কভিডের প্রভাবে ১৩২ কোটি টাকা লোকসানে বাটা

কভিড-১৯-এর প্রভাবে গত বছরের দুই ঈদ, পূজা ও পহেলা বৈশাখে জুতা বিক্রিতে ধস নামে। এতে দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক জুতা উৎপাদক প্রতিষ্ঠান বাটা শু কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেডকে বড় লোকসানে পড়তে হয়েছে। সর্বশেষ ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত ২০২১ হিসাব বছরে ১৩২ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে কোম্পানিটির, যেখানে আগের বছরে ৫৫ কোটি টাকা মুনাফা হয়েছিল। কভিডের প্রভাবে চলতি ২০২১ হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকেও (জানুয়ারি-মার্চ) লোকসান হয়েছে বাটার।

সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২০ হিসাব বছরে লোকসান হওয়ার কারণে বাটা শু বিনিয়োগকারীদের জন্য ২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদানের প্রস্তাব করেছে, যেখানে আগের ২০১৯ হিসাব বছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ১২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। ২০২০ হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান (ইপিএস) হয়েছে ৯৬ টাকা ৯৪ পয়সা, যেখানে আগের বছরে শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছিল ৩৬ টাকা ১ পয়সা। ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ২৬৭ টাকা ৯৪ পয়সায়।

এদিকে চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে বাটা শুর আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেড়ে ১৮৪ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট লোকসান হয়েছে ৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা। যেখানে এর আগের বছরের একই সময়ে ২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা মুনাফা হয়েছিল। চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৩ টাকা ৫৮ পয়সা। যেখানে এর আগের বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ২ টাকা ৭ পয়সা। এ বছরের ৩১ মার্চ শেষে কোম্পানিটির এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ২৬৪ টাকা ৩৫ পয়সায়।

কোম্পানিটির কর্মকর্তারা বলছেন, কভিডের কারণে গত বছর কোম্পানির সার্বিক ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। দেশব্যাপী লকডাউনের কারণে গত বছর ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, পূজা ও পহেলা বৈশাখে কোম্পানির খুচরা ব্যবসায় ধস নামে। কোম্পানির সারা বছরের ব্যবসার ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ এ উৎসবগুলোকে কেন্দ্র করে হয়ে থাকে। কোম্পানির ৭৭ শতাংশ গ্রামীণ খুচরা ডিলার এবং হোলসেলারদের ব্যবসায় কভিড-১৯-এর কারণে লোকসান হয়েছে। এতে কোম্পানির ব্যবসার ইতিহাসে প্রথমবার ৪১ শতাংশ আয় কমেছে। অন্যদিকে চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে বিক্রি বাড়ানোর পাশাপাশি আকর্ষণীয় ছাড়ে পুরনো জুতা বিক্রি করার উদ্যোগ নেয়া হয়। এতে কোম্পানির আয়ও বেড়েছে। এ সময়ে কোম্পানির উৎপাদন ব্যয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেড়েছে। তবে ছাড়ে পণ্য বিক্রির পাশাপাশি কভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে কোম্পানির অপরিহার্য ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এ সময়ে লোকসান গুনতে হয়েছে কোম্পানিটিকে।

২০১৯ হিসাব বছরে ১২৫ শতাংশ অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশ দিলেও চূড়ান্ত কোনো লভ্যাংশ দেয়নি বাটা শু। এর আগের ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত হিসাব বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ১০৫ শতাংশ চূড়ান্ত নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল কোম্পানিটি। তার আগে ওই বছরের তৃতীয় প্রান্তিকের নিট মুনাফার ওপর অন্তর্বর্তীকালীন ২৪০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল কোম্পানিটি। এ হিসাবে বাটা শু কোম্পানি ২০১৮ হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের মোট ৩৪৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। ২০১৭ হিসাব বছরে ১০৫ শতাংশ চূড়ান্ত নগদ লভ্যাংশ দেয়ার আগে ২৩০ শতাংশ অন্তর্বর্তী নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল বাটা শু।

বাটা শুর ঋণমান ‘ট্রিপল এ’। ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত প্রতিবেদন, গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন এবং এ বছরের ৩১ এপ্রিল ২০২১ পর্যন্ত কোম্পানিটির ব্যাংকের কাছে দায়-দেনার অবস্থানসহ হালনাগাদ প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রত্যয়ন করেছে ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (সিআরএবি)।

১৯৮৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বাটা শুর বর্তমান অনুমোদিত মূলধন ২০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ১৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। রিজার্ভে রয়েছে ৪৭৯ কোটি ১০ লাখ টাকা। কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ৭০ শতাংশ এর উদ্যোক্তা পরিচালক বাফিন নেদারল্যান্ডস (বিভি), ১৯ দশমিক ৪১ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, ১ দশমিক ৮১ শতাংশ বিদেশী বিনিয়োগকারী ও বাকি ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল বাটা শু শেয়ারের সর্বশেষ দর ছিল ৬৯৩ টাকা ২০ পয়সা। গত এক বছরে শেয়ারটির সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ দর ছিল যথাক্রমে ৬৯৩ টাকা ২০ পয়সা ও ৭৫৫ টাকা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন