অভিমত

অর্থনৈতিক উন্নয়নে স্থলবন্দর

মো. আলমগীর

দীর্ঘ স্থলসীমান্ত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ করে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে অপরিসীম ভূমিকা পালন করে আসছে। আমাদের স্থল বাণিজ্যের সিংহভাগই সম্পন্ন হয় ভারতের সঙ্গে, কারণ ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে রয়েছে পৃথিবীর পঞ্চম দীর্ঘ সীমান্ত এলাকা। বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১০ লাখ লোক প্রতি বছর ভারতে পর্যটন, শিক্ষা চিকিৎসাসেবা নিতে যায়। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের।

তবে ভুটান নেপাল ভারতীয় স্থলভাগ ব্যবহার করে বাংলাদেশের সঙ্গে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম শুরু করেছে। এতে অংশগ্রহণকারী সব দেশই স্থলপথে বিদ্যমান বাণিজ্য সুবিধা গ্রহণ করে লাভবান হয়ে থাকে। তাই স্থলপথে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে আমদানি-রফতানি সুগম, সহজ অধিকতর উন্নত করার জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০০১ সালে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ আইন, ২০০১-এর মাধ্যমে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করে। একজন চেয়ারম্যান, তিনজন সদস্য এবং ৪৯০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী দ্বারা এর জনবল গঠিত। সরকার কর্তৃক গঠিত একটি বোর্ড এর সার্বিক কার্যক্রম পর্যালোচনা দিকনির্দেশনা প্রদান করে।

বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান। স্থলবন্দর কর্তৃক ব্যবহার উপযোগী, অবকাঠামো উন্নয়ন, পণ্য লোডিং-আনলোডিং, পণ্য সংরক্ষণ, পরিচালনা ব্যবস্থাপনার জন্য সরকার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ঘোষিত ১৮১টি শুল্ক স্টেশনের মধ্যে ২৪টি স্থল শুল্ক স্টেশনকে স্থলবন্দর হিসেবে ঘোষণা করে, যার মধ্যে ১২টি চালু রয়েছে এবং বাকি ১২টি চালুর অপেক্ষায় রয়েছে। ১২টি চালু বন্দরের মধ্যে বেনাপোল, বুড়িমারী, আখাউড়া, ভোমরা, নাকুগাঁও, তামাবিল সোনাহাট সাতটি বন্দর সরাসরি স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। বাকি পাঁচটি যথাক্রমে সোনামসজিদ, হিলি, বাংলাবান্ধা, টেকনাফ বিবিরবাজার বেসরকারি অপারেটরের মাধ্যমে বিওটি ভিত্তিতে পরিচালিত হচ্ছে। আরো ১২টি নতুন স্থলবন্দর নির্মাণাধীন রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে বিরল, দর্শনা, বিলোনিয়া, গোবড়াকুড়া-কড়ইতলী, ধানুয়া-কামালপুর, রামগড়, তেগামুখ, চিলাহাটি, দৌলতগঞ্জ, শেওলা, বাল্লা ভোলাগঞ্জ। বাংলাদেশের স্থলবন্দরগুলোর মধ্যে শুধু মিয়ানমারের সঙ্গে একটি এবং বাকিগুলোর মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য পরিচালিত হয়। বর্তমান এর সদর দপ্তর কারওয়ান বাজারের টিসিবি ভবনে ভাড়া করা একটি ফ্লোরে অবস্থিত। তবে অচিরেই স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের প্রশাসনিক কাজ আগারগাঁও প্রশাসনিক জোনে ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন নিজস্ব ভবনে স্থানান্তর হবে।

স্থলবন্দরগুলোর মধ্যে বেনাপোল স্থলবন্দর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের স্থলপথে সম্পাদিত মোট আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের ৯০ শতাংশই বেনাপোল স্থলবন্দরের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। স্থলবন্দরের ওপর চাপ কমাতে এবং ভারত, ভুটান নেপালের সঙ্গে স্থলপথে পণ্য আমদানি- রফতানির সুবিধার্থে সরকার ১৯৮৮ সালে বুড়িমারী স্থলবন্দরটি চালু করে।

ভৌগোলিক অবস্থার কারণে ট্রান্সপোর্ট ট্রান্সশিপমেন্ট কেন্দ্র হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেশ। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত মিয়ানমারের সীমান্ত সংযোগ রয়েছে। এছাড়া নেপাল, ভুটান চীনের কুনমিং সীমান্তের কাছাকাছি থাকায় স্থলপথে আমদানি-রফতানি সুযোগ বিদ্যমান। বিষয়টি সদ্য স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশের জাতির জনক আগেই বুঝতে পেরেছিলেন। তাই পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সঙ্গে নৌ-পরিবহন বাণিজ্য ব্যবস্থা জোরদার করতে বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে ১৯৭২ সালে ভারত বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম আন্তঃদেশীয় নৌ-পরিবহন বাণিজ্য প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়, যা স্বাধীন দেশের বাণিজ্য ব্যবস্থায় নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে। বস্তুতপক্ষে তিনিই ছিলেন বাংলাদেশের সঙ্গে বহির্বিশ্বের ব্যবসা-বাণিজ্য বিস্তারে প্রথম যোগসূত্র স্থাপনকারী। তিনি ১৯৫৬ সালে তদানীন্তন পাকিস্তানের কোয়ালিশন সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ করলে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান বর্তমানে বাংলাদেশে প্রথম আমদানি-রফতানি নিয়ন্ত্রকের আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপন করেন। প্রসঙ্গত, দেশ স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭২ সালে তিনিই প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেনাপোল শুল্ক চেক পোস্ট পরিদর্শন করেন। ২০০১ সালে বাংলাদেশে ১৩টি শুল্ক স্টেশনকে স্থলবন্দর ঘোষণা করা হলেও চালু ছিল মাত্র দুটি। বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর ১১টি শুল্ক স্টেশনকে স্থলবন্দর ঘোষণা করে ২৪টি স্থলবন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন, সম্প্রসারণ আধুনিকায়নের নির্দেশনা দেয়।

২০১০ সালে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে। থিম্পু সম্মেলনে সার্কভুক্তি দেশগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি এবং ট্রানজিট বিষয়টি প্রাধান্য পায়। সম্মেলনে বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে পারস্পরিক বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতির নিমিত্তে এক চুক্তি সই হয়। এরই ধারাবাহিকতা আর বিশ্বায়ন আন্তঃরাষ্ট্রীয় বাণিজ্যে বিভিন্ন শুল্ক অশুল্ক বাধা দূর হওয়ায় ভারত, মিয়ানমারসহ অন্যান্য প্রতিবেশী দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির প্রয়োজন দেখা দেয়। তাছাড়া বিমসটেক বিআইবিএন আঞ্চলিক জোটের বিভিন্ন বাধ্যবাধকতা আর প্রয়োজন স্থলপথে আমদানি-রফতানি কার্যক্রমে গতিশীলতা আনা, সেবা সহজীকরণ, আন্তঃরাষ্ট্রীয় বাণিজ্যের বিকাশসহ কর্মসৃজনে বাংলাদেশে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ ২০ বছর ধরে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

স্থলবন্দরের কাজে বন্দরের বিভিন্ন অংশীজন, যেমন কাস্টমস, ইমিগ্রেশন, কোয়ারেন্টিন, বিজিবি, ব্যাংক, আমদানি-রফতানিকারক, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করছে। ইজ অব ডুয়িং বিজনেসের আওতায় সেবা সহজীকরণ, স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠাকল্পে স্থলবন্দরগুলোয় একই ছাদের নিচে সমন্বিতভাবে যাত্রীসাধারণ বন্দর ব্যবহারকারীদের সেবা প্রদানের লক্ষ্যে স্থলবন্দরে বরাদ্দকৃত স্থানে সব অংশীজনের কার্যক্রম পরিচালনার সরকারি সিদ্ধান্ত রয়েছে। এরই মধ্যে বেনাপোল, বুড়িমারী, বাংলাবান্ধা টেকনাফ স্থলবন্দরে ওয়ান স্টপ সার্ভিস সিস্টেমে যাত্রীসেবা  দেয়া হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সব স্থলবন্দরেই ওয়ান স্টপ সার্ভিস সিস্টেমে সেবা প্রদানের মাধ্যমে ব্যবসা সম্প্রসারণের পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে। পণ্য পরিবহন, হ্যান্ডলিং, সংরক্ষণ স্থলবন্দর আধুনিকায়ন ছাড়া বর্তমানে সোনাহাট স্থলবন্দর ব্যতীত বাকি ১১টি বন্দর দিয়ে যাত্রীদের আসা-যাওয়ার সুবিধা সৃষ্টি করা হয়েছে। বেনাপোল স্থলবন্দরে একটি আধুনিক আন্তর্জাতিক মানের প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল তৈরি করা হয়েছে। বেনাপোলসহ অন্যান্য স্থলবন্দর ব্যবহার করে পর্যন্ত প্রায় ৩১ লাখ যাত্রী ভারতে গমন এবং ভারত থেকে বাংলাদেশে আসছে। ফলে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষসহ অন্যান্য রাজস্ব আদায়কারী সংস্থার আয় বিগত বছরগুলোর তুলনায় অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে একটি ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্তআত্মমর্যাদাসম্পন্ন, আধুনিক উন্নত জাতি হিসেবে গড়ে তোলাই আমাদের বর্তমান সরকারের অভীষ্ট লক্ষ্য। সেজন্য বর্তমান সরকার অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, ডিজিটাল বাংলাদেশ, ভিশন-২০২১, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-২০৩০, ভিশন-২০৪১, ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ গ্রহণ করেছে। সরকারের এসব উদ্যোগের সঙ্গে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ নিম্নোক্ত কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। আর এর সুবিধাভোগী হচ্ছে নিম্নরূপ: ) বেনাপোলসোনামসজিদ, ভোমরা, হিলি, টেকনাফ, তামাবিল, বুড়িমারী সোনাহাট স্থলবন্দরে বেসরকারিভাবে নিয়োজিত ঠিকাদার কোম্পানির মাধ্যমে প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক পণ্য ওঠানামার কাজে নিয়োজিত আছেন। এর মাধ্যমে এলাকার হতদরিদ্র দরিদ্র এক বিশাল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এতে তাদের জীবনমানের অনেক উন্নতি হয়েছে এবং এলাকায় তা ক্ষুদ্র ব্যবসা-বাণিজ্য শিক্ষা বিস্তারে সহায়তা করছে। ) বেনাপোল, আখাউড়া, বুড়িমারী, ভোমরা, তামাবিল সোনাহাট স্থলবন্দরের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে বেসরকারি ঠিকাদারের মাধ্যমে এলাকার অনেক দরিদ্র বেকার ছেলে-মেয়ের কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এতে তাদের আয়-রোজগার বেড়েছে, জীবনমান সামান্য হলেও উন্নতি হয়েছে। ) দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্থলবন্দরগুলো স্থাপিত হওয়ায় এসব দূরবর্তী এলাকায় আগে যেখানে কোনো জনবসতি এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ ছিল না, এখন সেখানে অনেক দোকানপাট, ব্যবসা-বাণিজ্য, অফিস, আবাসিক হোটেল, মোটেল এবং কম্পিউটার কম্পোজ ছবি তোলার প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। পণ্য খালাস, ড্রাইভার, হেলপার, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, ব্যাংক, বীমা ছাড়াও অনেক ক্ষুদ্র শিল্পের বিকাশ ঘটেছে। ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ এসব বন্দরের আশপাশে বিরাট কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া পণ্য ওঠানো-নামানো, সংরক্ষণ, ট্রান্সশিপমেন্ট অন্যান্য সেবা প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ বিগত বছরগুলোয় রাজস্ব বাবদ হাজার ২০০ কোটি টাকার অধিক আয় করেছে এবং প্রায় ২০০ কোটি টাকা ভ্যাট প্রদান করেছে।

এত কিছুর পরও একথা বলতে দ্বিধা নেই যে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সামনে এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। বিশেষ করে যে হারে স্থলবন্দরের সেবাপ্রার্থীর সংখ্যা বাড়ছে, সে হারে বা গতিতে সেবা অবকাঠামো গড়ে উঠছে না। ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি বর্তমান সরকারের সময়ে মানুষের জীবনমানের অভাবনীয় উন্নতি হওয়ায় সেবাগ্রহীতাদের প্রত্যাশা এখন অনেক বেশি। কিন্তু প্রত্যাশিত হারে সেবা সুবিধা তাত্ক্ষণিক বাড়ানো যাচ্ছে না। কর্তৃপক্ষ এসব অসুবিধা দূর করার জন্য কাজ করছে। 

সম্প্রতি বুড়িমারী স্থলবন্দরে কর্তৃপক্ষের নিজস্ব অর্থায়নে যে -পোর্ট ম্যানেজমেন্ট কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে, তা সফল হলে স্থলবন্দরের সব কাজ ডিজিটালাইজেশনের আওতায় নিয়ে আসা যাবে এবং এতে সেবা গ্রহণকারীদের অনেক কম সময়ে  অনায়াসে দক্ষতার সঙ্গে সেবা প্রদান করা যাবে। কার্যক্রমটি স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ পরবর্তী সময়ে অন্যান্য স্থলবন্দরে চালু করবে। স্থলবন্দরে প্রায় ১৫টি সরকারি-বেসরকারি সংস্থা বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রদান করে। সংস্থাগুলো তাদের নিজস্ব নিয়ম-নীতি মেনে কাজ করে। অনেক সময় কোনো কোনো কর্মকর্তা সংস্থার অন্তর্গত সংস্কৃতির কারণে একসঙ্গে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। তারা অনেকটা আলাদা সাইলোর মতো কাজ করতে পছন্দ করেন। ফলে এক ছাদের নিচে ওয়ান স্টপ সার্ভিস প্রদানের মহৎ উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। মনোগত সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য থেকে বের হয়ে আসতে হবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে হবে। তাছাড়া অনেক সুবিধাভোগী স্থলবন্দরের এই অটোমেশন ভালোভাবে গ্রহণ করছেন না, কারণ তারা পুরনো সিস্টেমের সুবিধাভোগী। অটোমেশন হলে তারা আর দুর্নীতি করতে পারবেন না, তাই তারা অটোমেশনের বিরোধী। কিন্তু আস্তে আস্তে তারা এর সুবিধা বুঝতে পারলে অটোমেশনকেই গ্রহণ করবেন।

স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষকে সীমান্তে কাজ করতে হয়। এজন্য তাদের অনেক জমি অধিগ্রহণ এবং অবকাঠামো নির্মাণকাজ হাতে নিতে হয়। জমি অধিগ্রহণে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয় এবং এটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তাছাড়া সীমান্তের ১৫০ গজের ভেতর এসব নির্মাণকাজ করতে গেলে প্রায়ই বিএসএফের বাধার মুখে পড়তে হয়। এসব বিষয় সমাধানের জন্য উভয় দেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/সংস্থা জড়িত থাকে। ফলে অনেক দীর্ঘসূত্রতা সৃষ্টি হয় এবং প্রকল্প যথাসময়ে বাস্তবায়ন করা যায় না। পরিণতিতে বার্ষিক উন্নয়ন অগ্রগতি মন্থর হয়ে যায়, যা সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রভাব ফেলে। তাছাড়া ত্রিদেশীয় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অনেক সময় অন্য দেশের ভূরাজনৈতিক বিষয় বন্দরের কার্যক্রমেও প্রভাব সৃষ্টি করে। অনেক সময় বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ পুরোপুরি প্রস্তুত থাকলেও অন্য দেশ যদি তার স্থলবন্দরের ভালোভাবে উন্নতি না করে তাহলে বাংলাদেশে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ এর পুরো সুফল ঘরে তুলতে পারে না। এজন্য প্রয়োজন একটি সমন্বিত কার্যকর ব্যবস্থা, যা উভয় পক্ষ বা সব পক্ষের জন্য সমতল পরিবেশের সৃষ্টি করে। তবে আশার কথা হচ্ছে, বর্তমান সরকারের সময়কালে অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এক অন্য উচ্চতায় গিয়ে পৌঁছেছে। বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে বাস ছাড়াও যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করছে। তাছাড়া স্থলবন্দরের যেকোনো সমস্যা সমাধান এবং বাংলাদেশ ভারতের স্থলবন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়নের লক্ষ্যে দুই দেশের স্থলবন্দরের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে Sub-Group on Infrastructure of ICPs/LCSs বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ অংশে বেনাপোল স্থলবন্দর ভোমরা স্থলবন্দরে কমিটির প্রথম সভা এবং ভারত অংশের শিলিগুড়িতে কমিটির দ্বিতীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব সভার মাধ্যমে অনেক অনিষ্পন্ন বিষয় সহজে দ্রুতগতিতে নিষ্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালনায় পর্যন্ত মাত্র ১২টি স্থলবন্দরের কার্যক্রম চালু রয়েছে। চালুর অপেক্ষায় রয়েছে আরো ১২টি স্থলবন্দর। ভবিষ্যতে পরিচালনার জন্য বিবেচনাধীন আছে আরো তিনটি। সব বন্দর চালু করা গেলে বাংলাদেশ স্থলবন্দরের কার্যক্রম পূর্ণতা পাবে এবং আমদানি-রফতানি বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে।

আশা করা যায়, বাংলাদেশ স্থলবন্দরগুলো আগামী দিনে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হয়ে উঠবে। বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ ব্যবসা-বাণিজ্য আর আন্তর্জাতিক যাত্রী পণ্য পরিবহনের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষে মানুষে সদ্ভাব, সংস্কৃতির আদান-প্রদান সৌহার্দ বৃদ্ধিতে অনন্য ভূমিকা পালন করবে।

 

মো. আলমগীর: সরকারের অতিরিক্ত সচিব

চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন