ধান সংগ্রহ নিয়ে অনিশ্চয়তায় যশোর খাদ্য বিভাগ

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, যশোর

যশোরে মে মাস থেকে বোরো ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে কিন্তু অভিযানের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় নামমাত্র কিছু ধান সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে সরকার যে দামে ধান কিনছে, সে তুলনায় খোলাবাজারে ধানের দাম বেশি ফলে কৃষকদের মাঝে সরকারি খাদ্যগুদামে ধান বিক্রিতে অনীহা তৈরি হয়েছে এমন পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্টরা ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা করছেন তবে চাল সংগ্রহ নিয়ে আশাবাদী জেলা খাদ্য বিভাগ

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার বোরো ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৮৭৯ টন ২৭ টাকা কেজি দরে ধান কিনছে সরকার ১২ জুন পর্যন্ত সরকারি খাদ্যগুদামে হাজার ৪৮৭ টন চাল সরবরাহ করেছেন কৃষকরা অন্যদিকে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৪ হাজার ৫৯৪ টন পর্যন্ত সংগ্রহ করা হয়েছে ১০ হাজার ১২৭ টন প্রতি কেজি চালের দাম ৪০ টাকা করে নির্ধারণ করা হয়েছে

চলতি মৌসুমে মণিরামপুর খাদ্যগুদামের মাধ্যমে কার্ডধারী কৃষকদের কাছ থেকে হাজার ৫০০ টন ধান হাজার ৮০ টন চাল সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার হাজার ৮০ টাকা মণ দরে ধান ৪০ টাকা কেজি দরে চালের দাম নির্ধারণ করা হয় এক মাস পার হলেও মাত্র ১৮২ টন ধান ২৮০ টন চাল সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সেলিম শিকদার বাজারে দাম বেশি থাকায় গত দুই মৌসুমেও সরকারি গুদামে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি খোলাবাজারে প্রতি মণ চিকন ধান হাজার ২০০ থেকে হাজার ২২০ টাকায় এবং মোটা ধান হাজার ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে মণিরামপুরে চলতি মৌসুমে ২৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে এর মধ্যে মাত্র ৫০০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে মোটা ধান সরকার যে দামে ধান কিনছে, তা মূলত মোটা ধানের দাম

বাজারসংশ্লিষ্টরা জানান, সরকার যখন ধান ক্রয় শুরু করেছে, তখন অধিকাংশ কৃষকের গোলা শূন্য হয়ে গেছে বাজারে দাম ভালো পাওয়ায় তারা আগেই ধান বিক্রি করে দিয়েছেন

মাহমুদকাটি গ্রামের কার্ডধারী কৃষক নূর ইসলাম বলেন, ১০০ মণের ওপরে ধান উৎপাদিত হয়েছে হাজার ১০০ থেকে হাজার ১৫০ টাকা দরে ধান বিক্রি করে দিয়েছি কিছু ধান গোলায় আছে সরকার যে দামে কিনছে, তার চেয়ে বাজারে মণে ১০০-১৫০ টাকা বেশি পাচ্ছি তাই খাদ্যগুদামে ধান দিইনি এদিকে বর্তমানে খোলাবাজারে মোটা চালের পাইকারি দর সরকারি দরের সমান হওয়ায় বিনা লাভে গুদামে চাল দিতে বাধ্য হচ্ছেন চুক্তিবদ্ধ ৪৪ জন মিল মালিক

মণিরামপুর মিল মালিক সমিতির সভাপতি আরিফুল ইসলাম বলেন, যেসব মিলার আগে ৩৮ টাকা দরে চাল কিনে রাখতে পেরেছেন তারা টাকা লাভে গুদামে চাল দিতে পারছেন বর্তমানে ৪০ টাকা কেজি দরে চাল কিনতে হচ্ছে এখন যারা গুদামে চাল দিচ্ছেন, তারা লোকসানের শিকার হচ্ছেন

মণিরামপুরে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইন্দ্রজিৎ সাহা বলেন, ধীরগতিতে ধান-চাল কেনার কাজ চলছে খোলাবাজারে ধানের দাম বেশি হওয়ায় কৃষকরা গুদামে আসছেন না তবুও আমরা লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের চেষ্টা করছি একই অবস্থা অন্য উপজেলাগুলোতে

যশোরের ইলা অটো রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী শরিফুল আলম বলেন, গত বার সরকারি গুদামে চাল দিয়ে আমাদের লোকসান গুনতে হয়েছিল কিন্তু এবার আমরা আগেই ধান কিনে রেখেছি আশা করছি চলতি মৌসুমে লাভ করতে পারব

ব্যাপারে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবদুর রহমান বলেন, আমাদের সঙ্গে ২৬৫ জন মিলার চাল দেয়ার চুক্তি করেছেন ফলে তারা চাল দেবেন, এটা নিশ্চিত তবে বাজারে কিছুটা বেশি দাম পাওয়ায় কৃষকরা ধান খোলাবাজারে বিক্রি করে দিচ্ছেন ফলে লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন