সীমান্তবর্তী চার জেলায় সংক্রমণ হার ৩০ শতাংশের বেশি

নিজস্ব প্রতিবেদক

সম্প্রতি দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সংক্রমণের হার বিবেচনায় নিয়ে সীমান্তবর্তী ১৩ জেলাকে তিন ভাগে ভাগ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর মধ্যে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও দিনাজপুর চার জেলায়ই সংক্রমণ শনাক্তের হার ৩০ শতাংশের বেশি। গতকাল এক অনলাইন বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম এসব কথা জানান।

ডা. নাজমুল ইসলাম জানান, সংক্রমণের হার অনুযায়ী সীমান্তবর্তী ১৩ জেলাকে তিন ভাগে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩০ শতাংশের ওপরে সংক্রমণ থাকায় কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও দিনাজপুর জেলাকে প্রথম অবস্থানে রাখা হয়েছে। ১০ শতাংশের ওপরে সংক্রমণ থাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর নওগাঁকে দ্বিতীয় অবস্থানে এবং থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে সংক্রমণ থাকায় সাতক্ষীরা, যশোর, খুলনা, চুয়াডাঙ্গা পিরোজপুর জেলাকে তৃতীয় অবস্থানে রাখা হয়েছে।

মুখপাত্র বলেন, এসব জেলায় সংক্রমণ কমাতে স্বাস্থ্যকর্মীরা স্থানীয় বিভিন্ন নির্দেশনা বাস্তবায়ন করছেন। সংকট মোকাবেলায় চিকিৎসকনার্সসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী প্রয়োজনীয় জরুরি যন্ত্রপাতি স্থানীয়ভাবে স্থানান্তর করে স্বাস্থ্যসেবা অব্যাহত রাখা হয়েছে।

অধিকতর সংক্রমণের জেলাগুলোয় বিশেষায়িত, জেলা, উপজেলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে পুরোপুরি প্রস্তুত করা হয়েছে। তিনি বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানকে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়েছে। ওষুধসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য উপকরণও দেয়া হয়েছে। কোনো ধরনের উপসর্গ থাকলেই স্থানীয়দের সেখানে গিয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে হবে। প্রাথমিক অবস্থায়ই চিকিৎসা সেবা নিলে ৯০ শতাংশ বা তার বেশি রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে না।

সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণে নমুনা সংগ্রহ বাড়ানো হয়েছে বলে স্বাস্থ্য বুলেটিনে জানানো হয়। মুখপাত্র জানান, এতে বিভিন্ন পরীক্ষাগারে অনেক নমুনা জমেছে। এমন পরিস্থিতিতে করোনা পরীক্ষার ফল দ্রুত সরবরাহ করতে সীমান্তবর্তী জেলার পাশের এলাকার পরীক্ষাগারে নমুনা পাঠানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় সংক্রমণের হার অনেক বেশি। যে কারণে সরকারি উদ্যোগে সেখানে বিধিনিষেধ চলমান রয়েছে। তাই অঞ্চলগুলোতে অ্যান্টিজেন টেস্ট বাড়ানো হয়েছে।

এদিকে গতকাল দেশে আরো ৪৭ জন কভিড-১৯ পজিটিভ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর সংখ্যা পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে গত মে ৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরো হাজার ৪৩৬ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটির সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৫১২টি পরীক্ষাগারে ১৮ হাজার ৭৪৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পর্যন্ত সরকারি বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৬১ লাখ ৭৫ হাজার ১১২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। সর্বশেষ আক্রান্তদের সংখ্যা বিবেচনায় দেশে করোনা রোগী দাঁড়িয়েছে লাখ ২৬ হাজার ৯২২ জনে। আর মারা গেছেন ১৩ হাজার ১১৮ জন কভিড-১৯ পজিটিভ রোগী। সর্বশেষ হাজার ২৪২ জন চিকিৎসাধীন করোনা রোগী সুস্থ হওয়ায় মোট সুস্থতার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে লাখ ৬৬ হাজার ২৬৬।

গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১২ দশমিক ৯৯ শতাংশ। পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯২ দশমিক ৬৬ শতাংশ মৃত্যুর হার দশমিক ৫৯ শতাংশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানদণ্ড অনুযায়ী, কোনো দেশে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা, তা নির্ধারণে রোগী শনাক্তের হার বিবেচনায় নেয়া হয়। এক্ষেত্রে সংক্রমণের হার টানা দুই সপ্তাহের বেশি সময় শতাংশের নিচে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরা যায়।

দেশে গত বছরের মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। চলতি বছরের ৩১ মে করোনা রোগীর সংখ্যা আট লাখ পেরিয়ে যায়। এর মধ্যে গত এপ্রিল একদিনে সর্বোচ্চ হাজার ৬২৬ জন কভিড-১৯ পজিটিভ রোগী শনাক্ত হয়। প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর প্রথম মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ১১ জুন মৃত্যুর সংখ্যা ১৩ হাজার অতিক্রম করে। দ্বিতীয় পর্যায়ে সংক্রমণের মধ্যে গত ১৯ এপ্রিল দৈনিক হিসাবে সর্বোচ্চ ১১২ জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন