ব্যাংকার বহি সাক্ষ্য আইনের খসড়া সংসদে উঠছে আজ

অনুমতি ছাড়া গ্রাহকের তথ্য প্রকাশে জেল-জরিমানার বিধান

নিজস্ব প্রতিবেদক

ব্যাংক খাতের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে ১৮৯১ সালের ব্যাংকার বহি সাক্ষ্য আইনটি পরিমার্জন করে যুগোপযোগী করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। লক্ষ্যে গত ফেব্রুয়ারি ব্যাংকার বহি সাক্ষ্য আইন-২০২১-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। আজ জাতীয় সংসদ অধিবেশনে আইনটি পাসের জন্য উপস্থাপন করার কথা রয়েছে। খসড়া আইনে ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী অনুমোদিত ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারো কাছে কোনো গ্রাহকতথ্য প্রকাশ করলে তিন বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধানের কথা বলা হয়েছে।

মূলত ব্যাংকের গ্রাহকদের তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষার জন্য ১৮৯১ সালে আইনটি প্রণয়ন করা হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে সীমিত আকারে এটি সংশোধন করা হলেও নতুন করে পরিমার্জিত আইন হিসেবে এবারই খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে।

খসড়া আইনে কম্পিউটার সিস্টেম, ইলেকট্রনিক স্বাক্ষর প্রভৃতির সংজ্ঞায়ন করা হয়েছে। এগুলো তথ্য-প্রমাণ হিসেবে আইনগত দলিলের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। ফলে আইনি কার্যক্রমে এগুলো দালিলিক প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব হবে। খসড়া আইনে ডিজিটাল পদ্ধতিতে যেসব রেকর্ড হবে, সেগুলোও ব্যাংকার বহি সাক্ষ্য আইন-এর আওতায় বিবেচিত হবে। ব্যাংকগুলোর লেজার বুক, ক্যাশ বুক, লোন ডিসপার্জ বুকসহ সবই অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচিত হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ব্যাংক খাতে প্রযুক্তি এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে রেখেছে। তবে আইনি সীমাবদ্ধতার কারণে প্রযুক্তির বিভিন্ন বিষয়কে সাক্ষ্য আইনে অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ ছিল না। একই সঙ্গে ব্যাংক খাতে বিভিন্ন নতুন নতুন আইন সংস্থা এসেছে। এগুলোর কথাও সাক্ষ্য আইনে বলা হয়েছে।

আইনের খসড়া অনুযায়ী সংঘটিত অপরাধের তদন্ত বা বিচারের উদ্দেশ্যে গ্রাহকের তথ্যসংশ্লিষ্ট সংস্থার ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে দেয়া যাবে। এসব ক্ষেত্রে তথ্য পেতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পরিচালক বা সমমর্যাদার কোনো ব্যক্তির লিখিত অনুমোদন থাকতে হবে। এছাড়া সংস্থার প্রধান বা জাতীয় বেতন স্কেলের পঞ্চম গ্রেডের নিচে নয় এমন কর্মকর্তার লিখিত অনুরোধ থাকলে তথ্য দেয়া যাবে। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুসারে যেকোনো অনুসন্ধান বা তদন্তের জন্য কোনো উপযুক্ত আদালত বা বিশেষ ট্রাইব্যুনালের আদেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা গ্রাহকের তথ্য চাইতে পারবে। যেকোনো প্রয়োজনে বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটও ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে গ্রাহকের তথ্য চাইতে পারবে।

আইনের খসড়ায় বলা হয়, ব্যাংককে সেবা দেয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ আইনজীবী, পরামর্শক বা উপদেষ্টা ছাড়া অন্য কারো কাছে তথ্য প্রকাশ করা যাবে না। আইনে আউটসোর্সিং ব্যবস্থার আওতায় ব্যাংকিং বা অনুষঙ্গ কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে সীমিত আকারে তথ্য প্রকাশের সুযোগ রাখা হয়েছে। ব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয় এমন কোনো সেবাদানকারী তৃতীয় পক্ষের কাছেও তথ্য প্রকাশ করা যাবে। তবে এক্ষেত্রে কোনো গ্রাহকের আমানতের তথ্য প্রকাশ করতে হলে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের সম্মতি নিতে হবে। ঋণের তথ্য প্রকাশের আগেও গ্রাহককে বিষয়ে অবহিত করতে হবে।

প্রস্তাবিত ব্যাংকার বহি সাক্ষ্য আইন, ২০২১- তথ্য প্রকাশের অনুমোদিত ক্ষেত্র আদালতের এখতিয়ার সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। বেআইনিভাবে তথ্য প্রকাশ করা হলে দায়ী ব্যক্তিকে অনধিক তিন বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান বিলে সংযোজন করা হয়েছে, যা গ্রাহকের তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষায় ভূমিকা রাখবে। অপরদিকে প্রস্তাবিত বিলে সংশ্লিষ্ট পক্ষকে আইনানুগভাবে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদানের সুযোগও রাখা হয়েছে।

প্রস্তাবিত বিলে বলা হয়, আইনের অধীন অপরাধ -আমলযোগ্য, জামিনযোগ্য আদালতের সম্মতি সাপেক্ষে আপসযোগ্য হবে। কোড অব ক্রিমিন্যাল প্রসিডিউর, ১৮৯৮- যা- থাকুক না কেন, সাব-ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার নিচে নন, এমন কোনো পুলিশ কর্মকর্তার লিখিত প্রতিবেদন ছাড়া আদালত আইনের অধীন কোনো অপরাধ বিচারের জন্য গ্রহণ করবেন না। তবে আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধের তদন্ত, বিচার, আপিল সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে কোড অব ক্রিমিন্যাল প্রসিডিউর, ১৮৯৮-এর বিধানগুলো প্রযোজ্য হবে।

এতে আরো বলা হয়, আইনের অধীন সরল বিশ্বাসে করা কোনো কাজের ফলে কোনো ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে, এজন্য ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে কোনো দেওয়ানি বা ফৌজদারি মামলা বা অন্য কোনো আইনগত কার্যক্রম গ্রহণ করা যাবে না।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন