বিনিয়োগ পরিবেশের জন্য মহামারী সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ

করোনাকালের দ্বিতীয় বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। করোনার আঘাত থেকে উত্তরণ এবং আগামী বাজেট নিয়ে নীতিনির্ধারক ও উদ্যোক্তাদের মতামত ও পরামর্শ জানার প্রয়াস নিয়েছে বণিক বার্তা। আজ প্রকাশ হলো প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান-এর সাক্ষাৎকার। তার সঙ্গে কথা বলেছেন বদরুল আলম

দায়িত্ব গ্রহণের পর বলেছিলেন ইজ অব ডুয়িং বিজনেস (ব্যবসা সহজীকরণ) র‍্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থানে ১০০-এর মধ্যে নিয়ে আসা হবে, এ বিষয়ে অগ্রগতি কতদূর?

কভিড মহামারীর কারণে কিছুটা দেরি হয়েছে। পাশাপাশি ওয়ার্ল্ড ব্যাংকও একটি অডিট পরিচালনা করে ইজ অব ডুয়িং বিজনেস স্থগিত করে দিয়েছে। এখনো ওই অবস্থাতেই আছে। আমি বলেছিলাম, ২০২২ সালের মধ্যে ১০০-এর নিচে নামিয়ে আনব। এ বছর দেড়শর নিচে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। আমরা কিন্তু সংস্কার করে ফেলেছিলাম। কিন্তু এখানে আমাদের একটা সমস্যা ছিল। সমস্যাটা আমরা এখন ধরতে পেরেছি। তাদের একটা মার্কিং সিস্টেম (নম্বর প্রদান ব্যবস্থা) ছিল। তারা স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কথা বলে একটা জরিপ করে। আমাদের সংস্কার অনুযায়ী তারা কাঙ্ক্ষিত সুবিধা পেয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করে। আমাদের সংস্কার এবং তাদের জরিপের সঙ্গে অনেক সময় মিল থাকে না। এ কারণেই সংস্কার করা সত্ত্বেও আমরা কিন্তু মার্কিংটা পাইনি। এজন্যই আমরা এখন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে, চেম্বার অব কমার্স প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সংস্কার করে থাকি। আরেকটা সমস্যা হলো, যখন জরিপ করা হয়, তাদের প্রশ্নগুলো কিন্তু সাধারণ মানের হয়ে থাকে। আর আমাদের অভ্যাস হলো, যখন উত্তর দিই, তখনো ঢালাওভাবে দিয়ে থাকি। অর্থাৎ সুনির্দিষ্ট পয়েন্ট ধরে প্রশ্নও করা হয় না, সুনির্দিষ্ট উত্তরও দেয়া হয় না। আশা করছি, আগামী জরিপের সময় এ ধরনের সমস্যা থাকবে না। এরই মধ্যে আমরা এ সমস্যা সমাধানে কাজ শুরু করে দিয়েছি।

আমাদের এখানে ওয়ানস্টপ সার্ভিস বিডা এক ধরনের করে। বেজা আরেক ধরনের। এক্ষেত্রে সমন্বয় প্রক্রিয়াটি কতদূর?

অনেক দূরই এগিয়েছে। আসলে বিডা আর বেজার মধ্যে ইন্টেগ্রেশন নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। যারা সার্ভিস প্রোভাইডার, তাদের সঙ্গে ইন্টেগ্রেশন করার সিস্টেমে সমস্যা হচ্ছিল। এ সমস্যাগুলো সমাধান হচ্ছে। সমস্যা হলো সবাই নিজস্ব আইটি নিয়োগ করে। তো সবার আইটি সিস্টেম তো একরকম নয়। ফলে সমস্যা তৈরি হয়েছে। আমরা এখন সবার মধ্যে একটি সমন্বয় করার চেষ্টা করছি। অনেক দূর এগিয়েছি আমরা।

দায়িত্ব গ্রহণের পর বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়নে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আপনার কাছে কী মনে হয়েছে?

এ মুহূর্তে আমার কাছে মনে হচ্ছে, করোনা মহামারীই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা সবাই চাই যেখানে বিনিয়োগ করছি, সেটা চোখে দেখে তারপর বিনিয়োগ করব। করোনা আসায় সে সুযোগটা অনেক কমেছে। তবে করোনায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় আমরা যথেষ্ট ভালো করেছি। দেশী ও বিদেশী বিনিয়োগকারীরা আমাকে সবসময় বলে, আমাদের নীতি অনুমানগুলো (প্রেডিকটেবিলিটি অব পলিসি) যেন ঠিক থাকে। বারবার যেন নীতি পরিবর্তন না হয়। এ ব্যাপারে আমরা সরকার, অর্থমন্ত্রী, রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করি, আসন্ন বাজেটে বিনিয়োগকারীদের জন্য অনেক সংস্কার আসবে। তবে একটি কথা আমি বলতে চাই। জিডিপির তুলনায় করহার খুবই কম—এমন দেশগুলোর মধ্যে আমরা অন্যতম। এই যে পলিসি ডিসটরশনটা। অনেক সময় হয়, যারা এরই মধ্যে করের আওতায় চলে এসেছে, এদের থেকেই বেশি কর আদায় করে রাজস্ব বাড়ানোর চিন্তা থাকে। কিন্তু যারা করের আওতায় নেই, তারা বাইরেই থেকে যাচ্ছে। গত বছর রাজস্ব বোর্ড অনেক চেষ্টা করেছে। করের আওতায় অনেককেই নিয়ে এসেছে। আসলে বেশি রাজস্ব আসার কথা ছিল ভ্যাট থেকে। বৈশ্বিক চিত্রও এটাই। কিন্তু আমরা করছি উল্টো। আমাদের বেশি রাজস্ব আসছে কাস্টমস থেকে। এ নীতিগত যে অসামঞ্জস্য তৈরি হয়ে গেছে, এটা সংস্কারের জন্য আমাদের সবাইকে ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। অবশ্য এরই মধ্যে অনেকগুলো উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মূলত যারা বড় ব্যবসায়ী আছে, তাদের থেকেই ট্যাক্স নেয়া হচ্ছে। কিন্তু ছোট ব্যবসায়ীরা করের আওতায় আসছে না। আসন্ন বাজেটে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া হবে আশা করছি।

‘যিনি রাজস্ব নীতি প্রণয়ন করেন, তিনিই রাজস্ব আহরণ করেন’—ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে এ ব্যাপারে অভিযোগ করছেন। বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখেন?

এক্ষেত্রেও আমি জিডিপির তুলনায় করহার কম সে কথাটাই বলব। আমাদের টার্গেট হলো, ২০৩০ সালের মধ্যে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হব। কিন্তু এত কম করহার দিয়ে কীভাবে সে চিন্তা করা যায়? যারা রাজস্ব নীতি প্রণয়ন করছে, তারাই কর আহরণ করছে, এটাও যৌক্তিক পয়েন্ট। কিন্তু সবাইকে করের আওতায় আনতে পারাটা বেশি দরকার। কর কম হলেও যদি সবাই অংশগ্রহণ করে, তাহলেও কিন্তু অনেক। অথচ আমাদের মানসিকতা হয়ে গেছে যে আমি কর দেব না। আপনাকে যদি রেস্টুরেন্টে বিল ধরিয়ে দেয়, আপনি তাকে জিজ্ঞেস করবেন, ভাই তুমি ট্যাক্সটা নিচ্ছ না কেন। অর্থাৎ প্রতিটি নাগরিকের মধ্যে যখন এ মানসিকতা চলে আসবে যে আমাদের ট্যাক্স দেয়া দরকার। তখন কিন্তু এ ধরনের সমস্যা বা অভিযোগ থাকবে না।

এছাড়া কি আরো কোনো বড় দুর্বলতা আছে বলে মনে করেন?

ঠিক দুর্বলতা না। আমি মনে করি এটা ধারণাগত ভুল যে অগ্রিম কর আদায়। অনেক ব্যবসায়ীও এ ব্যাপারে আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। আশা করছি এবার এ সম্পর্কে আলোচনা হবে। আরেকটা বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে যে কাস্টমসে এইচএইচ কোড নিয়ে এক ধরনের জটিলতা আছে। একই কোড বারবার ব্যবহার করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে রাজস্ব বোর্ড কাজ শুরু করেছে।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এসে আমরা শুধু বস্ত্র ও পোশাক শিল্পে মোটা দাগে এগোতে পেরেছি। আমাদের শিল্পায়নের ক্ষেত্র আরো বিস্তৃত হওয়া উচিত ছিল কি?

তা তো অবশ্যই। আমাদের বস্ত্র খাতের মধ্যেও কিন্তু অনেক বৈচিত্র্য আছে। প্রতিটি সেক্টরেই আমরা মনোযোগ দিয়েছি। এখন যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে, পিপিই। এটিকেও বস্ত্র খাতে ফেলে দিচ্ছেন অনেকে। কিন্তু এটা ঠিক নয়। এর আগে কখনো আমরা পিপিই বানাইনি। এখন আমরা মাস্ক রফতানি করছি। পিপিই রফতানি করছি। অনেক বড় বাজার ধরে ফেলেছি। একইভাবে আইটির কথাও বলব। এটিও একটি বৈচিত্র্যময় খাত। যদিও এখন পর্যন্ত পেপ্যালকে (অনলাইনে অর্থ লেনদেনের কোম্পানি) দেশে আনতে পারিনি। অবশ্য আমরা চেষ্টা করছি ওদের আনার জন্য। ওরা এসে গেলে আমরা আইটি খাত থেকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারব। ফার্নিচারও একটি বড় খাত। যদিও আমাদের চামড়া খাতটা পড়ে গেছে। এটা বড় দুঃখজনক ব্যাপার। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফার্মাসিউটিক্যালসও বেশ ভালো করছে। আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে এটিও একটি রফতানিমুখী খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে বলে আমি আশাবাদী।

ব্যাংক থেকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ এবং পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর অভাব—এ জাতীয় মৌলিক সমস্যাগুলো দূর করার ক্ষেত্রে আমরা কতদূর এগিয়েছি?

এ সমস্যাগুলো থেকে আমরা বেরিয়ে আসব। নতুন কমিশন যে কাজগুলো করেছে সেগুলো প্রশংসনীয়। সম্প্রতি বন্ডে চলে এসেছি। ফলে দীর্ঘমেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে ব্যাংকের ওপর চাপ অনেক কমে যাবে। স্বল্পমেয়াদি আমানত নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ প্রদানের কারণে এতদিন ব্যাংকের ওপর বেশি চাপ ছিল। বন্ডের ক্ষেত্রে যে কিনছে, সে জেনেই কিনছে যে আমি ৫ বা ১০ বছরের বন্ড কিনলাম। ব্যাংকে ১০ বছরের এফডিআর করা হয় না। ৫ বছরেরও খুব কম করা হয়। সাধারণত এক বছরের এফডিআর করে ১০ বছরের লোন দেয়া হচ্ছে। আমি সবসময় বলেছি, বন্ড আমাদের খুবই প্রয়োজন। এ বাজারের জন্য সরকার অনেকগুলো ভালো পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রথমত, গত বছরের বাজেটে স্ট্যাম্প ডিউটি কমানো হয়েছে। এটা একটা বড় গুরুতর বাধা ছিল। পারপেচুয়াল বন্ডের ধারণা নিয়ে এসেছে নতুন কমিশন। আমি এজন্য অভিনন্দন জানিয়েছি। কারণ এ ধারণা আসায় দুটো লাভ হয়েছে। বন্ড মার্কেট চাঙ্গা হয়েছে। পাশাপাশি ব্যাংকের যে মূলধন সমস্যা সেটাও সমাধান হয়ে গেল। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক পারপেচুয়াল বন্ডকে কোয়াজি ইকুইটি হিসেবে ধরছে। এটা আরেকটা ভালো দিক।

বর্তমানে বৈশ্বিকভাবেই বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সবচেয়ে বড় বাধা হলো কভিড মহামারী। এ পরিস্থিতিতে বিশেষ কোন কৌশল অবলম্বন করতে পারেন বিনিয়োগকারীরা? তাদের জন্য আপনার পরামর্শ...

বিনিয়োগকারীরা কেউ বসে থাকবে না। তাদের কাজ হবে স্বাভাবিক পন্থায়। নতুন হোক বা যারা এরই মধ্যে বিনিয়োগে আছে সবাইকে কাজ চালিয়ে যেতে হবে। বস্ত্র বা উৎপাদনমুখী খাতে যারা আছে, তারা সম্প্রসারণও করছে। তাদের কাজ চলছে। আর কভিডটা অন্যান্য দেশের তুলনায় আমরা ভালোভাবেই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি। এখন টিকা কার্যক্রমটা যত তাড়াতাড়ি শেষ করতে পারি। এখন টিকার ক্ষেত্রে বয়স কমিয়ে দেয়ার কথা হচ্ছে। এখন ভারত থেকে আমরা পাচ্ছি না। চীন থেকে হয়ে গেছে। রাশিয়া থেকেও হচ্ছে। আমি আশা করি, এ বছরের মধ্যেই টিকা কর্মসূচিটা আমরা ভালোভাবেই বাস্তবায়ন করতে পারব। এখন দেখা যাচ্ছে, যে দেশে ভালোভাবে টিকা কর্মসূচি সম্পন্ন হয়েছে, সেখানেই শিথিলতা নিয়ে আসা হচ্ছে।

একটা বিষয় নিয়ে আমি কিছুটা উদ্বেগে আছি। সেটা হলো ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর খুব সফলভাবে কভিড নিয়ন্ত্রণ করেছিল। দেশগুলোতে এখন আবার সংক্রমণ শুরু হয়েছে। কভিডকে নিয়ন্ত্রণে আনাটা এখন বৈশ্বিক সমস্যা। কভিডকালে বৈশ্বিকভাবেই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলোর মধ্যে আছে এভিয়েশন আর পর্যটন। আর কিছুটা রিটেইল রেস্টুরেন্ট ব্যবসাগুলো। আমাদের এখানে রেস্টুরেন্টের ব্যবসায় প্রভাব পড়লেও তা বেশি মাত্রার না। আরেকটা জিনিস যেটা আমি মনে করি, বড় সমস্যা সেটা হলো শিক্ষা। এতগুলো দিন হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ। একটা গোটা প্রজন্ম সাংঘাতিকভাবে প্রভাবিত। এ নিয়ে আমাদের চিন্তা করতে হবে, কাজ করতে হবে। এ সময়ে যে ক্ষতিটা হয়েছে, সেটাকে কীভাবে আমরা পূরণ করব? কী কী পদক্ষেপ নিয়ে আমরা সমাধান করতে পারব, তার উপায় খুঁজতে হবে। বৈশ্বিকভাবেই এটা করতে হবে।

টিকা কবে নাগাদ সহজপ্রাপ্য হতে পারে?

জুন থেকেই চীনেরটা (টিকা) শুরু করে দিচ্ছি। মাসে মাসে ৫০ লাখ করে টিকা আসবে। সেরামেরটা নভেম্বর-ডিসেম্বরের আগে হবে না। ওটাও আসবে। বলা হয়েছিল, আমরা যেন টাকা ফেরত নিয়ে নিই। তারাও টাকা ফেরত দিতে এক পায়ে রাজি। আমি বলেছি চার ডলারে আর কোথাও পাওয়া যাবে না। এর চেয়ে সস্তা নেই। চীন বা রাশিয়া, ফাইজার, জনসন অ্যান্ড জনসন সবারটা আমরা দেখে ফেলেছি। সবগুলোর দাম অনেক বেশি। যেহেতু ওদের সঙ্গে একটা চুক্তি আছে, এখন টাকা ফেরত নিয়ে তা বাতিল করতে চাই না। ওরা ডিসেম্বরে দিলে দেবে। আমাদের তো টিকা লাগবে, অনেক পরিমাণ লাগবে। আমরা বলেছি, তুমি যখন দিতে পারবে দেবে। যদি কোনো সময় বলে যে তারা দিতে পারবে না, তখন বলব টাকা ফেরত দাও। টাকা ফেরত দেয়া নিয়ে কোনো সমস্যাই নেই। কারণ আমরা যখন চুক্তি করেছিলাম, তখন আমরা ব্যাংক গ্যারান্টি নিয়ে রেখেছি। আমরা সম্পূর্ণ সুরক্ষিত। তারা সবসময় বলছে, আমরা দিতে চাই। কিন্তু ভারত সরকার অনুমতি না দিলে আমরা কী করতে পারি। কিছু করণীয় নেই। তারা বলছে, তোমরা যদি চাও টাকা ফেরত দিয়ে দিচ্ছি।

অর্থনীতির একটি বৈশিষ্ট্য হলো ফার্স্ট মুভার অ্যাডভানটেজ বা যে প্রথম পদক্ষেপ নেবে, সে-ই সুবিধা পাবে। টিকার ক্ষেত্রে আমাদের স্থানীয় কোম্পানিগুলো এ সুবিধা নিল না কেন?

টিকার বিষয়টি কিন্তু সহজ নয়। আমরা ৯৯ শতাংশ ওষুধ উৎপাদন করি। মাত্র ১ শতাংশ ওষুধ বাইরে থেকে আনি। সে ১ পারসেন্ট মেডিসিনটা কী? সেটাই হলো টিকা। ক্যান্সারের খুব দামি কিছু টিকা আমরা আমদানি করি। এ টিকা আমরা কেন বানাই না? কারণ এ টিকার মার্কেট পরিধি খুবই ছোট। টিকার ক্ষেত্রে সমস্যা কী? টিকাতে কোনো লাভ নেই? মহামারী এসে দেখা গেল, টিকার বাজার বড় হয়ে গেছে। টিকা বানাতে গেলে দেখা যায়, এটা খুবই ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া। আমরা চাইলেও কিন্তু প্রথম টিকা উৎপাদন করার সুবিধাটি নিতে পারতাম না। কারণ সে যন্ত্রপাতিই আমাদের দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে নেই।

টিকার ক্ষেত্রে মেধাস্বত্ব নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। এ রকম একটি মহামারী পরিস্থিতিতে মেধাস্বত্ব বিষয়টিকে এত বড় করে দেখা কি ঠিক?

অবশ্যই না। যে কথাটি বাইডেন বলেও বিপদে পড়ে গেছেন। তিনি বলেছেন, এ সংকটকালে মেধাস্বত্ব ওপেন করা উচিত। আমরা ভারতকে অগ্রিম টাকা দেয়ার ফলে ১০ লাখ টিকা পেয়েছি। এতে করে লাভবান কিন্তু আমরাই হয়েছি। পৃথিবীর অনেক দেশ যারা একটিও টিকা পায়নি। আর ওনারা এখন বলছেন, আমরা ১০-১৪ বছরের শিশুদেরও টিকা দেব। অর্থাৎ বয়স্কদের বাদ দিয়েও তারা ছোটদের টিকা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এটা তো আসলে জোর যার মুল্লুক তার অবস্থা। ওদের কাছে কাঁচামালের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তারা টিকা নিয়ে রাজনীতি করে যাচ্ছে, যা দুর্ভাগ্যজনক।

আসন্ন বাজেটে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে বিশেষ কোনো পরামর্শ আছে?

বর্তমান সরকারের সময় স্বাস্থ্য খাতে বেশ উন্নতি হয়েছে। আমার নিজের এলাকায় আমি দেখেছি। সেখানে নতুন নতুন চিকিৎসক নিয়োগ হয়েছে। অবকাঠামো হয়েছে। এখন যেটা করতে হবে, স্বাস্থ্য খাতকে শহরকেন্দ্রিক না করে গ্রামমুখী করা উচিত। কিছুদিন আগে ঢাকায় হাসপাতালের সিট পাওয়া যাচ্ছিল না। কিন্তু এখন তো সব সিট ফাঁকা। এটা আসলে সাময়িক সমস্যা। আমাদের স্বাস্থ্যসেবা গ্রামেও শক্তিশালী করতে পারলে আশা করি এ ধরনের সংকট তৈরি হবে না। স্বাস্থ্য খাত আরো এগিয়ে যাবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন