সবসময় পরমুখাপেক্ষী থাকলে হবে না —প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নিজের দেশ নিয়ে ভাবতে হবে। সবসময় খালি পরমুখাপেক্ষী থাকলে হবে না। সেই উৎসাহটা দেবেন আপনারা, সেটাই চাই। দেশটা আমাদের, আমরা জানি কীভাবে দেশের উন্নতি করতে হবে। তবে পরামর্শ নেব আমরা। সেই পরামর্শটা এমন হবে না যেটা দেশের জন্য ক্ষতিকর।

প্রধানমন্ত্রী গতকাল সকালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে সভাপতিত্বকালে দেয়া ভাষণে কথা বলেন।

তিনি গণভবন থেকে এবং শেরেবাংলা নগরের এনইসি কনফারেন্স রুম, পরিকল্পনা কমিশন এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সংশ্লিষ্টরা ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি বৈঠকে অংশ নেন।

অতীতে বিএনপি সরকারের সময় বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে বাংলাদেশের রেল বন্ধের উদ্যোগ গ্রহণের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার দেশের কোনো ক্ষতি হয় এমন কারো কোনো পরামর্শ গ্রহণ করবে না। এক সময় (অন্যের) পরামর্শেই দেশ চলেছে, কিন্তু আমি এটা করব না। কারণ, দেশটা আমাদের এবং আমরাই ভালো জানি কিসে দেশের জনগণের উন্নতি হবে।

প্রধানমন্ত্রী উদাহরণ দেন, দেশের জন্য রেল কল্যাণমুখী হলেও বিএনপি দাতাগোষ্ঠীর পরামর্শে রেল বন্ধ করে দেয়ার পুরো বন্দোবস্ত করে ফেলেছিল। কর্মচারী ছাঁটাই, গোল্ডেন হ্যান্ডশেক সবকিছুর ব্যবস্থাই হয়েছিল। কিন্তু আমরা সরকারে এসেই এর জন্য পৃথক বাজেট বরাদ্দসহ রেলকে আলাদা মন্ত্রণালয় করে দিলাম। পৃথক মন্ত্রণালয় করার উদ্দেশ্যই হলো আলাদা বাজেট পাবে এবং আমরা পুরো বাংলাদেশে রেল যোগাযোগটা পুনরায় চালু করব। আমরা সেটা চালু করেছি।

রেল নিয়ে তিনি আরো বলেন, রেল এবং পর্যায়ক্রমে পাবলিক বাসও বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল বিশ্বব্যাংকের একটা পরামর্শে। কিন্তু আমরা সবই চালু রেখেছি এবং এর সুফলটা দেশের মানুষ পাচ্ছে, এটাই হলো বাস্তবতা। সারা বাংলাদেশের উন্নয়ন হবে তখনই, যখন যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাট উন্নত হবে। এগুলো না হলে কোনো দেশের উন্নয়ন হতে পারে না। নদীমাতৃক বাংলাদেশে আমাদের শুধু সড়কপথের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকলে চলবে না। সড়কপথ, নৌপথ, রেলপথ, বিমানসবই লাগবে আমাদের এবং আমরা সেভাবেই দেশটাকে সাজাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী আগামী জুন সংসদে বাজেট উত্থাপনের প্রায় সব কাজ শেষ পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারায় সবাইকে ধন্যবাদ জানান এবং সরকারি কর্মচারীদের কাজের গতি মনোযোগ বৃদ্ধির প্রশংসা করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, সরকারি কর্মচারীদের কাজের প্রতি মনোযোগ বৃদ্ধির বিষয়ে অতীতের মতো সরকারি মাল দরিয়া মে ঢাল সেই বিষয়টি বর্তমানে নেই। অন্তত সবার কাজের প্রতি একটা আন্তরিকতা আছে, দেশটাকে নিজের মনে করার এবং সেভাবেই কাজটি করার। সেই মানসিকতাটা তৈরি হয়ে গেছে, এটিই হচ্ছে সব থেকে আশার ব্যাপার। কাজকে নিজের মনে করার মানসিকতা আন্তরিকতা না থাকলে নিজে যেমন এগোনো যায় না, দেশকেও উন্নত করা যায় না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যত প্ল্যান প্রোগ্রাম আমরা যাই করি না কেন, সেটাকে বাস্তবায়ন করতে পারব যদি আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করি। যদি আমরা নিজেদের কাজের সঙ্গে একেবারে বিলীন করে নিতে পারি এবং দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য, দেশের কল্যাণের জন্য নিজের যত রকম আত্মত্যাগ করা দরকার সেই আত্মত্যাগ করার মানসিকতাটা নিয়ে যদি আমরা দেশের জন্য কাজ করি, তবেই কিন্তু এটা কার্যকর হবে। তা না হলে এটা কার্যকর হবে না।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা উন্নয়নশীল দেশের আজকে যে মর্যাদা পেয়েছি সেটাকে ধরে রেখে ইনশা আল্লাহ বাংলাদেশ আরো উন্নতি করবে। দেশে কোনো দরিদ্র থাকবে না। আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলব।

তিনি বলেন, কৃষি আমাদের জীবন। কৃষিকে আমাদের বাঁচিয়ে রাখতেই হবে। আর মহামারীর সময় আমি যে কথাটা বারবার বলছি, তা হচ্ছে আমাদের খাদ্য উৎপাদনটা অব্যাহত রাখতেই হবে। যাতে কোনোভাবেই খাবারের অভাবটা না হয়। কাজেই এদিকটায় সবাইকে একটু বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী সময় নতুন প্রজন্মকে প্রশিক্ষণ দিয়ে নিজ বাড়ির পাশের পতিত জমিও যাতে কাজে লাগানো যায় এবং মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়িয়ে দেশের বাজার সম্প্রসারণে প্রচেষ্টা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট মহলকে আহ্বান জানান।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন