করোনা মহামারীতে গত বছর টানা ৬৬ দিন বন্ধ ছিল দেশের পুঁজিবাজার।
মহামারীতে বিধ্বস্ত হয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেশির ভাগ কোম্পানির ব্যবসায়িক পরিস্থিতিও।
যদিও একেবারেই বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের সবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান জনতা ক্যাপিটাল অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের (জেসিআইএল)। ২০২০ সালে দেশের পুঁজিবাজারকে কেন্দ্র করে কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রতিষ্ঠানটি নিট মুনাফা করেছে ১০ কোটি ৬১ লাখ টাকা।
চলতি বছরে জনতা ক্যাপিটালের মুনাফায় আরো বড় উল্লম্ফন হয়েছে।
গতকাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি ৪০ কোটি টাকার বেশি পরিচালন মুনাফা করেছে।
এছাড়া চলতি বছরে অন্তত ১০০ কোটি টাকার পরিচালন মুনাফা অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে জনতা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
গতকাল অনুষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছর ৬৬ দিন পুঁজিবাজার বন্ধ থাকাসহ চলমান মহামারীর প্রভাবে দেশের অনেক মার্চেন্ট ব্যাংক মুনাফাই করতে পারেনি।
বিপর্যস্ত একটি অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে জনতা ক্যাপিটাল চমক দেখিয়েছে।
২০১৯ সালে জনতা ক্যাপিটালের নিট মুনাফা হয়েছিল ৩ কোটি ১৬ লাখ টাকা।
২০১৯ সালের তুলনায় গত বছর মুনাফা বেড়েছে প্রায় সাড়ে তিন গুণ।
সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার কারণেই ভালো মুনাফা হয়েছে বলে জানান জনতা ক্যাপিটাল অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের প্রধান নির্বাহী শহীদুল হক।
তিনি বলেন, মহামারীর মধ্যে যখন বাজারের অবস্থা খারাপ ছিল, তখন অনেক মার্চেন্ট ব্যাংকই ফোর্সড সেল করে তাদের বিনিয়োগ পুনরুদ্ধার করেছে।
এতে একদিকে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অন্যদিকে বাজার খারাপ থাকায় প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের বিনিয়োগ পুরোপুরি উঠাতে পারেনি।
আর আমাদের বিনিয়োগ যেহেতু ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানিগুলোতে ছিল, তাই আমরা ধৈর্য ধরেছিলাম।
শহীদুল হক আরো বলেন, করোনা মহামারীর মধ্যে অনেক বিনিয়োগকারীর পোর্টফোলিও নেগেটিভ হয়ে গেলেও তখন আমরা তাদের ওপর কোনো সুদারোপ করিনি।
পরে বাজার ভালো হলে মৌলভিত্তির শেয়ারগুলোর দাম বেড়ে যায়।
এতে আমাদের সুদ আয় কম হলেও কমিশন আয় ভালো হয়েছে।
ফলে প্রতিষ্ঠান যেমন লাভবান হয়েছে, তেমনি বিনিয়োগকারীদের আস্থাও আমাদের ওপর বেড়েছে।
জনতা ক্যাপিটাল সূত্রমতে, ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১০ জুন পর্যন্ত ৪০ কোটি ১ লাখ ৭২ হাজার টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
২০২০ সালের এই সময়ে প্রতিষ্ঠানটির মোট পরিচালন মুনাফা ছিল ১ কোটি ৩২ লাখ ৯০ হাজার টাকা।
এক বছরের ব্যবধানে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালন মুনাফা বেড়েছে ৩০ গুণ।
অংকের হিসাবে যা ৩৮ কোটি ৬৮ লাখ ৮২ হাজার টাকা।
২০২০ সালে মুনাফা বৃদ্ধির পাশাপাশি জনতা ক্যাপিটালের শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ও শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) বেড়েছে।
২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠানটির ইপিএস ছিল ৭ পয়সা।
২০২০ সালে ইপিএস বেড়ে ২৫ পয়সায় উন্নীত হয়েছে।
একই সঙ্গে এনএভিপিএস ১০ টাকা ২২ পয়সা থেকে বেড়ে ১০ টাকা ৪৭ পয়সা হয়েছে।
জনতা ক্যাপিটালের মুনাফায় বড় উল্লম্ফন জনতা ব্যাংকের ঘুরে দাঁড়ানোরই ইঙ্গিত বলে মনে করছেন মো. আব্দুছ ছালাম আজাদ।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটির এ ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বণিক বার্তাকে বলেন, আগের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে জনতা ব্যাংক বিপদে পড়েছিল।
কিন্তু তিন বছরের চেষ্টায় রাষ্ট্রায়ত্ত দ্বিতীয় বৃহৎ এ ব্যাংকটি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।