দেড় মাসে সর্বোচ্চ মৃত্যু শনাক্তের হারও বাড়ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

পরপর দুদিন মৃতের সংখ্যা অর্ধশত ছাড়ানোর পর গতকাল সারা দেশে ৬০ জন কভিড-১৯ পজিটিভ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। মৃতের সংখ্যা দেড় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশের হাজার ৯৫৬ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটির সংক্রমণ শনাক্ত হয়। দুই মাসের মধ্যে সংখ্যা সর্বোচ্চ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চলতি বছরের ২২ এপ্রিল গতকালের চেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল। সেদিন হাজার ১৪ জনের শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়ে। আর গতকালের চেয়ে বেশি মৃত্যু হয় মে। সেদিন ৬১ জনের মৃত্যু হয়েছিল। নতুন আক্রান্তদের নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে লাখ ৩৭ হাজার ২৪৭। আর মারা গেছেন ১৩ হাজার ২৮২ জন করোনা রোগী।

নভেল করোনাভাইরাসের ডেল্টা ধরনের কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের (গোষ্ঠীগত সংক্রমণ) কারণে করোনার রোগী শনাক্ত মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য ভাইরাস বিশেষজ্ঞরা। নতুন ধরনের কারণে রাজশাহী খুলনার ভারত সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে সংক্রমণ মৃত্যু কয়েক সপ্তাহ ধরে বাড়ছে। কয়েক দিন ধরে ঢাকায়ও শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গতকাল সারা দেশের ৫১৩টি পরীক্ষাগারে ২৩ হাজার ৮০৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পর্যন্ত সরকারি বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৬২ লাখ ৪২ হাজার ৭৮৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। গতকাল আরো হাজার ৬৭৯ জন করোনা রোগী সুস্থ হওয়ায় মোট সুস্থতার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে লাখ ৭৩ হাজার ৭৫২। সর্বশেষ নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ৬২ শতাংশ। পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৪১ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯২ দশমিক ৪২  মৃত্যুর হার দশমিক ৫৯ শতাংশ।

বিভাগভিত্তিক হিসাবে ঢাকায় গত একদিনে হাজার ৫৭৯ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, যা সারা দেশে মোট শনাক্তের ৪০ শতাংশ। আগের দিন ঢাকা বিভাগে শনাক্ত হয়েছিল মোট ৯০৭ জন। রাজশাহীতে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৭১২  থেকে বেড়ে ৮১৩ হয়েছে। খুলনা বিভাগে গত একদিনে শনাক্ত হয়েছে ৮১৮ জন নতুন রোগী, যা আগের দিন ৮০০ জন ছিল। ঢাকা বিভাগে পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার আগের দিনের শতাংশ থেকে বেড়ে শতাংশ হয়েছে। রাজশাহী বিভাগে ১৮ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৯ শতাংশ। আর খুলনা বিভাগে শনাক্ত রোগীর হার ৩৭ থেকে বেড়ে ৩৮ শতাংশ হয়েছে।

গত একদিনে মারা যাওয়া ৬০ জনের মধ্যে ১৭ জনই রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা। বাকিদের মধ্যে ১৪ জন খুলনা, আটজন ঢাকা, আটজন চট্টগ্রাম, ছয়জন সিলেট, চারজন রংপুর তিনজন ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা। গতকাল পর্যন্ত মারা যাওয়া ১৩ হাজার ২৮২ জনের মধ্যে হাজার ৫৪৩ জন পুরুষ হাজার ৭৩৯ জন নারী।

২০২০ সালের মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর প্রথম রোগীর মৃত্যুর কথা জানায় সরকার। চলতি বছরের ৩১ মে করোনা রোগীর সংখ্যা আট লাখ পেরিয়ে যায়। এর মধ্যে গত এপ্রিল একদিনে সর্বোচ্চ হাজার ৬২৬ জন কভিড-১৯ পজিটিভ রোগী শনাক্ত হয়। ১১ জুন মৃত্যুর সংখ্যা ১৩ হাজার অতিক্রম করে। দ্বিতীয় পর্যায়ে সংক্রমণের মধ্যে গত ১৯ এপ্রিল দৈনিক হিসেবে সর্বোচ্চ ১১২ জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়।

করোনা সংক্রমণ মৃত্যু বাড়তে থাকায় এপ্রিল থেকে সাধারণ মানুষের চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়, যা এখনো বহাল রয়েছে। বিধিনিষেধের কারণে মাঝে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। তবে সম্প্রতি আবার বাড়তে শুরু করেছে সংক্রমণ মৃত্যুর সংখ্যা। বিশেষ করে ভারত সীমান্তবর্তী ১৫ জেলায় রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে সারা দেশে বিধিনিষেধের পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনকে সংক্রমণের ঝুঁকি বিবেচনায় স্থানীয়ভাবে লকডাউন দেয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের সীমান্তবর্তী বেশ কয়েকটি স্থানে স্থানীয়ভাবে লকডাউন বাস্তবায়ন করতেও দেখা গেছে।

২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানে প্রথম নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এরপর মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে শতাধিক দেশে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়লে গত বছরের ১১ মার্চ করোনাকে বৈশ্বিক মহামারী ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন