করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগামী ১৩ জুন খুলে দেয়া হবে। গতকাল অনলাইনে সংবাদ সম্মেলন ডেকে এ ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। পাশাপাশি ইউজিসি ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষগুলোর সঙ্গে কথা বলে দ্রুততম সময়ে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান তিনি। শিক্ষামন্ত্রীর গতকালের ঘোষণা অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর চলমান ছুটি আগামী ১২ জুন পর্যন্ত বাড়ল। তবে শিক্ষামন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন প্রত্যাখ্যান করে ছুটি আর না বাড়িয়ে দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ১৩ জুন থেকে খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। খুলে দেয়ার প্রক্রিয়াটি পর্যায়ক্রমে হবে। শুরুতে ২০২১ সালে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সপ্তাহে ছয়দিন করে ক্লাস নেয়ার চেষ্টা করব। বাকিদের শুরুতে সপ্তাহে একদিন করে আনব, পরে পর্যায়ক্রমে সেটি বাড়াব।
স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা। আপনারা একদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার জন্য আন্দোলন করবেন, অন্যদিকে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ না করে করোনার সংক্রমণ বাড়াবেন, সেটি হওয়া সমীচীন নয়। তাই সবার প্রতি বিনীত অনুরোধ, সবাই স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করবেন।
পাবলিক পরীক্ষাগুলোর বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এ বছর সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে ৬০ দিন ক্লাস করিয়ে এসএসসি ও ৮৪ দিন ক্লাস করিয়ে এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষাও হবে সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে। এজন্য এসএসসি পরীক্ষার জন্য ১৫০ দিন ও এইচএসসি পরীক্ষার জন্য ১৮০ দিন ক্লাস করানোর জন্য সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচি করা হয়েছে। এছাড়া এসব শিক্ষার্থীর জন্য আগামী জুন থেকে সপ্তাহে দুটি করে অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হবে। আর জেএসসি পরীক্ষার বিষয়ে করা প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পরীক্ষা নেয়ার পরিস্থিতি হলে নেয়া হবে। আর না হয় অ্যাসাইনমেন্টের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হবে। অ্যাসাইনমেন্টের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা যায় কিনা, সেটা দেখা হচ্ছে।
এদিকে করোনা মহামারীর মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ও ক্যাম্পাস দ্রুত খোলার দাবিতে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানকে স্মারকলিপি দেবেন তারা।
গতকাল শিক্ষামন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের পর বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী। এর আগে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, করোনা সংক্রমণের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ১২ জুন পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ানো হয়েছে।
সরকারের এ সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া জানাতে বিকালে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র আসিফ মাহমুদ। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ছুটি বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করলাম। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বর্ধিত করার পেছনে শিক্ষামন্ত্রী করোনা পরিস্থিতি ও টিকার অপর্যাপ্ততাকে দায়ী করেছেন। অথচ করোনা পরিস্থিতিতে কলকারখানা, অফিস, শিল্পপ্রতিষ্ঠান এমনকি গণপরিবহন কোনো কিছুই থেমে থাকেনি। এক বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ আছে কেবল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে টিকা নিয়ে যে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে, তার জন্য দায়ী সরকারি নীতিনির্ধারক ও তাদের করপোরেট প্রতিষ্ঠান।
