে সক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি, টেকসই ভৌত ও সামাজিক অবকাঠামোগত সুবিধা নিশ্চিতকরণ, ই-গভর্ন্যান্স প্রবর্তনের মাধ্যমে স্থানীয় সরকারের সুশাসন নিশ্চিতকরণ ও সেবার মানোন্নয়ন, নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন সুবিধা নিশ্চিতকরণ, নগর এলাকায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার মান ও পরিধি আরো বৃদ্ধিকরণের নিমিত্ত প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ রাখার অঙ্গীকার করা হয়েছে।

নগরায়ণ ও উন্নয়ন অত্যন্ত গভীর ও ইতিবাচকভাবে সম্পর্কযুক্ত। উচ্চ অর্থনৈতিক ঘনত্বের কারণে শহরাঞ্চলগুলোই প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি। উন্নত দেশে মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশ লোক শহরে বাস করে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ‘নগরায়ণ কৌশল’ শীর্ষক দশম অধ্যায়ে ঢাকাকেন্দ্রিক নগরায়ণের পরিবর্তে অনেক নগরকেন্দ্রের সুষম উন্নয়নের প্রয়োজনীয় বরাদ্দের গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। নগরের বায়ুর মান, গণপরিবহন, ট্রাফিক, পয়োনিষ্কাশন, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, নগর প্রশাসনের সংস্কার ও সমন্বয়, নাগরিক সেবার পরিধি ও মানোন্নয়নের লক্ষ্যে বৃদ্ধি করা হবে সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ।

বহু সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বিগত বছরগুলোয় বাংলাদেশে স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি খাতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি অর্জিত হয়েছে। বিগত অর্জনের ওপর ভিত্তি করে ২০২৫ সাল নাগাদ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টিসংক্রান্ত কৌশল বর্ণিত হয়েছে একাদশ ভাগে।

লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম জোরদারকরণ, রেফারেল সিস্টেমের প্রবর্তন, প্রতিটি বিভাগে একটি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট সাপ্লিমেন্ট, ফর্টিফায়েড ফুড সরবরাহ এবং পুষ্টিবিষয়ক জনসচেতনতা জোরদারকরণ কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে আগামী পাঁচ বছরে। আর এজন্য স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দ ২০২৫ সাল নাগাদ জিডিপির ২ শতাংশে উন্নীত করা হবে।

ইউএনডিপির ২০১৯ সালের প্রতিবেদন অনযায়ী মানবসম্পদ উন্নয়ন সূচকে শূন্য দশমিক ৬১৪ স্কোর নিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৫তম। মানসম্মত শিক্ষার মাধ্যমে এ সূচকের উত্তরণ ঘটানো আগামীর বাংলাদেশের জন্য অত্যাবশ্যক। দ্বাদশ ভাগে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গ্রহণ করা হয়েছে ব্যয় পরিকল্পনা।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষায় ভর্তি উৎসাহিতকরণ ও হার বৃদ্ধি করা, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের (টিভিইটি) মান উন্নতকরণ, মাদ্রাসা পর্যায়ে টিভিইটি অন্তর্ভুক্তিকরণ এবং মাদ্রাসার পাঠ্যক্রম হালনাগাদকরণের লক্ষ্যে শিক্ষা খাতে বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির (জিডিপির অন্তত ৩.৫%) পাশাপাশি বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ উৎসাহিতকরণের অঙ্গীকার হয়েছে বর্তমান পরিকল্পনায়। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযোগী সৃজনশীল, তুরীয় চিন্তার অধিকারী, সমস্যা সমাধানে দক্ষ জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার লক্ষে শিক্ষা ব্যবস্থা নতুন আঙ্গিকে সাজানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বর্তমান পরিকল্পনায়।

জাতির পিতা ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের ২৯তম সাধারণ অধিবেশনে ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অসাধারণ সাফল্যের’ কথা তুলে ধরে এর সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে সম্পদের ‘সুষম বণ্টনের’ তাগাদা দিয়েছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অভিপ্রায়ে বাংলাদেশের ‘দিন বদলের সনদ’-এ যুক্ত হয়েছিল ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের অঙ্গীকার। বর্তমান বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সমাজ চালিত হচ্ছে ডিজিটাল বিপ্লবের পথে। ডিজিটাল মাধ্যমে সরকারি সেবা প্রদানে ৬২ দশমিক ৩ স্কোর নিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৬৬তম। আগামী দিনে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুফল ঘরে তুলতে সরকার ধারণ করেছে পঞ্চমুখী পরিকল্পনা। সমন্বয় করা হবে ১) সরকারি সেবা, ২) শিক্ষা ও গবেষণা, ৩) শিল্প, ৪) স্টার্টআপ ও উদ্যোক্তা এবং ৫) বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনায়। বর্তমানের নাগরিকের ই-গভর্নমেন্ট ডেভেলপমেন্ট ইনডেস্ক শূন্য দশমিক ৪৮৬২ (১১৫তম) থেকে বাড়িয়ে ২০২৫ সাল নাগাদ শূন্য দশমিক ৬৫-তে উন্নীত করার মাধ্যমে বিশ্বে ৮০তম স্থান অর্জন, ইউম্যান ক্যাপিটাল কম্পোনেন্ট ইনডেস্ক স্কোর শূন্য দশমিক ৪৭৬৩ থেকে বাড়িয়ে শূন্য দশমিক ৭২-তে উন্নীতকরণের কর্মপরিকল্পনা বিধৃত আছে দ্বাদশ খাতে। ২০২৫ সাল নাগাদ এ খাতে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২২ দশমিক ৩৫ হাজার কোটি টাকা।

‘যুব উন্নয়ন, ক্রীড়া, সংস্কৃতি, তথ্য ও ধর্মবিষয়ক কৌশল’ শীর্ষক ত্রয়োদশ অধ্যায়ে জাতি গঠনে নাগরিকের সাংস্কৃতিক বিকাশকে প্রণিধান হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। যুব শ্রমশক্তির দক্ষতা উন্নয়ন এবং সবারর জন্য শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা, কপিরাইট আইন এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক আইন সংশোধন, শিক্ষানীতি অনুযায়ী প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে সংগীত, চিত্রকলা, শিল্পকলা ও কারুশিল্প, খেলাধুলা, আবৃত্তি, অভিনয়, নৃত্য ইত্যাদি জোরদারকরণের অঙ্গীকার করা হয়েছে বর্তমান পরিকল্পনায়।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দশটি বিশেষ উদ্যোগের একটি ‘সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি’। তার মহান পরিকল্পনায় ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে দেশে প্রথমবারের মতো চালু হয়েছিল ‘বয়স্ক ভাতা’। পরবর্তী সময়ে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি’ বেষ্টনীতে যুক্ত হয়েছে নানা কর্মসূচি। মাননীয় অর্থমন্ত্রীর ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতা থেকে আমরা জানতে পারি বর্তমানে ১৪৩টি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি রয়েছে। এজন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার চতুর্দশ খাতে ‘সামাজিক নিরাপত্তা, সমাজকল্যাণ ও সামাজিক অন্তর্ভুক্তি কৌশল’ বর্ণনা করা হয়েছে। ‘কেন্দ্রীয় ডাটাবেজ’ তৈরির মাধ্যমে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির উপকারভোগী বাছাই প্রক্রিয়া শক্তিশালীকরণ, পুষ্টি সংবেদনশীল কৃষির উন্নয়ন, মানব উন্নয়ন সম্পর্কিত সেবা ও কর্মসূচিতে পুরুষের পাশাপাশি নারী ও তৃতীয় জেন্ডারের প্রবেশগম্যতা বাড়ানো, দরিদ্র ও ঝুঁকিগ্রস্তদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা খাতের বরাদ্দ বর্তমানে জিডিপির ১ দশমিক ২ শতাংশ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে ২ শতাংশে উন্নীতকরণ, যার মধ্যে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ শিশুদের জন্য সংরক্ষণ করার অঙ্গীকার করা হয়েছে বর্তমান পরিকল্পনা দলিলে।

উচ্চাভিলাষী এ পরিকল্পনা দলিলের কিছু সমালোচনাও থাকতে পারে। সামষ্টিক অর্থনীতির লক্ষ্য অর্জনের কৌশলের উপযুক্ততা, বিনিয়োগ বৃদ্ধি বাস্তবতা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে সম্মানিত অর্থনীতিবিদরা হয়তো বলবেন। কিন্তু আমরা যারা অ-অর্থনীতিবিদ তাদের কাছে এ দলিল কতটুকু সুপাঠ্যরূপে উপস্থাপন করা গেছে, সে প্রশ্ন রাখা যেতে পারে। বরং অনেক সময়ই মনে হতে পারে অহেতুক টেনে লম্বা করা হয়েছে। মূল পরিকল্পনা উপস্থাপনের আগে অতি দীর্ঘ ভূমিকায় ধৈর্যচ্যুতি ঘটা অস্বাভাবিক নয়। অসংগতি আছে ভিত্তি বছর নিরূপণেও। ২০২১-২৫ সময়ে বাস্তবায়নাধীন এ পরিকল্পনার ভিত্তি বছর হতে পারত সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সমাপ্ত বছর ২০২০। ভিন্ন সূচকের জন্য ভিত্তি বছরের ভিন্নতার দরুন সহজবোধ্যতা হারিয়েছে এ গুরুত্বপূর্ণ দলিল। তাছাড়া পাঁচ বছর মেয়াদি পরিকল্পনার এক বছর অতিবাহিত হতে চললেও সর্বসাধারণের জন্য এর বাংলা সংস্করণ সহজলভ্য হয়নি এখনো।

প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল, দূরদর্শী নেতৃত্বে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আওতায় বাংলাদেশে অসামান্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। এ সাফল্যের ওপর ভিত্তি করেই রচিত হয়েছে বর্তমানের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে স্মরণে রাখতে হবে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বান। ‘প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা’র মুখবন্ধে জাতির পিতা আহ্বান জানিয়েছিলেন, ‘দেশের জনগণের পক্ষ থেকে কঠোর পরিশ্রম ও প্রয়োজনে যেকোনো ত্যাগের জন্য সর্বাত্মক অঙ্গীকার ছাড়া কোনো পরিকল্পনারই, তা যত সুলিখিত হোক না কেন, সঠিক বাস্তবায়ন হতে পারে না। আমাদের সবাইকে তাই অবিচল সংকল্প নিয়ে জাতি গঠনের কাজে নিজেদের উৎসর্গ করতে হবে।’ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ‘অবিচল সংকল্প’ আর উদ্ভাবনী নেতৃত্বে ‘দাবায়া রাখতে পারবা না’র বাংলাদেশে যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হবে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা—এটি আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। [শেষ]

ড. মনসুর আলম খান: জেলা প্রশাসক, মেহেরপুর