পর্যটক শূন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম, লোকসানে ব্যবসায়ীরা

প্রান্ত রনি, রাঙ্গামাটি

দেশে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার ঘোষিত লকডাউনে বন্ধ রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের সব পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্র।  ফলে পরপর দুই বছর ধরে ঈদের টানা ছুটিতেও রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলায় পর্যটকদের সমাগম ঘটছে না।  গত বছরের মতো এবছরও এ সময়টাতে লোকসান গুনতে হচ্ছে পাহাড়ের ব্যবসায়ীদের। কভিড-১৯ রোগের কারণে স্থানীয় পর্যটনশিল্পে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে লোকসানের পরিধি বেড়েই যাবে।

চলতি বছরের মার্চ মাসে দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে শুরু করলে ৩১ মার্চ থেকে তিন পার্বত্য জেলার সব পর্যটন স্পট ও বিনোদনকেন্দ্রে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে স্থানীয় প্রশাসন।  একই সঙ্গে তিন জেলার সব হোটেল-মোটেল বন্ধ রাখার নির্দেশনাও দেয়া হয়।  এতে করে ১ এপ্রিল থেকে কার্যত বেকার হয়ে পড়েছেন পর্যটন খাতসংশ্লিষ্টরা।  

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণে সরকারের লকডাউনের ঘোষণার আগ থেকেই হোটেল-মোটেল ও পর্যটন স্পটগুলোতে মানুষের উপস্থিতি কমতে শুরু করে।  এরপর ৩১ মার্চ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ হওয়ার থেকে অলস সময় কাটাচ্ছেন এ খাতের জড়িত শ্রমিক-কর্মচারীরা।  অথচ স্বাভাবিক সময়ে ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের সমাগমে দম ফেলার ফুসরৎ থাকে না তাদের।

সরেজমিনে কাপ্তাই হ্রদ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন চর ও পাহাড়ে গড়ে ওঠা জুমঘর, পেদা টিংটিঙ, চাংপাং, স্বর্গছেঁড়াসহ বেশকিছু রেস্টুরেন্ট বন্ধ রয়েছে।  এ হ্রদে ইঞ্জিনচালিত ট্যুরিস্টবোট চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন ইকবাল হোসেন।  তিনি বলেন, গত দেড় মাস ধরে বেকার হয়ে আছি।  পর্যটক আসছেনা তাই বোট ভাড়াও হচ্ছে না।  কীভাবে যে আমাদের দিন যাচ্ছে, সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কেউই জানেন না।

রাঙামাটি পর্যটন বোট মালিক সমিতির সহসভাপতি ও পর্যটন বোটঘাটের ম্যানেজার মো. রমজান আলী জানান, পর্যটকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার কারণে শতাধিক ইঞ্জিনচালিত ট্যুরিস্ট বোট অলস পড়ে আছে।  কাজ নেই চালকদের। মালিকরাও লোকসান গুনছে।  অথচ গতবছর ব্যবসা না হওয়ায় এবার ঈদের ছুটি নিয়ে অনেক প্রত্যাশা ছিল তাদের। 

খাগড়াছড়ি জিপ সমিতির লাইনম্যান অরুণ কুমার দে জানান, ১ এপ্রিল থেকে খাগড়াছড়িতে সব জিপ ও পিকআপ চলাচল বন্ধ রয়েছে। পুরো জেলায় প্রায় ২০০টির মতো পর্যটনবাহী পিকআপ ও ২৫০টি জিপ রয়েছে। এসব পিকআপ ও জিপ চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন দেড় থেকে দুই হাজার শ্রমিক। এখন তারা সকলেই বেকার হয়ে পড়েছেন।  কবে নাগাদ আবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে সেটাই বুঝতে পারছেন না তারা।

রাঙামাটির সাজেক কটেজ অ্যান্ড রিসোর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুপর্ণ দেব বর্মণ বলেন, লকডাউনের পর সাজেকে এখন কোনো পর্যট নেই।  খালি পড়ে আছে সাজেকের শতাধি কটেজ-রিসোর্ট।  অথচ অন্য সময় ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের এতো চাহিদা থাকে যে সবার জন্য স্থানও সংকুলান হয় না।

আবাসিক হোটেল-মোটেল বন্ধ ঘোষণার কারণে দুর্বিষহ অবস্থায় পড়েছেন বলে জানান, রাঙামাটির হোটেল মতি মহলের স্বত্ত্বাধিকারী ও ব্যবসায়ী নেতা মো. শফিউল আজম। তিনি বলেন, হোটেল-মোটেল ভাড়া নেই, তাই আয়ও নেই; কিন্তু স্টাফদের তো বেতন-ভাতা দিতে হয়।  কিন্তু ব্যবসার অবস্থা খারাপ হওয়ায় অনেক হোটেল মালিক স্টাফদের বেতন-ভাতাও দিতে পারেননি।

রাঙামাটি আরেক জনপ্রিয় স্থান ঝুলন্ত সেতু।  পর্যটকের অভাবে শুন্য পড়ে আছে সেতুটি। হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ুয়া বলেন, ঝুলন্ত সেতুর টিকেট বিক্রি বন্ধ, আবাসিকেও বুকিং শূন্য।  লোকসানের  পরিধি দিনাদিন বাড়ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন