অবিস্মরণীয় এক রূপান্তর। মাত্র তিন বছর আগেও লিল ছিল অবনমনের শঙ্কায়, যদিও শেষ চার ম্যাচের মধ্যে তিনটি ম্যাচ জিতে টিকে থাকে দলটি। এখন তারা ফরাসি লিগ চ্যাম্পিয়ন! এমনকি টানা তিনবারের চ্যাম্পিয়ন পরাক্রমশালী প্যারিস সেন্ট জার্মেইকে (পিএসজি) লড়াইয়ে পেছনে ফেলে ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ান জয় করা লিলের জন্য বিরাট গৌরবের। এ যেন ডেভিডের কাছে গোলিয়াথের হার!
অথচ ক্লাবের বাজেট কিংবা তারকার সন্নিবেশ—কোনো কিছুতেই পিএসজির ধারেকাছেও ছিল না লিল। পিএসজির স্কোয়াডের পেছনে ব্যয় ৬০ কোটি ইউরো, যে স্কোয়াডে রয়েছেন ২২২ মিলিয়ন ইউরো মূল্যের নেইমার, ১৮০ মিলিয়ন ইউরো মূল্যের কিলিয়ান এমবাপ্পেসহ বহু তারকা। অন্যদিকে লিলের গোটা স্কোয়াডের মূল্য ১৪ কোটি ৭০ লাখ ইউরো। অর্থ্যাত্ পিএসজির এক চতুর্থাংশ বাজেট নিয়েও লিগের মুকুট লিলের।
এ শিরোপার জন্য লিল ধন্যবাদ জানাতে পারে অত্যন্ত বুদ্ধিদীপ্ত কোচ ক্রিস্টোফ গালতিয়ারকে, যিনি খুবই বিচক্ষণতার সঙ্গে কিছু খেলোয়াড়কে সই করিয়েছেন। পিএসজির একাডেমিতে বেড়ে ওঠা কিছু খেলোয়াড়ও লিলের শিরোপা জয়ের পেছনে ভূমিকা রেখেছেন।
লিলের খেলোয়াড়রা যখন শিরোপার উত্সব করছেন তখন পিএসজি তারকারা বিস্ময়ের সঙ্গে ভাবছেন, কেন ও কীভাবে সিংহাসনচ্যূত হলেন তারা। একটু পেছনে ফিরে তাকানো যাক। ১২ মাস আগে পিএসজিকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে নিয়েছিলেন টমাস টুখেল। এক বছর পর তিনি একই মঞ্চে গেছেন চেলসিকে নিয়ে, এ সাফল্য এসেছে পিএসজি কর্তৃক বরখাস্ত হওয়ার ছয় মাস পর। আগামী শনিবার এই টুখেলের দলকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল খেলতে দেখে কি ঈর্ষায় জ্বলবে না পিএসজির খেলোয়াড় ও ম্যানেজমেন্ট? এমনকি এ মৌসুমে তাদের ফরাসি লিগ শিরোপার জয়ের সান্ত্বনাটুকুও নেই।
গত ২৪ ডিসেম্বর স্ট্রসবুর্গের বিপক্ষে পিএসজির ৪-০ গোলের জয়ের পরপরই টুখেলকে বরখাস্তের ঘোষণা দেয়া হয়। তখন টেবিলের শীর্ষস্থান থেকে এক পয়েন্ট দূরে ছিল পিএসজি। এরপর তার জায়গায় আনা হয় টটেনহামের সাবেক কোচ মাউরিসিও পচেত্তিনোকে। যদিও আর্জেন্টাইন কোচের অধীনে এবার ব্যর্থতার ষোলোকলা পূর্ণ হলো পিএসজির। ৯ মৌসুমের মধ্যে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার লিগ শিরোপা জিততে ব্যর্থ হলো প্যারিস জায়ান্টরা।
লিলের অন্যতম বড় অস্ত্র ছিল পিএসজির একাডেমিতে গড়ে ওঠা একঝাঁক খেলোয়াড়। গোলকিপার মাইক মিগনান, মিডফিল্ডার বুকারে সুমারে এবং ফরোয়ার্ড জোনাথন ইকোন ও টিমোথি উইয়াহ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
মিগনান ছিলেন এক কথায় অসাধার। লিগের পারফরম্যান্স দিয়ে তিনি জায়গা করে নিয়েছেন ফ্রান্সে ইউরো ২০২০ এর দলে। এছাড়া সাউদাম্পটন, ক্রিস্টাল প্যালেস ও ওয়েস্ট হামের সাবেক সেন্টার-ব্যাক ৩৭ বছর বয়সী হোসে ফন্তে প্রতিশ্রুতিশীল সভেন বটম্যানকে নিয়ে দুর্ভেদ্য এক রক্ষণ দেয়াল তৈরি করেন।
নতুন ফরোয়ার্ড ফ্রন্টও দারুণ সফলতা পেয়েছে। ৩৫ বছর বয়সী তুর্কি স্ট্রাইকার বুরাক ইলমিজ ১৬ গোল করে লিলের সাফল্যের অন্যতম রূপকার। এছাড়া কানাডার স্ট্রাইকার জোনাথন ডেভিড ১৩ গোল করে মূল্যবান অবদান রাখেন।
ফ্রেঞ্চ লিগ ইতিহাসে নিজেদের পঞ্চম শিরোপা জেতার পথে মাত্র ২১ জন খেলোয়াড়কে ব্যবহার করেছে লিল, লিগে যা সবচেয়ে কম।
লিগ শিরোপা জয় ছাড়া এবার ইউরোপা লিগেও নকআউট পর্বে ওঠার যোগ্যতা অর্জন করে। ইউরোপ ও ঘরোয়া লিগে লিলের এই অর্জনের পেছনে সবচেয়ে বেশি কৃতিত্ব দিতে হবে কোচ গালতিয়ারকে।