ডেল্টা লাইফের প্রশাসক পদে পরিবর্তন

নিজস্ব প্রতিবেদক

সাধারণ বীমা পলিসি গ্রাহকদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করার কারণে বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি বীমা উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সাবেক সদস্য সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লাকে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয় আইডিআরএ। সেদিন বিকালেই পুলিশের সহায়তায় কোম্পানিটির কার্যালয়ে গিয়ে তিনি দায়িত্ব নেন। তবে দায়িত্ব নেয়ার চার মাসের মধ্যেই তার ওপর আস্থা হারিয়েছে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। প্রশাসক হিসেবে সুলতান আবেদীন মোল্লার মেয়াদ শেষে নতুন করে নবায়ন না করে আরেকজনকে প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইডিআরএ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ডেল্টা লাইফের পরামর্শকের দায়িত্বে থাকা সাবেক যুগ্ম সচিব মো. রফিকুল ইসলামকে কোম্পানিটির নতুন প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাছাড়া ডেল্টা লাইফে পর্ষদের স্থগিতাদেশের মেয়াদও অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বাড়ানো হয়েছে। আইডিআরএ কর্তৃক নিয়োগ দেয়ার সময় প্রশাসক হিসেবে সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লাকে বেশকিছু সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব দেয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে নতুন পলিসি ইস্যুর পাশপাশি কোম্পানিটির প্রশাসনিক ব্যবসায়িক কার্যক্রম অব্যাহত রাখা, কোম্পানির প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আইডিআরএর পরামর্শ অনুসারে অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব মো. শাখাওয়াত নবী অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব মো. রফিকুল ইসলামকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ করে কোম্পানির প্রশাসনিক কার্যক্রম সুচারুভাবে পরিচালনা করা, দেশী কিংবা বিদেশী নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষা করা। তাছাড়া প্রশাসককে দায়িত্ব গ্রহণের চার মাসের মধ্যে আইডিআরএর কাছে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

দায়িত্ব গ্রহণের পর ডেল্টা লাইফের ব্যবসায়িক অর্থনৈতিক কার্যক্রম সচল রাখার পাশাপাশি কোম্পানিটির অ্যাকচুয়ারি আর্থিক নিরীক্ষা করানোর উদ্যোগ নিয়েছেন প্রশাসক। তাছাড়া ডেল্টা লাইফ কর্তৃক আইডিআরএ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ঘুষ দাবির কারণে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে দায়ের করা অভিযোগটি প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেন প্রশাসক। অবশ্য তার উদ্যোগের বিরুদ্ধে কোম্পানিটির সাবেক পর্ষদ সদস্যরা উচ্চ আদালতে রিট করেন। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত প্রশাসককে নিয়োগপত্রের শর্তানুসারে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন। আইডিআরএর সঙ্গে সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লার সম্পর্কের ছন্দপতন কীভাবে হয়েছে, সে বিষয়ে কেউই স্পষ্ট করে কিছু বলছেন না। দায়িত্ব পাওয়ার চার মাসের মধ্যেই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লা বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

অন্যদিকে আইডিআরএ সূত্র বলছে, সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লা বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির সাবেক সদস্য ছিলেন। সে হিসেবে তার অভিজ্ঞতার বিষয়টি বিবেচনা করে আইডিআরএ মনে করেছিল যে তাকে দায়িত্ব দেয়া হলে তিনি প্রতিষ্ঠানটির হাল ধরতে পারবেন। অথচ দায়িত্ব নেয়ার পর চার মাস হয়ে গেলেও তিনি আশানুরূপ পারফর্ম্যান্স দেখাতে পারেননি। ডেল্টা লাইফের নিরীক্ষার কার্যক্রম এখনো শেষ হয়নি। কোম্পানিটির সার্বিক বিষয়ে আইডিআরএর কাছে তার একটি প্রতিবেদন দেয়ার কথা থাকলেও তিনি চূড়ান্ত কোনো প্রতিবেদন দিতে পারেননি। তবে একটি খসড়া প্রতিবেদন দিয়েছেন, যেটি আইডিআরএর মনঃপূত হয়নি। তাছাড়া সুলতান-উল-আবেদীন দায়িত্ব নেয়ার পর বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের অহেতুক কোনো ছাড়াই বদলি করেছেন। এমনকি অনেককে ঢাকার বাইরে দূরবর্তী জেলায় বদলি করেছেন, যেগুলোর কোনো প্রয়োজনই ছিল না। এছাড়া দায়িত্ব নেয়ার পর পরই আইডিআরএ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ডেল্টা লাইফের দায়ের করা ঘুষের অভিযোগ প্রত্যাহারে নিজ থেকে উদ্যোগ নেন। অথচ এটি তার নিয়োগের শর্তের মধ্যে ছিল না। তার ধরনের কার্যকলাপে আইডিআরএ অসন্তুষ্ট ছিল। যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে গতকাল তার নিয়োগ অনুমোদন না করার মধ্য দিয়ে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লা প্রশাসক হিসেবে তার মেয়াদ নবায়নের জন্য আইডিআরএকে অনুরোধ করেছিলেন।

জানতে চাইলে আইডিআরএর নির্বাহী পরিচালক মুখপাত্র এসএম শাকিল আখতার বণিক বার্তাকে বলেন, নিয়োগের শর্তানুসারে যেসব দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল, সেগুলো সঠিকভাবে পালন করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লার প্রশাসক হিসেবে মেয়াদ নবায়ন করা হয়নি।

এদিকে সংশ্লিষ্ট আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, ডেল্টা লাইফের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অহেতুক বদলি, নতুন নিয়োগ, পদোন্নতির মতো বিষয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের আর্থিক অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লা। এর মধ্যে কোম্পানির বিনিয়োগ পোর্টফোলিও থেকে লাফার্জহোলসিমের শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে কোম্পানির কোটি টাকারও বেশি লোকসান, বার্ষিক সম্মেলনের নামে বিশাল বাজেট নির্ধারণ করে কক্সবাজারে অনুষ্ঠান করার জন্য বিনা টেন্ডারে একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফার্মকে কার্যাদেশ দেয়া এবং খাতে অর্থ ব্যয় করার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া বিভিন্ন প্রকার খরচের অজুহাতে কোম্পানি থেকে লাখ লাখ টাকা উত্তোলন করা হলেও সেগুলোর অধিকাংশই এখনো অসমন্বয়যোগ্য রয়েছে। এমনকি আইডিআরএ চেয়ারম্যানের আইনজীবী ইমতিয়াজ ফারুকের আইনি বিলও কোম্পানির অর্থে পরিশোধ করার অভিযোগ রয়েছে। এরই মধ্যে এসব বিষয়ে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির স্বতন্ত্র পরিচালক অডিট কমিটির চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন আহমদ অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছে চিঠি পাঠিয়ে অভিযোগ করেছেন। চিঠিতে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, প্রশাসক প্রত্যাহার পরিচালনা পর্ষদ পুনর্বহালের দাবি জানানো হয়েছে। আইডিআরএও সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তদন্ত করছে বলে জানা গেছে। মূলত এসব কারণে প্রশাসক হিসেবে তার নিয়োগ নবায়ন করা হয়নি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন