সেরা সিনেমা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, আর সেখানে ক্রিস্টোফার নোলান থাকবে না তা কি হয়? আইএমডিবি রেটিং অনুযায়ী সেরা সিনেমার তালিকার উপরের দিকের বেশির ভাগ সিনেমাই বিংশ শতাব্দীর।
একবিংশ শতাব্দীতে নির্মিত রেটিংয়ের উপরে থাকা সিনেমাটাই দ্য ডার্ক নাইট, যা নির্মাণ করেছেন ক্রিস্টোফার নোলান, যার আইএমডিবি রেটিং ৯.০০।
দ্য ডার্ক নাইটকে তালিকার চতুর্থ সিনেমা বলা যায়।
তৃতীয় সিনেমা বললেও ভুল হবে না।
কেননা তালিকায় তিন নম্বরে অবস্থান করা দ্য গড ফাদার-২-এর রেটিং পয়েন্টও যে ৯.০০।
প্রাপ্ত ভোটের ভিত্তিতে ডার্ক নাইটের উপরে অবস্থান করছে গডফাদার।
ডার্কনাইট ব্যাটমান ট্রিলজির দ্বিতীয় সিনেমা।
প্রথমটা ছিল ব্যাটমান বিগিন্স।
আর সব সুপার হিরোর মতো ব্যাটমানও লড়াই করে নৈতিক অবক্ষয়প্রাপ্ত শক্তির বিপক্ষে।
মানুষের জন্য।
ব্যাটমান বিগিন্সে ব্যাটমানকে লড়াই করতে হয় তার শহর গোথাম রক্ষার জন্য।
সেই সিনেমার শেষ দৃশ্যে দেখানো হয়েছিল, গোথাম শহরে আগমন ঘটেছে নতুন এক দুর্বৃত্তের।
অপরাধপটে সে ফেলে যায় জোকারের তাস।
তাই লেফটেন্যান্ট জিম গর্ডন, জেলা অ্যাটর্নি হার্ভে ডেন্ট ও তার বাল্যবান্ধবী র্যাচেল ডসের সহায়তায় ব্যাটম্যান নামে এক নতুন সংগ্রামে।
এবার শহরের আন্ডারগ্রাউন্ডসহ সব অপরাধ সংঘটন নিশ্চিহ্ন করে গোথামকে অপরাধমুক্ত করে তবেই তারা ক্ষান্ত হবে।
সবকিছু পরিকল্পনা মোতাবেকই চলছিল, মাঝখানে বাগড়া দেয় ক্রমবর্ধমান হুমকি ও শতাব্দীর সবচেয়ে বিধ্বংসী ক্রিমিনাল মাস্টার মাইন্ড ‘দ্য জোকার’। হার্ভে আর র্যাচেল দুজনকে দুই জায়গায় বন্দি করে রাখে জোকার।
একই সময়ে দুজনকে বাঁচানোর চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয় ব্যাটম্যানকে।
একজনকে বাঁচাতে গেলে আরেকজনকে হারাবে সে।
জোকার ব্যাটমানকে মেরে যত না শান্তি পায়, তার চেয়ে বেশি শান্তি পায় তাকে বিভ্রান্ত করতে পারলে।
ব্যাটম্যানের সঙ্গে জোকারের এই মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ অন্য রকম এক উপাদান, যার মাধ্যমে দর্শকদের স্নায়বিক চাপে ফেলার কাজে শতভাগ সফল নোলান।
গোথামে খারাপ লোকের অভাব নেই।
কিন্তু জোকার তাদের থেকে অনেক ভিন্নতর।
অর্থ কিংবা ক্ষমতার ধার ধারে না সে।
অ্যালফ্রেডের ভাষায় ‘কিছু মানুষ শুধু বিশ্বের ধ্বংস দেখতে চায়’,
সেও তাদের মতোই একজন।
তবে গোথামে জোকার যে অরাজকতা সৃষ্টি করে সেগুলো আপাতদৃষ্টিতে এলোমেলো মনে হলেও তার পরিকল্পনা এত বিস্তৃত ছিল যে সে সক্ষম হয় শহরের সব দুর্নীতিবাজকে এক টেবিলে জড়ো করতে।
সিনেমাজুড়ে তাকে দেখানো হয়েছে রহস্যময়ভাবে।
কেউ তার সম্পর্কে কিছু জানে না।
নিজের নৃশংসতার পরিচয় দিতে সে তার অতীত নিয়ে বলে ভয়ংকর সব গল্প।
প্রতিবারই তার গল্পের কাহিনী হয় ভিন্ন।
‘দ্য ডার্ক নাইট’
সিনেমায় সাসপেন্স দর্শককে ভুল দিকে টেনে নিয়ে যায়।
দর্শক যখন চরম উত্তেজনায় নখ কামড়াচ্ছে ঠিক তখন পরিচালক দর্শককে সম্পূর্ণ ভিন্ন দিক থেকে আক্রমণ করে গেছেন।
সাসপেন্সের ওপর নতুন সাসপেন্স দর্শককে বেশকিছু শ্বাসরুদ্ধকর মুহূর্ত উপহার দিয়েছে।
একদিকে ব্যাটম্যানের লড়াই, অন্যদিকে ক্লাইমেক্সে সমান তালে বুঁদ হয়ে থাকা উত্তেজিত দর্শক! কী নেই এই সিনেমায়!
ক্রিস্টোফার নোলান যখন ব্যাটম্যান নির্মাণের দায়িত্ব নিলেন, তখন আয়রনম্যান, স্পাইডারম্যান, ক্যাপ্টেম আমেরিকাসহ বাঘা বাঘা সব সুপারম্যানের রাজত্ব বিশ্বজুড়ে।
ব্যাটম্যান তখন প্রায় বিস্মৃত সুপারহিরো।
নোলান জাদুতে উড়তে শুরু করল ব্যাটম্যান।
ট্রিলজির দ্বিতীয় ছবি বক্স অফিস কাঁপিয়ে আয় করে নেয় প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
এর আগে কোনো সুপারহিরো ধারার সিনেমা ১ বিলিয়ন ডলার আয়ের মাইলফলক স্পর্শ করতে পারেনি।
ব্যাটম্যান বিগিন্সের কাস্টিংয়ের সঙ্গে ডার্ক নাইটে যুক্ত হন অস্ট্রেলীয় অভিনেতা হিথ লেজার। কী অসাধারণ অভিনয় তিনি করলেন। কেউ কল্পনাও করেনি জ্যাক নিকলসনের পর জোকারকে এভাবে কেউ ফুটিয়ে তুলতে পারবে। দুই মাস অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি জোকারকে নিয়ে গেছেন ভিন্ন এক উচ্চতায়। সহঅভিনেতা হিসেবে জিতেছেন সে বছরের গোল্ডেন গ্লোব ও একাডেমি পুরস্কার। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সিনেমা মুক্তির কিছুদিন আগে মারা যান লেজার। সিনেমা কিংবা পুরস্কার কোনোটাই দেখার সুযোগ হয়নি তার। আর ব্যাটম্যান চরিত্রে ক্রিশ্চিয়ান বেইল যা করলেন তার ফলাফল সমালোচকরাই দিয়েছেন। ডার্ক নাইট পেয়েছে সর্বকালের সেরা সুপারহিরো সিনেমার মর্যাদা।