আলোকপাত

‘জীবন-জীবিকার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় বাজেট’—একথা বোধগম্য নয়

ড. শামসুল আলম

জাতীয় সংসদে বাজেট ২০২১-২২ নিয়ে আলোচনা চলমান রয়েছে। আমরা জানি, মোট বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে লাখ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা, যা হয়তো অপরিবর্তিতই থাকবে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (বাস্তবায়নের দ্বিতীয় বাজেট) প্রাক্কলন ছিল লাখ হাজার ১০০ কোটি টাকা। ঘোষিত বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় বরাদ্দ দেখানো হয়েছে লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা, যা অষ্টম পঞ্চবার্ষিকে প্রাক্কলন ছিল লাখ ১৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। বাজেটে সম্প্রসারণমূলক দৃষ্টিভঙ্গিতে উন্নয়ন বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে প্রায় অতিরিক্ত ১২ হাজার কোটি টাকা, যা কভিডকালীন পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাস্তবানুগ পদক্ষেপ। মোটা দাগে মোট ব্যয়ে বাজেট পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সামঞ্জস্য সরকার যে পরিকল্পনামাফিক এগোয় তারই প্রতিফলন।

বাজেট আলোচনায় বরাবরের মতো বিষয় হলো, বরাদ্দ কম হয়েছে, বিশেষভাবে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, দারিদ্র্য বিমোচনে তেমন কর্মসূচি নেই, নতুন দরিদ্রদের নিয়ে কিছু বলা হয়নি, বাজেট জীবন-জীবিকার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়, মধ্যবিত্ত হতাশ, ব্যবসায়ীরা খুশি, মহামারী বাস্তবতা উঠে আসেনি, প্রবৃদ্ধির হার অর্জিত হবে না ইত্যাদি।

বরাদ্দ দিয়ে বাজেটের সফলতা বিবেচনা করা কতটা যুক্তিযুক্ত, এটা আমার কাছে প্রশ্নবোধক মনে হয়, কেননা যেখানে পুরো বাজেট বরাদ্দ সাধারণত ব্যয়িত হয় না। মূল বাজেটের ১৮-২০ শতাংশ অব্যয়িত থেকে যায়, বিশেষভাবে যে মন্ত্রণালয়গুলোর জন্য সচরাচর বেশি বরাদ্দের দাবি তোলা হয়। বাজেট প্রতি বছরই আকারে বেড়ে যায়, জনবল সেভাবে বাড়ে না, তার পরও সংশোধিত বাজেটের ৯২-৯৫ শতাংশ প্রতি বছরই ব্যয়িত হয়ে থাকে। টাকার অংকে প্রতি বছরই বাজেট বাস্তবায়ন বাড়ছে।

স্বাধীনতার পর প্রথম বাজেট ছিল ৭৮৬ কোটি টাকার, আর বছরের বাজেট আগেই বলেছি লাখ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। প্রথম বাজেটের প্রায় ৭৬৮ গুণ এবং সময়ে জনবল বেড়েছে ১০-১১ গুণ। কাজেই বাজেট বাস্তবায়ন বরাবরই চ্যালেঞ্জপূর্ণ থেকে গেছে। মনে করি, টাকা বরাদ্দ আসলে কোনো সমস্যা নয়। বাজেট বাস্তবায়নের সার্থকতা আসলে দেখতে হবে বাস্তবায়ন দক্ষতার ওপর এবং ভৌত আর্থসামাজিক ফলাফলের কী পরিবর্তন হচ্ছে, যাকে বলা যায় ফলাফলভিত্তিক কর্মাকৃতি (Results based performance) এই শেষের বিবেচনায় গত এক যুগে বাজেট বাস্তবায়ন অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে অধিক সফল বা এক কথায় চমত্কার। এই কভিডকালেও গত প্রায় দুই অর্থবছরে আমাদের রফতানি বেড়েছে, প্রবাসী আয় বেড়েছে, কৃষিজ উৎপাদন বেড়েছে, শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধি ১০ শতাংশের কাছাকাছি ছিল। গত অর্থবছরে ৩৩ বিলিয়ন বৈদেশিক রিজার্ভ থেকে বর্তমান অর্থবছরের ১০ মাসে ৪৫ বিলিয়ন রিজার্ভ বেড়েছে, বিনিময় হার প্রায় স্থিতিশীল, সুদহার কমেছে এবং চলতি অ্যাকাউন্ট পজিটিভ। এতসব সামষ্টিক অর্থনীতির প্রাসঙ্গিক সূচক বিবেচনা করলে সরকার বাজেট বাস্তবায়নে (ব্যয়ে) খুব খারাপ করছে, এটা তো বলা যাবে না। তবে বাজেট বাস্তবায়ন আরো বেশি হলে আরো ভালো হতো, এটা তো বটেই। মোটা দাগে বলতে হবে, ব্যয় সক্ষমতা ব্যবস্থাপনা দক্ষতা বেড়েছে বলেই সামষ্টিক কর্মাকৃতি এই বিশ্বদুর্দিনেও বাংলাদেশ অন্যের অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হতে পেরেছে। সাম্প্রতিক ব্লুমবার্গের (জুন ২০২১) প্রতিবেদন স্মরণ করুন, যেখানে বলা হয়েছে ভারত পাকিস্তান অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশকে অনুসরণ করতে পারে। ১৯৭১ সালে তত্কালীন পশ্চিম পাকিস্তান বাংলাদেশের চেয়ে ৭০ শতাংশ বেশি ধনী ছিল, আর এখন বাংলাদেশ পাকিস্তানের চেয়ে ৪৫ শতাংশ বেশি ধনী। গত এক যুগে বিস্ময়কর পরিবর্তন ঘটেছে।

বরাদ্দের বিষয়ে স্বাস্থ্য খাতকে খোলা চেক দেয়া আছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রথম থেকেই বলে আসছেন, স্বাস্থ্য খাতে যা প্রয়োজন, বরাদ্দের প্রশ্ন নেই, তাই দেয়া হবে। স্বাস্থ্য খাতে প্রকল্প ব্যয় আশানুরূপ বাড়ানো যায়নি, তার কারণ অধিকাংশ স্বাস্থ্য উপকরণ আমদানিনির্ভর, বহির্দেশীয় সরবরাহ শৃঙ্খল কভিড-সংক্রান্ত কারণে বাধাগ্রস্ত বা ধীরগতি হয়েছে। আমাদের দেশেও প্রকল্প পরিচালকদের প্রায় সবাই পেশাজীবী ডাক্তার হওয়ায় কভিড চিকিৎসাসেবার অত্যধিক চাহিদায় ক্লিনিক্যাল দায়িত্বে আগের চেয়ে অনেক বেশি সময় দিতে হয়েছে। প্রকিউরমেন্ট বিধিবিধান সম্পর্কে প্রকল্প পরিচালকদের আরো অবগত করানোর জন্য এখন সরকার থেকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একথা স্বীকার্য, শিক্ষা খাতসহ মন্ত্রণালয়গুলোর বাস্তবায়ন দক্ষতা আরো বাড়ানোর জন্য প্রকিউরমেন্ট ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রশিক্ষণসহ প্রশাসনিক বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এরই মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। অর্থবছরের শুরুতেই সব ত্রৈমাসিকের টাকা একত্রে আগাম ছাড় করা হচ্ছে। প্রকিউরমেন্ট কন্ট্যাক্ট চুক্তির জন্য -টেন্ডারিংয়ে যেতে হবে। এক প্রকল্প পরিচালক একই সময়ে একাধিক প্রকল্পের পরিচালক হতে পারবেন না। প্রকল্প পরিচালকদের প্রকল্প বাস্তবায়ন এলাকায় বা সন্নিকটে সর্বাধিক থাকতে হবে। বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করায় এমন সব গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। তার পরও অবশ্যই মন্ত্রণালয়গুলোর প্রশাসনিক দক্ষতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।

দরিদ্রদের নিয়ে কিছু বলা হয়নি এবং বাজেট জীবন-জীবিকার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, এসডিজি রূপকল্প ২০২১-৪১-এর মূল লক্ষ্যই হচ্ছে দারিদ্র্য কমিয়ে আনা এবং ক্রমান্বয়ে শূন্য দারিদ্র্য লক্ষ্য অর্জন। লক্ষ্য অর্জনে এবং সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠা সহজতর করার জন্য আয়বৈষম্য কমিয়ে আনা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিও বাজেট পরিকল্পনার ঘোষিত/অঘোষিত চূড়ান্ত লক্ষ্য। সামাজিক সুরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি (বাজেটের ১৮ শতাংশ) হচ্ছে মূলত দরিদ্রদের ঘিরে। সুরক্ষা ব্যয়ের ৭৫ শতাংশই সরাসরি দারিদ্র্যকেন্দ্রিক। কৃষি খাতের সব ব্যয় নিম্নমধ্যবিত্ত, খুদে ব্যবসায়ী, ভূমি শ্রমিক নিঃস্বদের জন্য ব্যয়িত। এটা ঘোষণা দিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। সরাসরি ঘোষণা দিয়ে আছে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচিতে ২০২১-২২ অর্থবছরে হাজার ৬৫০ কোটি টাকা। সরকার পরিচালিত আটটি ফাউন্ডেশন/প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ক্ষুদ্র প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কর্মসৃজনে হাজার ৫০০ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দের কথা উল্লেখ আছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে দারিদ্র্য হ্রাসে ভূমিকা রাখবে এরূপ বরাদ্দের পরিমাণ মোট লাখ ৪২ হাজার ১০৬ কোটি টাকা (বাজেটের প্রায় ৫৭ শতাংশ) বাজেটে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, পল্লীর দরিদ্র সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর আয়বর্ধক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধিতে পল্লী এলাকায় বিনিয়োগ বাড়ানো হবে।

জীবন-জীবিকার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় বাজেট’—একথা বোধগম্য নয় কারণে যে স্বাস্থ্য খাতে সমুদয় ব্যয় তো সরাসরি জীবনসংশ্লিষ্ট। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে চীন, রাশিয়াসহ অন্যান্য উৎস থেকে জরুরি ভিত্তিতে টিকা সংগ্রহ করা হচ্ছে। টিকা ক্রয় বাবদ উন্নয়ন পরিচালন বাজেটে মোট ১৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ব্যয় জীবনসংশ্লিষ্ট নয় তো কী? সমন্বিত স্বাস্থ্যবিজ্ঞান গবেষণাও রাখা হয়েছে। কৃষির সমুদয় ব্যয়, পরিবহন খাতের সমুদয় ব্যয় (সর্বোচ্চ বাজেট বরাদ্দ) সরাসরি জীবিকাসংশ্লিষ্ট। বাজেট প্রণয়ন একটি কাঠামোভিত্তিক খাত অনুযায়ী বড় বরাদ্দ তালিকা। বাজেটে সম্পদ বণ্টন করা হয় খাতভিত্তিক। প্রতিটি খাত কতকগুলো মন্ত্রণালয়ের সমষ্টি। বরাদ্দ খাতভিত্তিক আবার মন্ত্রণালয়ভিত্তিকও দেখানো হয়ে থাকে। বরাদ্দ/সম্পদ বণ্টন পাঁচ বছরের জন্য পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় দেখানো হয়ে থাকে, যা হালনাগাদ তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে কিছুটা বিন্যাস করা হলেও মোটা দাগে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাকেই অনুসরণ করা হয়। পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় দেশভিত্তিক, মন্ত্রণালয়ভিত্তিক অভীষ্ট, লক্ষ্যমাত্রা এবং লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কৌশল বর্ণনা দেয়া থাকে। সেই অনুযায়ী মন্ত্রণালয়গুলো বাজেট বরাদ্দ পেয়ে পরিকল্পনায় বর্ণিত লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে প্রকল্প গ্রহণ বা বিশদ কর্মসূচি প্রণয়ন করে। বাজেট বরাদ্দকেন্দ্রিক; পরিকল্পনা অভীষ্ট, লক্ষ্যমাত্রা কৌশলকেন্দ্রিক। আমরা অনেকেই বাজেটে বিস্তারিত কর্মসূচি প্রত্যাশা করি, যে কারণে বলা হচ্ছে কভিড মোকাবেলায় বিস্তারিত কর্মসূচি নেই। বাজেটে বরাদ্দের মন্ত্রণালয় অনুযায়ী বিশদ কর্মসূচি দিতে গেলে তার আকার হতে হবে হাজার পৃষ্ঠাব্যাপী। এতে মন্ত্রণালয়গুলোর অধিকার স্বাধীনতাও ক্ষুণ্ন হবে। নতুন দরিদ্রদের জন্য বাজেটে কিছু বলা হয়নি। নতুন হোক, পুরনো হোক সবার ব্যথা একই। দারিদ্র্য সংখ্যা কোনো ধ্রুব সংখ্যা নয়। এটি প্রতি বছরই দৈবদুর্বিপাকের ব্যাপ্তি, ফসলহানি, রোগ প্রাদুর্ভাবের গভীরতায় ওঠানামা করে। প্রতি বছর নতুন দরিদ্র থাকতে পারে। তবে নামার চেয়ে দারিদ্র্যসীমার ওপরে ওঠার হার বেশি হলে ক্রমান্বয়ে দারিদ্র্য কমে আসে। দারিদ্র্য বর্ণনায় আন্তর্জাতিক সংজ্ঞায়নে মৃদু/মধ্যম দারিদ্র্য হতদরিদ্র বিভাজন আছে। বাজেট পরিকল্পনায় ওভাবেই বিষয়টি দেখা হয়। নতুন দারিদ্র্য, পুরনো দারিদ্র্যের বিভাজন নেই। বাংলাদেশের ৫০ বছরে ৫০টি বাজেট হয়েছে। অভিজ্ঞতায় বাংলাদেশ বাজেট প্রণয়নে পরিপক্বতা অর্জন করেছে বললে অত্যুক্তি হবে না। সে কারণেই বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বাজেট পেশের পর এখন জন-অসন্তুষ্টির প্রকাশ ঘটে না। রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি অর্থনৈতিক সূক্ষ্ম বাস্তবতা বিবেচনায় এখন বাজেট প্রণীত হয় বলেই জন-অসন্তোষ ঘটে না।

প্রবৃদ্ধির হার অর্জিত হবে না বলা হয়েছে। প্রবৃদ্ধির হার যা ধরা হয়েছে, এডিবিও তেমনই প্রক্ষেপণ করেছে। সামগ্রিক বিনিয়োগের ওপর ভিত্তি করে প্রবৃদ্ধির একটা প্রাক্কলন করা হয়েছে। কেননা সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলো অর্থনীতি উজ্জীবনের ইঙ্গিত দেয়। তার পরও কভিড মোকাবেলা করার বাজেটে প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রাণান্তকর প্রয়াস প্রতিভাত না- হতে পারে। তবে সম্প্রসারণমূলক বাজেট প্রণয়নের মূল লক্ষ্য হচ্ছে অর্থনীতি চাঙ্গা করা এবং প্রণোদনা প্যাকেজগুলোও তাত্ক্ষণিক প্রণীত হয়েছিল জীবিকাকে সমুন্নত রাখার লক্ষ্যেই। সম্প্রসারণমূলক বাজেটের ধারাবাহিকতায় এবার কর ছাড়ের বাজেট করা হয়েছে, কর অবকাশ ঘোষণা করা হয়েছে প্রক্রিয়াকরণ শিল্প, চিকিৎসা-সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি আমদানি, কৃষি যন্ত্রায়ন শিল্প প্রতিষ্ঠায় এবং সংরক্ষণমূলক করারোপ করা হয়েছে আমদানিমূলক মোবাইল সেটের ওপর, সে সময়ে দেশে যখন গড়ে উঠছে স্যামসাং মোবাইল সেট সংযোজন তৈরির শিল্পপ্রতিষ্ঠান। শুধু মোবাইল সেট সংযুক্তি রফতানি করে ভিয়েতনাম ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে। মোটরসাইকেল, ওয়াশিং মেশিন, স্থানীয়ভাবে কম্পিউটার উৎপাদনে ব্যবহূত কাঁচামাল/উপকরণ আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা দেয়া হয়েছে। সময়োপযোগী এসব পদক্ষেপ এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী অভিজ্ঞ ব্যবস্থাপনার কারণে বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধির নেতিবাচক অর্জন পরিহার করতে পেরেছে কভিডকালে, যা পারেনি শক্তিশালী বাজারভিত্তিক রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ, এমনকি পাশের দেশ ভারতও। কর রেয়াত, কর ছাড়, করপোরেট কর কমানোয় ব্যবসায়ীরা সন্তুষ্ট বলা হচ্ছে। আমাদের মোট বিনিয়োগের ৮০ শতাংশ করেন ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা। কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে তাদের ভূমিকা প্রায় একচ্ছত্র। সরকারি ২০ শতাংশ বিনিয়োগের মূল লক্ষ্য মূলত বিনিয়োগ অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে সহায়তা করা। যোগাযোগ অবকাঠামো, ভৌত অবকাঠামো মানবসম্পদ সৃষ্টি, নীতি কাঠামো তৈরি, চুক্তি বাস্তবায়ন নিশ্চতকরণে সরকার বিনিয়োগ করেক। তাবৎ ব্যবসায়ীকুল বাজেটে সন্তুষ্টি প্রকাশ করলে বলা যায়, বাজেট অনুকূল বিনিয়োগ পরিবেশ তৈরিতে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পেরেছে। উন্নয়নমুখী হিসেবে এতে আমরা আনন্দিত। অর্থনীতি চাঙ্গা করার সঠিক পথেই রয়েছে বাংলাদেশ।

তাহলে সর্বশেষ বলতে হয়, এমন বাজেট এবার পেয়েছি, যা দেশে বিনিয়োগ অনুকূল; যা অর্থনীতি উজ্জীবনে ভূমিকা রাখবে; কভিড সংক্রমণে আক্রান্ত অর্থনীতির জন্য যা লাইফ লাইন। আর জীবন বাঁচানোর সর্বতো প্রয়াস তো আছেই। কভিড সংক্রমণে মৃত্যু কমাতে তুলনামূলকভাবেও সরকার সফল। কভিডে আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুহার বিশ্ব গড় (উন্নত দেশগুলোসহ) দশমিক শূন্য শতাংশ আর বাংলাদেশে কভিড আক্রান্তের মৃত্যুহার দশমিক ৫৮ শতাংশ। এবারো জনবিরূপতাহীন বাজেট পেয়েছি, এটাই বাজেটের বড় সফলতা।

 

. শামসুল আলম: সিনিয়র সচিব, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ

বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশন

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন