ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে ইয়াকিন পলিমারের মুনাফা

নিজস্ব প্রতিবেদক

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার আগে বিনিয়োগকারীদের কাছে ধারাবাহিক ব্যবসা মুনাফা প্রবৃদ্ধির তথ্য উপস্থাপন করেছিল ইয়াকিন পলিমার লিমিটেড। কিন্তু তালিকাভুক্তির দুই বছরের মধ্যেই ব্যবসায় ছন্দপতন লোকসানের মুখে পড়ে কোম্পানিটি। ২০১৬ সালে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর থেকেই ধারাবাহিকভাবে কোম্পানিটির মুনাফা কমছে। পাশাপাশি কমেছে বিনিয়োগকারীদের দেয়া লভ্যাংশের পরিমাণও। সর্বশেষ চলতি ২০২০-২১ হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকেও বড় লোকসানে রয়েছে কোম্পানিটি।

কোম্পানিটির আর্থিক তথ্য অনুসারে, ২০১৬ হিসাব বছরে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে কোটি ৯৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এর পরবর্তী ২০১৭ হিসাব বছরে কোম্পানিটির মুনাফা দাঁড়ায় কোটি ৪৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা, যা তার আগের বছরের তুলনায় ৪৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা বা ১৩ শতাংশ কম। ২০১৮ সালে কোম্পানিটির মুনাফা আগের বছরের তুলনায় কোটি ৪৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা বা সাড়ে ৭১ শতাংশ কমে ৯৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা হয়। এর পরের বছর ২০১৯ সালে কোম্পানিটির মুনাফা হয় কোটি লাখ ২০ হাজার টাকা, যা এর আগের বছরের তুলনায় লাখ ৪০ হাজার টাকা বা সাড়ে শতাংশ বাড়লেও ২০১৭ বছরের তুলনায় কোটি ৮৬ লাখ ২০ টাকা বা প্রায় ৭৩ শতাংশ কম। এদিকে ২০২০ সালে মুনাফা তার আগের বছরের তুলনায় তলানিতে নেমে লাখ ৮০ হাজার টাকা হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় কোটি ৪০ হাজার টাকা বা ৯৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ কম। অন্যদিকে ২০১৭ সালের তুলনায় কোটি ৮৬ লাখ ৬০ হাজার বা ৯৮ শতাংশ কম।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইয়াকিন পলিমার তালিকাভুক্ত হওয়ার আগে ব্যবসায় মুনাফায় যে ভালো অবস্থা দেখিয়েছে তা দিন দিন একেবারে নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে। তালিকাভুক্তির আগে যে কোম্পানির ব্যবসা ভালো ছিল, তালিকাভুক্ত হয়ে সে কোম্পানির ব্যবসা এত খারাপ হতে পারে না। ব্যবসা কম-বেশি হতে পারে, তাই বলে দিন দিন শুধু ব্যবসা মুনাফা বড় পরিমাণে কমে যাওয়াটা সন্দেহজনক। কোম্পানি তালিকাভুক্তির সময় যে আর্থিক প্রতিবেদন দেখায় তাতে বিনিয়োগকারীরা আশা করেন বাজারে আসার পর কোম্পানিটির ব্যবসায় ভালো করবে, সেই সঙ্গে কোম্পানিটিতে থেকে মুনাফা পাবে। কিন্তু দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার আগে বেশির ভাগ কোম্পানি ব্যবসা মুনাফা অযৌক্তিকভাবে বাড়িয়ে দেখায়। পরে তালিকাভুক্ত হয়ে ব্যবসা খারাপ হলে তাদের আসল আর্থিক অবস্থার দেখা মেলে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিষয়ে আরো নজরদারি বাড়াতে হবে এবং তালিকাভুক্তির পর যেসব কোম্পানির ব্যবসা মুনাফা বাজারে আসার আগের তুলনায় সন্দেহজনকভাবে কমে যায় তাদের বিষয়ে তদন্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে বলে জানান তারা।

বিষয়ে ইয়াকিন পলিমারের চেয়ারম্যান কাজী আনোয়ারুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি এবং কোম্পানির সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। পরে কোম্পানিটির সচিব মো. আখতারুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার সেলফোন সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়।

কোম্পানিটির সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি ২০২০-২১ হিসাব বছরে কোম্পানিটির আয় হয়েছে কোটি ৬৮ লাখ হাজার ৩৫৯ টাকা, যা আগের বছর একই সময় ছিল ১০ কোটি ৮৭ লাখ ৪৯ হাজার ৬২৪ টাকা। সে হিসাবে কোম্পানিটির আয় কমেছে কোটি ১৯ লাখ ৪৭ হাজার ২৬৫ টাকা বা ১১ শতাংশ। এদিকে আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির আয় কমলেও উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। নয় মাসে কোম্পানিটির আয়ের বিপরীতে উৎপাদন ব্যয় হয়েছে ১০ কোটি ৭৫ লাখ ৯৫ হাজার ৫৬৩ টাকা, যা আয় থেকে কোটি লাখ ৯৩ হাজার ২০৪ টাকা বেশি। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী লোকসান হয়েছে কোটি লাখ ৪৪ হাজার ৯১৩ টাকা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৬২ লাখ হাজার ৩৮১ টাকা। সে হিসাবে কোম্পানিটির আলোচ্য সময়ে লোকসান বেড়েছে কোটি ৪৩ লাখ ৩৮ হাজার ৫৩২ টাকা বা ৫৫৩ শতাংশ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন