৫ মাসে বিদেশে কর্মসংস্থান ২ লাখ কর্মীর

৭৪ শতাংশের গন্তব্য সৌদি আরব

নিজস্ব প্রতিবেদক

কভিড-১৯-এর কারণে গত বছর বিদেশে নতুন কর্মী পাঠানো প্রায় বন্ধই ছিল। তবে বছরের শেষদিকে পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করলে আবারো শুরু হয় কর্মী প্রেরণ। যার পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জানুয়ারি-মে) চাকরি নিয়ে বিভিন্ন দেশে পাড়ি দিয়েছেন লাখ ৯৫ হাজার ২৪০ বাংলাদেশী। তবে এসব কর্মীর ৭৪ শতাংশই গিয়েছেন সৌদি আরবে।

জনশক্তি, কর্মসংস্থান প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) সূত্রে জানা গেছে, গত পাঁচ মাসে চাকরি নিয়ে সৌদি আরবে গিয়েছেন লাখ ৪৪ হাজার ৩৯৪ জন বাংলাদেশী কর্মী। যার মধ্যে নারী কর্মীর সংখ্যা ছিল ১৮ হাজার ৪৩৭। সৌদি আরবের পর সব চেয়ে বেশি কর্মী রফতানি হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ ওমানে। গত পাঁচ মাসে দেশটিতে গিয়েছেন ১৯ হাজার ৪২ জন বাংলাদেশী, যার মধ্যে নারী কর্মী ছিলেন হাজার ৬৬৭ জন।

অন্যদিকে গত পাঁচ মাসে সিঙ্গাপুরে গিয়েছেন ১২ হাজার ১৩৯ জন কর্মী। আর জর্ডানে গিয়েছেন হাজার ৩৩২ জন বাংলাদেশী। জর্ডানে পাড়ি দেয়া কর্মীদের সিংহভাগ অর্থাৎ হাজার ২১৯ জন ছিলেন নারী কর্মী। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দুই শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে হাজার ৬৩৩ কাতারে হাজার ১৮ জন বাংলাদেশী কর্মী গিয়েছেন গত পাঁচ মাসে।

জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, চলতি বছর প্রথম কয়েক মাসে বিদেশে কর্মী পাঠানো সম্ভব হলেও বর্তমানে আবারো স্থবিরতা নেমে এসেছে। করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ একের পর এক দেশ বাংলাদেশীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করছে। এতে সংকুচিত হচ্ছে বহির্বিশ্বের শ্রমবাজার। বিভিন্ন দেশ কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশীদের জন্য নতুন নতুন শর্ত আরোপ করছে, যা জনশক্তি রফতানি খাতকে আবারো ঝুঁকিতে ফেলছে।

প্রসঙ্গে জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বায়রার মহাসচিব (সাবেক) শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বণিক বার্তাকে জানান, গত বছর টানা তিন মাস কোনো দেশে কর্মী পাঠানো যায়নি। জুলাইয়ে সীমিত আকারে কর্মী পাঠানো শুরু হলেও গত এপ্রিলে আবার বন্ধ হয়ে যায়। সে সময় কয়েকটি দেশে বিশেষ ফ্লাইট চললেও নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ ছিল। দূতাবাসগুলোর কার্যক্রমও বন্ধ ছিল। অবস্থায় নতুন কর্মী পাঠানো কবে নাগাদ স্বাভাবিক হবে, তা নিশ্চিত নয়। তিনি বলেন, চলতি বছর অধিকাংশ কর্মীই রফতানি হয়েছে সৌদি আরবে। তবে বিমান ভাড়া কয়েক গুণ বৃদ্ধি এবং সৌদি আরবের নতুন শর্তে বিদেশগামী কর্মীদের অভিবাসন ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে।

কভিড সংক্রমণ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা জারি রেখেছে আরেক বৃহৎ শ্রমবাজার মালয়েশিয়া। একই সঙ্গে প্রবাসী কর্মীদের ফিরতে কভিডের টিকা নেয়াও বাধ্যতামূলক করেছে দেশটি। গত পাঁচ মাসে দেশটিতে যেতে সক্ষম হয়েছেন মাত্র ১৪ জন বাংলাদেশী।

উল্লেখ্য, মালয়েশিয়া সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী করোনার টিকা দেয়া ব্যতীত সে দেশটিতে জনশক্তি রফতানির কোনো সুযোগ নেই। মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী দাতো সেরি সারাভানান মুরুগান গত ১৯ মে বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রীকে এক জরুরি চিঠিতে জানান, বাংলাদেশ থেকে করোনা ভ্যাকসিন দিয়েই অভিবাসী বাংলাদেশীরা মালয়েশিয়ায় প্রবেশের সুযোগ পাবেন।

এর আগে মে বাংলাদেশে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হওয়ার কথা জানিয়েছিল সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) করোনা পরিস্থিতির কারণে ওইদিনই বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মালয়েশিয়া। করোনা মহামারীর কারণে বাংলাদেশ মালয়েশিয়ার আকাশপথে যোগাযোগ বন্ধ হয় ২০২০ সালের মার্চে। পরে জুলাইয়ে শর্ত সাপেক্ষে ট্রানজিট যাত্রী মালয়েশিয়ার রেসিডেন্স পারমিটধারী, পেশাজীবী, শিক্ষার্থীদের সেদেশে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়। যদিও বাংলাদেশী প্রবাসী শ্রমিকদের মালয়েশিয়ায় যেতে কিংবা দেশে ফেরার সুযোগ দেয়া হয়নি। পরবর্তী সময়ে মালয়েশিয়ার দীর্ঘসূত্রতা কঠিন শর্তের কারণে অনেক প্রবাসী কাজে ফিরে যেতে পারেননি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন