এক মাসের ব্যবধানে দেশে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এক হাজার রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এতে মৃতের সংখ্যা ১৩ হাজার ছাড়িয়েছে। গতকাল ৪৩ জন কভিড-১৯ পজিটিভ রোগীর মৃত্যু হওয়ায় মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৩২ জনে। সর্বশেষ আরো ২ হাজার ৪৫৪ জনের শরীরে ভাইরাসটির সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
প্রাণঘাতী ভাইরাসটির সংক্রমণ ঠেকাতে চলমান বিধিনিষেধের মধ্যেই গত ১১ মে দেশে মৃতের সংখ্যা ১২ হাজার পেরিয়ে যায়। গত বছরের ১৮ মার্চ এ ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর তথ্য জানায় সরকার। এর আড়াই মাস পর গত বছরের ১০ জুন মৃতের সংখ্যা ১ হাজার ছাড়ায়। এরপর ৫ জুলাই ২ হাজার, ২৮ জুলাই ৩ হাজার, ২৫ আগস্ট ৪ হাজার, ২২ সেপ্টেম্বর ৫ হাজার, ৪ নভেম্বর ৬ হাজার, ১২ ডিসেম্বর ৭ হাজার, চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি ৮ হাজার, ৩১ মার্চ ৯ হাজার, ১৫ এপ্রিল ১০ হাজার ও ২৫ এপ্রিল ১১ হাজার ছাড়িয়ে যায় মৃতের সংখ্যা। এর মধ্যে গত ১৯ এপ্রিল দৈনিক হিসেবে সর্বোচ্চ ১১২ জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়।
এদিকে নতুন আক্রান্তদের নিয়ে দেশে মোট করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ২২ হাজার ৮৪৯ জনে। এর আগে গত ৩১ মে এ সংখ্যা আট লাখ পেরিয়ে যায়। এর মধ্যে গত ৭ এপ্রিল একদিনে সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৬২৬ জন কভিড-১৯ পজিটিভ রোগী শনাক্ত হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৫১০টি পরীক্ষাগারে ১৮ হাজার ৫৩৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৬১ লাখ ৪৪ হাজার ৭৭৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। সর্বশেষ নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ। মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯২ দশমিক ৫৯ শতাংশ এবং মৃত্যুহার ১ দশমিক ৫৮ শতাংশ। গত একদিনে মৃতদের মধ্যে ৩০ জন পুরুষ এবং ১৩ জন নারী। সর্বশেষ বাড়ি ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরো ২ হাজার ২৮৬ জন করোনা রোগী সুস্থ হওয়ায় মোট সুস্থতার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯১৬ জনে।
দেশে করোনার সংক্রমণ শুরু হলে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয় ঢাকা বিভাগে। মৃত্যুও বেশি হয় এ বিভাগে। তবে বর্তমানে ভাইরাসটির নতুন ডেল্টা ধরনে সামাজিক বিস্তার বা কমিউনিটি ট্রান্সমিশন ঘটায় রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের ভারত সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়েছে। ঢাকা বিভাগে দৈনিক শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে এলেও রাজশাহী বিভাগে তা বেড়ে ১৭ দশমিক ৩১ শতাংশ হয়েছে। খুলনা বিভাগে তা সামান্য কমে ৩৫ শতাংশ হয়েছে।
জেলাভিত্তিক হিসাবে সর্বশেষ বাগেরহাটে শনাক্ত রোগীর হার ৪৩ শতাংশ, খুলনায় ৩৫ শতাংশ, যশোরে ৩২ দশমিক ৪ শতাংশ, রাজশাহীতে ২০ শতাংশ, চট্টগ্রামে ১৩ শতাংশ আর ঢাকায় ৪ শতাংশের কিছু বেশি। একক জেলা হিসেবে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ ৩৩৯ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। এ সময়ে ঢাকা জেলায় ২৮৫ জন, খুলনায় ১৫৬, চট্টগ্রামে ১২৯, যশোরে ১২৮, সাতক্ষীরায় ১১১ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। আর বিভাগভিত্তিক হিসাবে ঢাকার চেয়ে রাজশাহীতে সংক্রমণ বেশি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা বিভাগে ৪৮০ জন, রাজশাহীতে ৬৮২ এবং খুলনায় করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ৫৯৯ জন।
এদিকে মৃতের সংখ্যা বিবেচনায় গতকাল ঢাকা বিভাগকে পেছনে ফেলেছে রাজশাহী বিভাগ। সর্বশেষ ৪৩ জনের মধ্যে ১১ জন রাজশাহী, ১০ জন চট্টগ্রাম, আটজন ঢাকা, সাতজন খুলনা, দুজন বরিশাল, চারজন রংপুর ও একজন ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এরপর মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে শতাধিক দেশে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়লে গত বছরের ১১ মার্চ করোনাকে বৈশ্বিক মহামারী ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।