পিচ্ছিল ঢালে শ্রীলংকার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ

বণিক বার্তা ডেস্ক

রিজার্ভ নিয়ে মহাবিপাকে রয়েছে শ্রীলংকা। গত মাসে দেশটিতে রিজার্ভের পরিমাণ নেমে এসেছে ৩৫৩ কোটি ডলারে। দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপদেশটি এখন অন্যান্য দেশের সঙ্গে কারেন্সি সোয়াপের মাধ্যমে রিজার্ভের দৈন্যদশা কাটানোর চেষ্টা করছে। তবে সহসাই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ মিলবে না বলে মনে করছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গতকালও এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়েছে, দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রক্ষেপণ অনুযায়ী চলতি বছরের শেষ নাগাদ দেশটিতে রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ৪০০-৪৫০ কোটি ডলারের মধ্যে।

শ্রীলংকার ডলার রিজার্ভ দীর্ঘদিন ধরেই আশঙ্কাজনকভাবে পড়তির দিকে রয়েছে। দেশটির বৈদেশিক বাণিজ্যে দায়দেনা পরিশোধের সক্ষমতা নিয়েও বড় ধরনের আশঙ্কা রয়েছে। গত বছরের শেষ নাগাদ দেশটির দীর্ঘমেয়াদি বৈদেশিক মুদ্রা ইস্যুর সক্ষমতার রেটিং সিসিসি-তে নামিয়ে এনেছিল ঋণমান নির্ধারক সংস্থা ফিচ রেটিংস। সংস্থাটি ওই সময় কলম্বোর মধ্যম মেয়াদি ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিল। সেখান থেকে এখন পর্যন্ত পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে পারেনি দেশটি।

গত এক বছরে শ্রীলংকার মাসভিত্তিক রিজার্ভের গ্রাফও ক্রমেই নিচে নেমেছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সূচকগুলোর ডাটাবেজ সিইআইসির পরিসংখ্যান বলছে, আগস্টে দেশটিতে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৭০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি। মার্চে তা নেমে আসে ৩৬১ কোটি ডলারে। সেখান থেকে বেড়ে এপ্রিলে তা দাঁড়িয়েছিল প্রায় ৪০১ কোটি ডলারে। এরপর গত মাসে তা আবারো হ্রাস পেয়েছে।

পরিস্থিতি থেকে দ্রুত উত্তরণের কোনো সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছে না দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অবস্থায় বছর শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ৪০০-৪৫০ কোটি ডলারে ধরে রাখাকেই লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করেছে সেন্ট্রাল ব্যাংক অব শ্রীলংকা। এজন্য প্রতিবেশী মিত্রদেশগুলোর সঙ্গে কারেন্সি সোয়াপের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে লংকান কেন্দ্রীয় ব্যাংককে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের দিক থেকে অতিদুর্বল দেশগুলো কারেন্সি সোয়াপের মাধ্যমে তুলনামূলক এগিয়ে থাকা দেশের কাছ থেকে সহায়তা নেয়। দীর্ঘদিনের গৃহযুদ্ধের ক্ষত থেকে এখনো বেরোতে পারেনি শ্রীলংকা। দেশটিতে ব্যালান্স অব পেমেন্টের ঘাটতিও অনেক। সবকিছু মিলিয়ে অনেক দিন থেকেই রিজার্ভের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারছে না শ্রীলংকা।

এরই মধ্যে সোয়াপের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে ২০ কোটি ডলার সংগ্রহের চুক্তি করেছে শ্রীলংকা। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ডব্লিউডি লাক্সমান জানিয়েছেন, আগস্টের পর আরেকটি চুক্তির মাধ্যমে ভারত থেকে ২০ কোটি ডলার সংগ্রহের প্রত্যাশা করছেন তিনি। এছাড়া প্রয়োজন দেখা দিলে চীনা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকেও আরো ১৫০ কোটি ডলারের মতো সংগ্রহ করা যাবে বলে মনে করছেন তিনি।

গত বছরের শেষ নাগাদ সার্কভুক্ত কয়েকটি দেশের সঙ্গে সোয়াপ চুক্তি করে শ্রীলংকা। চুক্তির ভিত্তিতে স্বল্পমেয়াদি ঋণ হিসেবে পাওয়া অর্থ ফেব্রুয়ারিতে শোধ করেছে দেশটি। সম্প্রতি তিনি দেশটির স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানান, আরো কিছু জায়গা থেকে ডলার সংগ্রহ করা যাবে। মুহূর্তে কুলিং-অফ পিরিয়ড হিসেবে ছয় মাস অপেক্ষার পর আগস্টে তা সংগ্রহের উপযোগী হবে।

তিনি আরো জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডলার সংগ্রহের প্রক্রিয়াও এখন অত্যন্ত দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে এক মাসের মধ্যেই তা হাতে পাবে শ্রীলংকা।

সেন্ট্রাল ব্যাংক অব শ্রীলংকার ইকোনমিক রিসার্চ বিভাগের পরিচালক চন্দ্রনাথ অমরাসেকেরা গতকাল জানিয়েছেন, চীনের সঙ্গে সোয়াপ ছাড়াই বছর শেষে রিজার্ভ ৪০০-৪৫০ কোটি ডলারের মধ্যে ধরে রাখা যাবে। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এর পরিমাণ আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ এক্ষেত্রে আমরা চীনের সঙ্গে ১৫০ কোটি ডলারের সোয়াপের বিষয়টি হিসাবে আনিনি।

তিনি বলেন, বছর শেষে রিজার্ভের যে পরিমাণ দাঁড়াবে তা দিয়ে তিন মাসের মতো আমদানি বাণিজ্যের চাহিদা মেটানো সম্ভব। চীনের কাছ থেকে পাওয়া ডলার যুক্ত হলে আমদানির সক্ষমতা বাড়বে আরো এক মাসের জন্য।

এছাড়া আগস্টে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছ থেকে সাড়ে ৭৮ কোটি ডলারের আরেকটি তহবিল পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান অমরাসেকেরা। এছাড়া দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক আন্তর্জাতিক মুদ্রাবাজার থেকে আরো ৭০ কোটি ডলার কেনার কথা ভাবছে সেন্ট্রাল ব্যাংক অব শ্রীলংকা। আগামী বছরের প্রথমার্ধের মধ্যেই এসব ডলার সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে প্রত্যাশা অমরাসেকেরার।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন