একাডেমিক ও আর্থিক অনিয়ম

কক্সবাজার ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের সুপারিশ ইউজিসির

সাইফ সুজন

নানা একাডেমিক, আর্থিক প্রশাসনিক অনিয়মের কারণে কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে (সিবিআইইউ) এক বছরের জন্য শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখার সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) সাময়িক অনুমতি নবায়নের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কয়েক মাস আগে বিশ্ববিদ্যালয়টি পরিদর্শনে যায় ইউজিসির একটি পরিদর্শক দল। এর পরই শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখার সুপারিশ এনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে উচ্চশিক্ষা তদারককারী সংস্থাটি।

পরিদর্শনে উঠে আসে, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বৈধ কোনো উপাচার্য উপ-উপাচার্য নেই। যারা পাঠদান করেন, তাদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ভাড়া করা ভবনে চলে কার্যক্রম। সেখানে উচ্চশিক্ষা গবেষণার অনুকূল কোনো পরিবেশ নেই। নিয়ম অনুযায়ী ন্যূনতম দেড় কোটি টাকা থাকার কথা থাকলেও সংরক্ষিত তহবিলে অর্থের পরিমাণ শূন্য। পরিদর্শন শেষে পাওয়া এসব তথ্যের ভিত্তিতে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠায় ইউজিসি। সঙ্গে সুপারিশও জুড়ে দেয় তারা।

বিষয়ে পরিদর্শক দলের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বণিক বার্তাকে বলেন, কক্সবাজারের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়টি নানা অনিয়মে জর্জরিত। উচ্চশিক্ষার কোনো পরিবেশ না থাকা আইন অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা না করায় বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী ভর্তি এক বছরের জন্য বন্ধ রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। তবে যে শিক্ষার্থীরা আগে থেকেই ভর্তি আছেন, তাদের পড়ালেখা স্বাভাবিকভাবে চলবে। এক বছর সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে রাষ্ট্রপতির নিয়োগকৃত উপাচার্যকে দায়িত্ব দেয়া, সংরক্ষিত তহবিলে নির্ধারিত অর্থ নিশ্চিত করা যোগ্য শিক্ষক নিয়োগসহ বিভিন্ন শর্ত পূরণ করতে হবে। বিষয়ে তিন মাস পরপর কমিশনকে অবহিত করার কথাও বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।

বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার পরিবেশ বিষয়ে তিনি বলেন, বাস স্টেশনের পাশে একটি বাণিজ্যিক ভবনের কয়েকটি ফ্লোর ভাড়া করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। সেখানে উচ্চশিক্ষার ন্যূনতম কোনো পরিবেশ নেই। আইন অনুযায়ী যে-সংখ্যক শিক্ষক থাকার কথা সেটি নেই। যাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে, তাদের অধিকাংশই শিক্ষকতার জন্য অযোগ্য। শিক্ষক নিয়োগ, পদায়ন পদোন্নতিকোথাও কোনো শৃঙ্খলা বা নিয়মের বালাই নেই। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয়ার সময়ই সংরক্ষিত তহবিলে দেড় কোটি টাকা থাকার কথা। অথচ প্রতিষ্ঠার আট বছরে এসেও সেখানে ধরনের কোনো তহবিলই নেই।

কয়েক বছর আগে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য শিক্ষক নিয়োগ পদোন্নতির ন্যূনতম শর্ত বেঁধে দিয়ে একটি নীতিমালা জারি করে ইউজিসি। ওই নীতিমালার সঙ্গে আরো কঠিন শর্ত যোগ করার সুযোগ থাকলেও এর কোনো নির্দেশনা শিথিলের সুযোগ নেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর। যদিও শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে নীতিমালা অনুসরণ করছে না কক্সবাজার ইউনিভার্সিটি। গত বছরের ২১ নভেম্বর খান মো. সরফরাজ আলীকে সহযোগী অধ্যাপক পদে নিয়োগ দিয়ে একটি পত্র দেয়া হয়। নিয়োগের জন্য জমা দেয়া জীবনবৃত্তান্ত অনুযায়ী সরফরাজ আলীর সহযোগী অধ্যাপক পদে নিয়োগ পাওয়ার অভিজ্ঞতা প্রকাশনার কোনো যোগ্যতাই নেই। তার পরও বেআইনিভাবে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির ইংরেজি, ব্যবসায় প্রশাসন, লাইব্রেরি তথ্যবিজ্ঞানসহ প্রায় সব বিভাগেই এমন প্রচুরসংখ্যক অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে প্রমাণ পায় ইউজিসি।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) একেএম আফতাব হোসেন প্রামাণিক বণিক বার্তাকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়টিকে রাষ্ট্রপতির নিয়োগপ্রাপ্ত উপাচার্য নিশ্চিত করার জন্য এর আগেও বলা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন অনিয়মের কথা উঠে আসছে। ইউজিসির সুপারিশ কর্তৃপক্ষের পরামর্শের আলোকে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন