আমদানি শুল্ক কমানোর উদ্যোগ

ভোজ্যতেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে চায় ভারত

বণিক বার্তা ডেস্ক

অভ্যন্তরীণ বাজারে ভোজ্যতেলের দাম লাগামহীনভাবে বেড়েছে ফলে ব্যয় বেড়েছে ভোক্তাদের অবস্থায় ভোজ্যতেলের দাম নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নিচ্ছে ভারত এজন্য আমদানিতে শুল্ক কমানোর কথা ভাবছে দেশটি ভারত  সরকারের খাতসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের দুটি সূত্র তথ্য নিশ্চিত করেছে খবর হিন্দুস্তান টাইমস রয়টার্স

ভোজ্যতেলের শীর্ষ আমদানিকারক দেশ ভারত ভোজ্যতেলের চাহিদার দুই-তৃতীয়াংশই আমদানির মাধ্যমে পূরণ করে দেশটি তবে আন্তর্জাতিক বাজারে কয়েক মাস ধরেই লাগামহীনভাবে বেড়েছে দাম এতে অভ্যন্তরীণ বাজারেও দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে ফলে নিম্ন মধ্যবিত্তের ওপর চাপ বেড়েছে অবস্থায় আমদানি শুল্ক কমিয়ে দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে রাখার কথা ভাবছে ভারত সরকার

তবে ভোজ্যতেলের ওপর আমদানি শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত এখনো চূড়ান্ত হয়নি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট একজন সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শুল্ক কমানোর একটি প্রস্তাব তারা পর্যবেক্ষণ করে দেখছেন বিষয়ে বিভিন্ন মতামত এসেছে কিন্তু চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছা যায়নি

অন্যদিকে ভারতের ভোক্তাবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভোজ্যতেল আমদানি শুল্ক কমানোর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত মাসেই আসতে পারে তবে সিদ্ধান্ত সাময়িক সময়ের জন্য হবে

ভারতে আমদানি করা ভোজ্যতেলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি থাকে পাম অয়েল এছাড়া রয়েছে সয়াবিন, সরিষা, সূর্যমুখী চীনাবাদামের তেল দেশটিতে পাম অয়েল সরবরাহকারী ইন্দোনেশিয়া মালয়েশিয়া ভোজ্যতেলটি আমদানির ক্ষেত্রে ৩২ দশমিক শতাংশ শুল্ককর দিতে হয় আর সয়াবিন সূর্যমুখীর মতো অপরিশোধিত ভোজ্যতেল আসে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, ইউক্রেন রাশিয়া থেকে এসব ভোজ্যতেলের ক্ষেত্রে আমদানি পর্যায়ে শুল্ক দিতে হয় ৩৫ শতাংশ

এদিকে কয়েক মাস ধরেই আন্তর্জাতিক বাজারেই ভোজ্যতেলে অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে বিশেষ করে মালয়েশিয়ায় পাম অয়েল চীনে সয়াবিন উৎপাদন কমায় সরবরাহ সংকট তৈরি হয়েছে পাশাপাশি বায়োডিজেলের চাহিদা বৃদ্ধি ভোজ্যতেলের বাজার লাগামহীন করতে বড় ভূমিকা রাখছে এর প্রভাব পড়েছে ভারতের বাজারেও দেশটির শীর্ষস্থানীয় বাণিজ্য সংস্থা সলভেন্ট এক্সট্রাক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের (এসইএ) তথ্য বলছে, গত এপ্রিলে দেশটির বন্দর পর্যন্ত পৌঁছতে প্রতি টন পাম অয়েলের দাম পড়েছে হাজার ১৭৩ ডলার, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে টনপ্রতি দাম ছিল ৫৯৯ ডলার

অন্যদিকে ভোক্তাবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, দেশটিতে ভোজ্যতেলের দাম ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে এর মধ্যে গত মে মাসে সরিষা তেলের দাম লিটারপ্রতি বেড়ে গড়ে ১৭০ রুপিতে দাঁড়িয়েছে, যেখানে গত বছরের একই সময়ে দাম ছিল ১২০ রুপি অবস্থায় ভোজ্যতেলের ব্যবহার কমিয়ে দিচ্ছেন ভোক্তারা বিশেষ করে নিম্ন মধ্যবিত্তরা তবে এর পরও খাদ্যপণ্যের গড় মূল্যসূচক কমিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না

দিল্লির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় দর্জির কাজ করেন রাম রতন তিনি জানান, পাঁচ সদস্যের পরিবারে তার মাসে তিন লিটার ভোজ্যতেল প্রয়োজন হয় কিন্তু দাম বেড়ে যাওয়ায় তিনি এখন ব্যবহার কমিয়ে দুই লিটারে নিয়ে এসেছেন তবে দেশটির খাতসংশ্লিষ্ট একটি পক্ষ বলছে, শুল্ক কমালে মালয়েশিয়া ইন্দোনেশিয়া লাভবান হবে কারণ এতে অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম কমে আসায় পাম অয়েলের চাহিদা বাড়বে অন্যদিকে সরিষা, চীনাবাদাম সয়াবিন উৎপাদন করা দেশীয় কৃষকরা এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন

সম্প্রতি ভোজ্যতেলের আমদানিকার, বিক্রেতা খাতসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বেশ কয়েকটি বৈঠক করেছে সরকার ভোজ্যতেলের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য এসব বৈঠকে আলোচনা হয়

কর্মকর্তারা বলছেন, ভোজ্যতেলের দাম সহনীয় পর্যায়ে আনতে এখন পর্যন্ত দুটি বিষয়ের ওপর জোর দেয়া হচ্ছে একটি হলো খরিপ মৌসুমে তেলবীজ উৎপাদন বাড়ানো অন্যটি আমদানি শুল্ক কমানো

তবে তেলবীজের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়ানোর ওপর জোর দিলেও আমদানি শুল্ক কমানোর বিরোধিতা করছে অনেক সংগঠন যেমন এসইএর হেড অব গ্রুপ বিভি মেহতা মনে করেন, শুল্ক কমানোর পরিবর্তে বিক্রেতা ভোক্তা পর্যায়ে ভর্তুকি দেয়া যেতে পারে এতে কৃষক ভোক্তারা লাভবান হবেন

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন