প্রযুক্তি জায়ান্টদের নিয়ন্ত্রণে পাঁচটি নতুন বিল উত্থাপন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যরা।
এতে অ্যাপল, গুগল, ফেসবুক ও অ্যামাজনের মতো কোম্পানিগুলোর অভূতপূর্ব ক্ষমতার রাশ টেনে ধরার বিধান থাকবে।
তুলনামূলক ছোট কোম্পানিকে কিনে ফেলা এবং নিজেদের প্লাটফর্মে অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের সমতাপূর্ণ সুযোগ না দেয়ার মতো বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণে আনা হচ্ছে কঠোর বিধিনিষেধ।
খবর রয়টার্স ও নিউইয়র্ক টাইমস।
পাঁচটি বিলে সরাসরি অ্যামাজন, অ্যাপল, ফেসবুক ও গুগলের দিকে তীর নিশানা করা হয়েছে।
এ চার প্রযুক্তি জায়ান্টের তত্পরতা ১৬ মাস তদন্ত শেষে এ বিলের খসড়া করা হয়েছে।
গত কয়েক দশকে এ প্রযুক্তি জায়ান্টগুলো যেভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য, তথ্য ও বিনোদন খাতে দখল নিয়েছে, তা নিয়ন্ত্রণে আনতে নতুন বিলগুলো আনছেন মার্কিন আইনপ্রণেতারা।
গত কয়েক বছরে প্রযুক্তি জায়ান্টগুলো যেভাবে তাদের ক্ষুদ্র প্রতিদ্বন্দ্বীগুলোকে অধিগ্রহণ করে নিয়েছে, সামনের দিনগুলোতে সহজেই তা করা যাবে না।
যে পাঁচটি বিল উত্থাপিত হয়েছে সেগুলো হচ্ছে—দ্য আমেরিকান চয়েস অ্যান্ড ইনোভেশন অনলাইন অ্যাক্ট।
প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর নিজের প্লাটফর্ম ব্যবহার করে নিজস্ব পণ্য বিক্রিতে অবৈধ সুবিধা ঠেকাতে এ বিল আনা হয়েছে।
দ্য প্লাটফর্ম কম্পিটিশন অ্যান্ড অপরচুনিটি অ্যাক্ট অব ২০২১ বিলটির মাধ্যমে প্রযুক্তি জায়ান্টগুলো কর্তৃক তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানিগুলোকে কিনে ফেলা ঠেকানো যাবে।
অন্য তিনটি বিল হচ্ছে যথাক্রমে—দ্য এন্ডিং প্লাটফর্ম মনোপলিস অ্যাক্ট, দ্য অগমেন্টিং কম্প্যাটিবিলিটি অ্যান্ড কম্পিটিশন বা এনাবলিং সার্ভিস সুইচিং (অ্যাকসেস) অ্যাক্ট অব ২০২১ এবং দ্য মার্জার ফাইলিং ফি মডার্নাইজেশন অ্যাক্ট অব ২০২১।
বিলগুলো আইনে পরিণত হলে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো যেভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে, তা একেবারেই পাল্টে যাবে।
কোনো অধিগ্রহণের সময় ফেসবুক ও গুগলকে তদারকি কর্তৃপক্ষের কাছে প্রমাণ করতে হবে এটা প্রতিযোগিতা নীতি লঙ্ঘন করছে না।
১৬ মাসের তদন্ত শেষে গত বছর অ্যান্টিট্রাস্ট সাবকমিটি এক প্রতিবেদন পেশ করে।
৪৪৯ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে কীভাবে অ্যামাজন, অ্যাপল, ফেসবুক ও গুগল বেশ কয়েকবার একচেটিয়া ব্যবসার নীতিমালা লঙ্ঘন করেছে।
চীনের উত্থান ঠেকাতে উত্থাপিত বিলে সিনেটে যেমন উভয় দলের আইনপ্রণেতাদের সমর্থন পাওয়া গেছে, এ বিলটিতেও ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা তাদের বিরোধিতা পেছনে রেখে এগোবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
বিলগুলোর সমর্থক হাউজ প্রতিনিধি প্রমীলা জয়পাল এক বিবৃতিতে বলেন, অ্যামাজন, ফেসবুক, গুগল ও অ্যাপল স্পষ্টত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল এবং তারা এতই শক্তিশালী হয়েছে যে মানুষের চেয়ে মুনাফায় দৃষ্টি তাদের।
কংগ্রেসে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে এ ঐতিহাসিক বিলগুলো উত্থাপন করেছি, যাতে প্রযুক্তি জায়ান্টগুলোর একচেটিয়া চর্চা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
বিলটি আইনে পরিণত হতে হলে তা মার্কিন কংগ্রেসের উভয়কক্ষ-প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটে পাস হতে হবে।
দুই কক্ষে পাস হওয়ার পর তাতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্বাক্ষর করবেন এবং তা আইনে পরিণত হবে।
সাম্প্রতিক দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তেই কঠিন চাপের মুখে আছে প্রযুক্তি জায়ান্টগুলো।
ইউরোপেও অ্যান্টিট্রাস্ট তদন্তের মুখোমুখি তারা, এমনকি সম্প্রতি ফ্রান্সে বড় অংকের জরিমানা গুনেছে গুগল।
অস্ট্রেলিয়ায় নতুন আইন পাস হয়েছে এবং ভারত সরকার সোস্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলোর রাশ টেনে ধরার চেষ্টা করছে।