নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের হটস্পট হয়ে উঠছে খুলনা।
এ বিভাগে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
সচেতনতার অভাব ও স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে খুলনায় করোনা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, খুলনা বিভাগের ছয় জেলার সঙ্গে ভারতের ২৮৪ কিলোমিটার সীমান্ত থাকায় বিভাগটির বাসিন্দারা করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হওয়ার বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরনের প্রবেশ ঠেকাতে সরকার ২৬ এপ্রিল প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়।
তার পরও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন স্থান দিয়ে বৈধ ও অবৈধভাবে বিপুলসংখ্যক মানুষ ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।
অনেকে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে যাচ্ছে, আবার একইভাবে দেশে ফিরছে।
গোপনে এভাবে দুই দেশে যাতায়াতকারীদের কোনোভাবেই ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনের আওতায় আনা যাচ্ছে না।
ফলে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ।
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক রাশেদা সুলতানা জানান, গতকাল সকাল পর্যন্ত বিভাগে কভিডে আক্রান্ত হয়ে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এ সময়ে শনাক্ত হয়েছে ৫৫৭ জন, যা সংক্রমণের শুরু থেকে এ পর্যন্ত বিভাগে সর্বোচ্চ শনাক্ত।
তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত বিভাগের ১০ জেলায় মোট শনাক্ত হয়েছে ৩৭ হাজার ৫১২ জন।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৯০ জনে।
আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৩২ হাজার ৪১৯ জন।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ঈদুল ফিতরের পর থেকে শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে।
চলতি মাসের প্রথম আটদিনে (১-৮ জুন) ২ হাজার ৬৬৪ জনের, অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৩৩৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
আর এ সময়ে মারা গেছেন ৩৫ জন।
এর আগের আটদিনে (২৪-৩১ মে) ১ হাজার ২২২ জনের, অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ১৫৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল।
বিভাগে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় গত বছরের ১৯ মার্চ চুয়াডাঙ্গায়।
ওই বছরের ২৩ জুলাই এ সংখ্যা ১০ হাজার এবং ১২ আগস্ট ১৫ হাজার ছাড়ায়।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি ২৫ হাজার, ৩০ মে ৩৪ হাজার, ৩ জুন ৩৫ হাজার ও ৭ জুন শনাক্তের সংখ্যা ৩৬ হাজার ছাড়ায়।
খুলনা ১০০ শয্যার করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের মুখপাত্র ও খুলনা মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ মেহেদী নেওয়াজ জানান. খুলনা করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে বর্তমানে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত রোগী ভর্তি রয়েছে।
শয্যা না থাকায় ইউনিটের মেঝেতে শয্যা করা হয়েছে।
রোগীর সংখ্যা বাড়ায় সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক-নার্সদের।
ওই হাসপাতালের ফোকাল পারসন ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার জানান, বর্তমানে অধিকাংশ রোগীই তীব্র উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে।
অক্সিজেন লেভেল কম থাকা রোগীর সংখ্যা বেশি আসছে।
যার কারণে অক্সিজেনের চাহিদাও বেড়ে গেছে।
যারা ভর্তি হচ্ছেন তারা আগে থেকেই করোনায় আক্রান্ত ছিল, বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছিল।
অক্সিজেন লেভেল কমে যাওয়ায় তারা এখানে চলে আসছে।
তিনি আরো বলেন, হাসপাতালে লজিস্টিক সাপোর্ট তুলনামূলক অনেক কম।
রোগীর চাপ দেখে মনে হচ্ছে আরো একটি ইউনিট করতে হবে।
চিকিৎসক ও নার্সের সংখ্যা বাড়াতে হবে।
আর তা না হলে রোগী সামলানো কঠিন হয়ে পড়বে।
খুলনা সিভিল সার্জন নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, সচেতনতার অভাব ও স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে খুলনায় করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহের দিকে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, সচেতন না হলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে।
তবে বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. রাশিদা সুলতানা জানিয়েছেন, নতুন কভিড-১৯ মোকাবেলায় খুলনা বিভাগে যথেষ্ট চিকিৎসা সুবিধা রয়েছে।
বিভাগটিতে মোট ৪৯টি আইসিইউ শয্যা ও ৩০৪টি উচ্চ প্রবাহের ন্যাজাল ক্যানুলা রয়েছে।